পঞ্চায়েত নির্বাচন এখনও কিছুটা দূরে। কিন্তু কেন্দ্রে রাজনীতির অঙ্ক বদলে যেতেই সন্ত্রাস এবং ভোটের সাঁকোয় ফের নাড়া পড়েছে।
শুক্রবার রাতে বর্ধমানে মাধবডিহি থানার কাঁইতি আদিবাসীপাড়া মোড়ে হামলায় নিহত হন এক তৃণমূল কর্মী। জখম হয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে তিন জনকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠায় মাধবডিহি থানার ওসি-কে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।
শনিবার গ্রামে গিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, সদ্য রেলমন্ত্রক ছেড়ে আসা মুকুল রায় দাবি করেন, “পঞ্চায়েতের নির্বাচনের আগে গ্রাম দখলের পুরনো খেলায় নেমেছে সিপিএম। খুনের রাজনীতি আমরা বরদাস্ত করব না। রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করব। প্রশাসনকেও শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে বলেছি।”
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম শেখ সারাফত আলি (৩০)। বাড়ি স্থানীয় আলমপুরে। গলায় গুলি লেগে তাঁর মৃত্যু হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ দাবি করলেও পুলিশের বক্তব্য, তির লেগে মৃত্যু ঘটেছে। বর্ধমানে পুলিশ মর্গে মরদেহে মালা দিয়ে রাজ্যের পরিবহণ তথা ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সিপিএম মনে করছে, আমরা কেন্দ্র থেকে সরে গিয়েছি বলে ওরা যা খুশি করবে। ওদের মনে করাতে চাই, বিধানসভায় আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার দাবি করেন, “রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের লোকেদের হাতেই সারাফত মারা গিয়েছে।”
নিজেদের প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে যুব তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সহ-সভাপতি অরুণাভ সরকার ও দলের কর্মী আইনুল হক বলেন, “মাধবডিহি চিরকালই সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আমরা এখানে সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। শুক্রবার কাঁইতি হাসপাতাল মোড়ে কর্মিসভা ছিল। তা চলাকালীন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ খবর পাই, আমাদের দলের পতাকা ছিঁড়ে দিচ্ছে সিপিএমের লোকেরা। আলমপুর, বরাজপোতা, বৈঠারি ইত্যাদি গ্রাম থেকে আমাদের কর্মীরা ছুটে আসেন। সিপিএমের লোকেরা তির-ধনুক, টাঙ্গি, বল্লম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।”
নিহত সারাফতের মাসতুতো ভাই সৈয়দ কলিমুদ্দিন ওরফে বাপ্পার অভিযোগ, “অন্ধকার থেকে আমাদের দিকে তির-বল্লম ছোড়া হচ্ছিল। সিপিএমের তিন নেতা ও স্থানীয় বিধায়ক বাসুদেব খাঁ দূরে দাঁড়িয়ে মদত দিচ্ছিলেন।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক পাল্টা বলেন, “এই ঘটনা গণপ্রতিরোধ ছাড়া কিছু নয়। তৃণমূলের লোকেরা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে হামলা চালাচ্ছিল। কাঁইতি আদিবাসীপাড়ায় ওরা তিনটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। চার জন আহত হন। আদিবাসীরা পাল্টা আক্রমণ করেন। এর পরে আলমপুর থেকে দলবল নিয়ে বরজপোতা গ্রাম আক্রমণ করে তৃণমূল। অন্ধকারে ওদের হাতেই সারাফত মারা গিয়েছেন। আমরা এতে জড়িত নই।”
গণ্ডগোল এতটা ছড়ালেও পুলিশ কেন তা সামলাতে পারল না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বাপ্পার অভিযোগ, “মাধবডিহি থানার ওসি স্নেহময় চক্রবর্তীকে বারবার ফোন করা হলেও সারা রাত তিনি আসেননি।” বিকেলে মুকুলবাবু গ্রামে পৌঁছলে বহু দলীয় কর্মী চারপাশে ভিড় করে পুলিশের সম্পর্কে নালিশ জানাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএম গ্রামে-গ্রামে সশস্ত্র ক্যাম্প করে রেখেছে। বারবার জানানো সত্ত্বেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। উত্তেজিত হয়ে গ্রামে থাকা পুলিশকর্মীদের দিকেও বারবার তাড়া যাচ্ছিলেন তাঁরা। এমনকী তৃণমূলের ব্লক নেতাদেরও কটূক্তি শুনতে হয়।
মুকুলবাবু পরে বলেন, “এখানে সন্ত্রাস চলছে। পুলিশকে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” মদনবাবুরও দাবি, “জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বলেছি, দোষীদের অবিলম্বে ধরতে হবে।”
আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ গ্রামে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দেন, “পুলিশের ভুমিকা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ওসি দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সন্ধ্যায় বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, মাধবডিহি থানার ওসিকে আপাতত পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। |