ভৌগোলিক দূরত্ব অনেকটাই। কিন্তু রাজনীতির টানাপোড়েনের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের থেকে খুব দূরে নেই বীরভূমের নানুর। বাম বনাম তৃণমূল লড়াইয়ের পর্ব পেরিয়ে তৃণমূলের ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’ই যেখানে হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের অশান্তির কারণ। শনিবার দলের ব্লক
কার্যালয় ভাঙচুর করে নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা-সহ কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলেরই জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের বিরুদ্ধে।
এ দিন বিকেলে কীর্ণাহার স্টেশনে আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইনের ব্রডগেজ লাইনে রূপান্তরের শিলান্যাস ছিল। সেই অনুষ্ঠানে অনুব্রতবাবু ও রাজ্যের পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রূপায়ণমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই সময়েই নানুর বাজারে বন্ধ ও রাস্তা অবরোধের ডাক দিয়েছিলেন স্থানীয় রাজনীতিতে দলের জেলা সভাপতির বিরোধী গোষ্ঠীর বলে পরিচিত গদাধরবাবুরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, সম্প্রতি তাঁদের এক ব্লক নেতার স্ত্রী ও মা’কে মারধর ও তাঁর বাড়িতে হামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এই কর্মসূচি। ওই মামলায় অভিযুক্তেরা অনুব্রতবাবুর অনুগামী। |
ভাঙচুরের পর তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যালয়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফী |
ওই অনুষ্ঠানের পরেই তৃণমূলের নানুর ব্লক অফিসে ‘হামলা’ হয়। গদাধরবাবুর অভিযোগ, “জনা পনেরো নেতা-কর্মীর সঙ্গে আমি পার্টি অফিসে বসেছিলাম। হঠাৎ অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী তথা দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন লাঠি নিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়। আমাকে ও কয়েকজন কর্মীকে মারধর করে। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত পোস্টারও ছিঁড়ে দেয়।”
ঘটনাস্থলে গিয়ে এ দিন দেখা যায়, ওই তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে দু’টি মোটরবাইক ভাঙা অবস্থায় পড়ে। কার্যালয়ের ভিতরে চেয়ার, টেবিল, আলমারি তছনছ করা হয়েছে। নানুরের দুই তৃণমূল নেতা কৃষ্ণগোপাল মাঝি ও মধুসূদন পাল জখম হয়েছেন। দলীয় কর্মীরা তাঁদের শুশ্রূষায় ব্যস্ত।
যদিও সুব্রতবাবুর দাবি, “ঘটনার সময় আমি কীর্ণাহারের অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” অনুব্রতবাবুও দাবি করেন, “গদাধরবাবু পাগলের প্রলাপ বকছেন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “রেলের ওই সভা বান্চাল করতেই গদাধরবাবুরা নানুরে বন্ধ ডেকেছিলেন। সভায় আসার পথে কিছু দলীয় কর্মীকে ওঁরা মারধর করেন। তা নিয়ে আমরা পুলিশে অভিযোগ জানাব বলাতেই ওঁরা ওই নাটক করেছেন।” এসডিপিও (বোলপুর) প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, “নানুরে কিছু গোলমাল হয়েছে। বিশদে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
বাম-আমলে সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত নানুরে সম্প্রতি তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হচ্ছে। মাসখানেক আগে বাসাপাড়ায় দলীয় কার্যালয় কোন গোষ্ঠীর দখলে থাকবে, তা নিয়ে বোমাবাজি হয়। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছিল প্রশাসনকে।
তার কিছু দিনের মধ্যেই কাজের টেন্ডার পাওয়া নিয়ে এলাকার থুপসড়া পঞ্চায়েতেও বোমাবাজি করায় অভিযুক্ত ওই দুই গোষ্ঠী। ঘটনায় বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ বলছেন, “রোজকার সংঘর্ষ তো থামছেই না! পরিবর্তন আর এল কোথায়?”
|
ধর্ষণ করে খুন, অভিযোগ রামপুরহাটে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট
|
বাড়ির ভেতরে ঢুকে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল বীরভূমের রামপুরহাট শহরে। শুক্রবার গভীর রাতে রামপুরহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীশাড়া পাড়া এলাকার বাসিন্দা আলপনা ধর (৩৭) নামে ওই যুবতীর ক্ষতবিক্ষত দেহ তাঁর ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁর দাদা অশোক ধর পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে ওই অভিযোগ জানান। শনিবার বিকেলে ময়না-তদন্ত হয়ে যাওয়ার পরে মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবিতে তাঁরা রামপুরহাটে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘণ্টাখানেক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ লাঠি চালিয়ে অবরোধ তোলে। পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না এলে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে কি না বলা যাবে না। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।” অশোকবাবু রামপুরহাটেরই একটি লজে কর্মরত। তিনি বলেন, “শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি বোনের ঘরের আলো নেভানো। ঘরের দরজা ঠেলতেই দেখলাম বোনের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে। বোনের মাথা, কপাল, মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরণের কাপড়ও ঠিক ছিল না। বোনকে দুষ্কৃতীরা ধর্ষণ করে খুন করেছে।” |