করের অর্ধেক ফেরত পেলেই স্বস্তি দেবেন মুখ্যমন্ত্রী
ছরে আরও তিনটি (মোট ন’টি) সিলিন্ডার সস্তায় জোগানোর দায় কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি নিজেরাই নেবে বলে দিনের শুরুতে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্র। বাড়তি ভর্তুকি জোগানোর বল ঠেলে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমেত ‘বিরোধী’দের কোর্টে। তার পাল্টা জবাবে মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দিলেন, আগে রাজ্য থেকে আদায় করা করের ৫০ শতাংশ রাজ্যের হাতেই ফিরিয়ে দিক কেন্দ্র। তা হলে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার পথ নিজেরাই খুঁজে নেবেন তাঁরা।
দ্বিতীয় পর্বের সংস্কারের বিরোধিতায় কেন্দ্র-রাজ্য আর্থিক সম্পর্কের সেই পুরনো বিরোধকেই হাতিয়ার করে মমতার দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত জনগণের স্বার্থ বিরোধী। এলপিজি-তে ভর্তুকি তুললে বা ডিজেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের স্বার্থে যে আঘাত লাগবে, তা তাঁরা হতে দেবেন না। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশ। কেন্দ্র যদি চায়, দাম বাড়াক। তেমনই আমরাও চাই, হয় তারা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক, নইলে রাজ্য থেকে আদায় করা করের ৫০ শতাংশ আমাদের ফিরিয়ে দিক। তার পর বাকিটা বুঝে নেব আমরা। ঘর থেকেই ব্যবস্থা করে দেব জনগণের জন্য।”
বছরে ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা ছ’টায় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ঠেস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষকে বছরে ২৪টা রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দিতেই হবে। যাঁরা বলছেন, ৬টা সিলিন্ডার তাঁরা ‘ডায়েটিং’ করেন, খাবার খান না। বাড়িতে চা-কফি তৈরি করেও তো খেতেও হয়! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে করের বোঝা কিছুটা হাল্কা করে কিছুটা দাম কমাতে তেমন সমস্যা হয় না (ইতিমধ্যেই আরও ৩টি সিলিন্ডার সস্তায় দিতে ভর্তুকি জোগানোর কথা ঘোষণা করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ)। কারণ, কেন্দ্র তাদের সাহায্য করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের যা আর্থিক হাল, বিশেষত তার ঋণের যা বিপুল বোঝা, তাতে সেই পথে হাঁটা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এই সূত্রেই রাজ্যের হাতে করের একাংশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন অনুযায়ী, করের বণ্টনযোগ্য তহবিলের ৩২% রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। ওই বরাদ্দের ৭.২% জোটে পশ্চিমবঙ্গের বরাতে। যা মোট তহবিলের প্রায় ২.৩ শতাংশ। এর আগে ২০১১ সালে ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের কাছে করে রাজ্যগুলির ভাগ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল পূর্বতন বাম সরকারও। তাদের দাবি ছিল, বণ্টনযোগ্য তহবিলের ৩২ শতাংশের পরিবর্তে ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দিক কেন্দ্র। অর্থাৎ, কেন্দ্র তা মেনে নিলে এবং এখনকার মতো তার ৭.২ শতাংশই বরাদ্দ থাকলে, পশ্চিমবঙ্গ পেত মোট তহবিলের ৩.৬%। এখন যা ২.৩%। এর পরিবর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি হল, রাজ্য থেকে সংগৃহীত করের অর্ধেকই সরাসরি রাজ্যের হাতে ফিরিয়ে দিক কেন্দ্র।
২০১১-’১২ আর্থিক বছরে কেন্দ্রের আদায় করা কর ও শুল্কের ভাগ হিসেবে ১৮,৫৮৭ কোটি টাকা পেয়েছিল রাজ্য। আর কর থেকে রাজস্ব হিসেবে নিজে আদায় করেছিল ২৪,৯৩৪ কোটি টাকা। ২০১২-’১৩ সালের শেষে এই দুই অঙ্ক যথাক্রমে ২১,৯৭৫ এবং ৩১,২২২ কোটি হবে বলে গত বাজেটে প্রত্যাশা তাদের।
রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধেও এ দিন ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, “ইউপিএ কত বার দাম বাড়াবে? প্রথমে ৮ টাকা বাড়িয়ে দেয়। পরে ২ টাকা কমায়। আগে তা-ও এক-দেড় টাকা বাড়াত। এখন এক লাফে ৮-১০ টাকা বাড়াচ্ছে। কত দিন এ সব সহ্য করব?”
সারের দামও প্রায় ৭৫% বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর মতে, “এই কাজ কৃষক বিরোধী।” এমনকী কয়লার দাম ৪০% বেড়েছে বলেও কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধেও নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ঠিক হয়েছিল যে, এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। কিন্তু সংসদে আলোচনা ছাড়াই সব কিছু করা হচ্ছে।” আর নিজের তল্লাটে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি রাজ্যের হাতে থাকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “সংবিধান কী বলে? কেন্দ্রের কোনও নীতি এক রাজ্যের জন্য এক রকম, আর অন্য রাজ্যের জন্য অন্য রকম? এমনটা হয়?” আর সেই কারণেই এই বিরোধিতায় অনড় থাকার বিষয়টি এ দিনও ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.