বার্ধক্য ভাতা নিয়ে দুর্নীতি
সমবায়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ বিডিও-র
বার্ধক্যভাতা তছরুপের অভিযোগে সমবায় সমিতির কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করল পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লক প্রশাসন। সম্প্রতি কাশীপুরের বিডিও পুলিশের কাছে ওই অভিযোগ করেছেন।
কাশীপুরের বড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়রা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপভোক্তাদের বার্ধক্য ভাতা তছরুপের অভিযোগ করেছিলেন ওই পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের জয়ন্ত রাউত। তাঁর অভিযোগ, বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে ৮ লক্ষেরও বেশি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ব্লক থেকে ওই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হলেও ভাতা পাননি উপভোক্তারা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্লকের সমবায় পরিদর্শককে তদন্তের দায়িত্ব দেন কাশীপুরের বিডিও। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলার পরেই সমবায় সমিতির কর্তৃপক্ষর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন বিডিও।
পঞ্চায়েত ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমবায় সমিতির অধীন তফসিলি উপজাতিভূক্ত ১০৩ জন উপভোক্তা রয়েছেন, যাঁদের সমিতি থেকে বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত প্রধান তথা পদাধিকার বলে বড়রা কৃষি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পরিচালন সমিতির সদস্য জয়ন্তবাবু জানান, প্রায় এক বছর আগে সমবায় সমিতিতে ওই দুর্নীতির বিষয়টি তাঁর নজরে এসেছিল। কয়েক জন উপভোক্তা তাঁকে জানিয়েছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁরা বার্ধক্যভাতা পান না। প্রধান বলেন, “উপভোক্তাদের পাসবই খতিয়ে দেখার পরে বোঝা যায় বিস্তর গরমিল রয়েছে ওই প্রকল্পে। নিয়ম মেনে প্রাপ্য ভাতা পায়নি বহু উপভোক্তা।” কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্পে সমবায় সমিতির মাধ্যমে তফসিলি উপজাতিভুক্ত উপভোক্তারা বর্তমানে মাসে এক হাজার টাকা বার্ধক্য ভাতা হিসাবে পান। আগে এই ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা ছিল।
জয়ন্তবাবুর দাবি, ২০০৮ থেকে ২০১২এই চার বছরে বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পের আট লক্ষাধিক টাকা তছরুপ করা হয়েছে। তিনি বলেন “বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ১০৩ জন উপভোক্তার মধ্যে ৩০-৩৫ জন প্রতি মাসে তাঁদের ভাতা পাননি। অথচ ব্লক থেকে তাঁদের ভাতা সমবায় সমিতিতে পাঠানো হয়েছিল।” প্রধানের আরও অভিযোগ, উপভোক্তাদের ভাতা দেওয়ার সময়ে তাঁদের নামে যে পরিমাণ টাকা ব্লক থেকে পাঠানো হয়েছিল, সেই পরিমাণ অর্থ পাননি উপভোক্তারা। সাধারণত এই ধরনের ভাতার ক্ষেত্রে প্রতি মাসের পরিবর্তে এক লপ্তে কয়েক মাসের টাকা হাতে পান উপভোক্তারা। জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, “ব্লক থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গিয়েছে, এক সঙ্গে ছ’মাসের টাকা ব্লক থেকে দেওয়া হলেও বাস্তবে উপভোক্তাদের মধ্যে অনেকেই তিন মাসের টাকা পেয়েছেন।”
চাপড়ি গ্রামের সুসারী সরেন, ফুচি হাসদা, সখীবালা সিং সর্দার বা মুরলু গ্রামের সনাতন টুডু, চারুবালা সিং সর্দাররা বলেন, “ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেনিয়ম হওয়ায় আমরা পঞ্চায়েত প্রধানকে জানাই। বছরে ১২ হাজার টাকা ভাতা পাওয়ার নিয়ম হলেও বাস্তবে পেয়েছি অনেক কম। আবার কয়েক মাসের ভাতা বাবাদ এক সঙ্গে যে টাকা পাওয়ার কথা আমাদের, সমবায় তার চেয়ে কম দিয়েছে।”
কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক সমবায় পরিদর্শকের দেওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বার্ধত্য ভাতা নিয়ে বহু অসঙ্গতি রয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ ভাতা হিসাবে উপভোক্তাদের পাওয়া উচিত ছিল, তাঁদের পাসবইতে সেই পরিমাণ ঢোকেনি।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস বলেন, “তদন্তে ওই প্রকল্পে দুর্নীতি ধরা পড়ার পরেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল বিডিওকে।”
২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে বড়রা সমবায় সমিতির পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রশাসক সরে গিয়ে সমিতির নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য ‘স্পেশ্যাল অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিডিও ওই সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কারও নামে অভিযোগ না জানানোয় তদন্তে সমস্যা হচ্ছে। ওই সমবায় সমিতির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা গতিলাল মাহাতো বলেন, “আমি শুধু নির্বাচন পরিচালনার জন্য সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। ফলে আগে হওয়া দুর্নীতির বিষয়ে আমার পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা জেলা সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ভাবে সমবায় সমিতির কর্মচারীরা মূল দায়িত্বে থাকেন। পরিচালন সমিতির ভূমিকা নগন্য। প্রশাসনের তদন্তে আসল তথ্য উঠে আসবে।” তাঁর অভিযোগ, “এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন কি না তা দেখা দরকার। তৃণমূল রাজনৈতিক স্বার্থে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.