কাকে শত্রু বাছবে, ফের দ্বিধায় সিপিএম
সিপিএমকে আবার সেই সাবেকি দোটানার মুখে ফেলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস না বিজেপি, কে বড় শত্রু— এই প্রশ্নে ফের নাজেহাল প্রকাশ কারাটরা। এবং এই দোটানায় পড়েই সিপিএম এখনও ঠিক করতে পারছে না, মনমোহন সরকার পতনের মুখে পড়লে দলের রণকৌশল কী হবে?
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে নামার পর, ইউপিএ সরকারকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে যাওয়া সিপিএমের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার কেন্দ্রের বিরোধিতায় কতখানি বিজেপির কাঁধে কাঁধ মেলানো উচিত, তা নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। প্রকাশ কারাট যেমন তীব্র কংগ্রেস বিরোধিতার পথে হাঁটতে চাইছেন, তেমনই সীতারাম ইয়েচুরির মতো নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেসকে বিপদে ফেলতে গিয়ে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়াটাও কাজের কথা নয়।
বিজেপি ও বামেরা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখেই আগামিকাল মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে চলেছে। আলাদা হলেও বিজেপি যে দিন ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে, সেই দিনই প্রতিবাদ দিবস এবং বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছেন বামেরা। বিজেপির তরফ থেকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, বামেরা তাঁদের সঙ্গেই আছেন। আগামিকাল মুরলীমনোহর জোশী, শরদ যাদব, প্রকাশ কারাট, এ বি বর্ধনরা একই সঙ্গে সংসদ মার্গে ধর্নায় বসবেন বলেও আজ বিজেপির তরফে ঘোষণা করা হয়েছে। এইখানেই বিপদ টের পাচ্ছেন সিপিএমের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, বিজেপি সব সময়ই চাইবে সমস্ত বিরোধী দলকে নিজের ছাতায় তলার নিয়ে আসতে। কিন্তু তাতে সিপিএমের আখেরে ক্ষতিই। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে। মমতা যে ভাবে পুরো সংখ্যালঘু ভোট মুঠোয় নিয়ে ফেলেছেন, তার পরে অতিরিক্ত বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা সিপিএমের থেকে সংখ্যালঘুদের দূরত্ব আরও বাড়াবে।
সাংবাদিক বৈঠকে কারাট। ছবি: পিটিআই
আজ দিল্লিতে উপস্থিত সিপিএম পলিটব্যুরোর নেতারা বৈঠকে বসেন। তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহারের পরে সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরি হলে সিপিএমের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আজ কিন্তু মুখ খুলতে চাননি প্রকাশ কারাট। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের জবাব, “আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান হল, মনমোহন সরকার যদি এই সব জনবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, তা হলে তার ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই।” এ কথা বললেও তাঁরা যে অকাল নির্বাচন চাইছেন না, তা-ও কারাটের কথা থেকেই স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “কেউই সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলছে না।” সিপিএম নেতারা মনে করছেন, বিজেপি-ও সম্ভবত সংসদে অনাস্থা প্রস্তাবের পথে হাঁটবে না। কারণ তাদেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা এখনই নির্বাচন চান না। সিপিএম নেতাদের মতে, লোকসভা ভোট এগিয়ে এলে একমাত্র মমতা-মুলায়ম ভাল ফলের আশা করতে পারেন। আর কারও সেই আত্মবিশ্বাস নেই। বরং দ্রুত নির্বাচন হলে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের খারাপ ফল হবে।
রাজ্যের সিপিএম নেতাদের একাংশও, যে দলে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেব ও মহম্মদ সেলিমের মতো নেতারা, তাঁরা মনে করেন, ছ’মাসের মধ্যে ভোট হলে মমতা লাভবান হতে পারেন। কিন্তু ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করায় আখেরে ক্ষতিই হবে তৃণমূলের। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেস সঙ্গে ছিল বলেই লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে ৮-১০ শতাংশ বাড়তি ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। আবার রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর মতো অনেকের বক্তব্য, কংগ্রেস সঙ্গে থাকায় মমতা সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গ ছাড়লে ওই সংখ্যালঘুরা ভাবতে পারেন, মমতা আবার বিজেপির সঙ্গে যাবেন। তাই মমতাকে ফের ত্যাগ করতে পারেন তাঁরা। তাই কংগ্রেসকে ছাড়ার ফলে তিনি উল্টে ক্ষতিগ্রস্তই হবেন।
রাজ্যের একটি অংশের আবার ধারণা, বামেরা যে কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলন করছিল, তার পালের হাওয়া অনেকটাই কেড়ে নিলেন মমতা। এই অবস্থায় প্রয়োজন পড়লে কি সরকারকে বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যাবে সিপিএম? দলের পটিলব্যুরোর সদস্য নিরুপম সেনের বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করার কোনও প্রশ্ন নেই।” কিন্তু সেটাই কি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত? নাকি কাল প্রতিবাদ কর্মসূচি ও পশ্চিমবঙ্গ-কেরল-ত্রিপুরায় ধর্মঘট পালন করেই মনমোহন সরকারের বিরোধিতায় ইতি টানবে সিপিএম? কারাট বলেন, “কালকের পরেই আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করব।”
চূড়ান্ত রণকৌশল ঠিক করার আগে শুক্রবার তৃণমূলের মন্ত্রীদের পদত্যাগ পর্যন্তও অপেক্ষা করতে চাইছে সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ, তাঁদের বক্তব্য, এর আগেও মমতা ইউপিএ-র উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা বলে শেষবেলায় থেকে গিয়েছেন। মুলায়ম-মায়াবতী-সহ অন্য আঞ্চলিক দলগুলি কী অবস্থান নেয়, তা-ও দেখতে চান বামেরা। কাল প্রতিবাদ কর্মসূচিতে মুলায়ম ও দেবগৌড়া বামেদের সঙ্গে থাকলেও, তাঁরা ইউপিএ-কে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়ে রেখেছেন। মায়াবতীরও সরকারের সমর্থক। তৃণমূল থেকে সরে যাওয়ার পরে মুলায়ম সরকারে যোগ দিচ্ছেন কি না, মায়াবতীই বা কী করছেন, তা দেখতে চায় সিপিএম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.