মোট ছ’লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞানের পড়ুয়া মাত্র ১০-১২ শতাংশ! এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে এটাই ছিল পরিসংখ্যান। ফি-বছর চিত্রটা এমনই থাকে। বিগত এক দশকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক লক্ষ বাড়লেও রাজ্যে বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়ার সংখ্যা তেমন ভাবে বাড়েনি।
পরিকাঠামোর অভাব যে এর অন্যতম বড় কারণ, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অনেকেই সেই ব্যাপারে একমত। তবে বিজ্ঞানের প্রতি টান গড়ে না-ওঠাকেও একই সঙ্গে দায়ী করেন তাঁরা। শিক্ষানুরাগীদের মতে, স্কুলের ক্লাসে বিজ্ঞান যে-ভাবে পড়ানো হয়, তাতে মোটেই আকর্ষণ অনুভব করে না ছোট ছোট পড়ুয়ারা। বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় না। রাজ্যে তাই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা ৫৬০০ হলেও বিজ্ঞান পড়ার সুবিধা রয়েছে মাত্র ২৫০০ স্কুলে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকায় বিজ্ঞানের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের টান বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ শুরু করছে রাজ্য সরকার। ব্ল্যাকবোর্ড আর চক-ডাস্টারের বাঁধা গতের বাইরে গিয়ে ছেলেমেয়েরা যাতে বিজ্ঞানকে ভালবাসতে শেখে। নবম-দশম শ্রেণিতে পড়ুয়ারা তবু স্কুলে বিজ্ঞানের গবেষণাগারে ঢুকতে পারে। কিন্তু তার নীচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের সেই সুযোগ নেই। এ বার নিচু ক্লাস থেকেই পড়ুয়ারা যাতে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়, সেই পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। তাই ঠিক হয়েছে, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুলে ‘সায়েন্স অ্যাক্টিভিটি রুম’ তৈরি করা হবে। বিজ্ঞানের পঠনপাঠন হবে সেখানে। এবং সেটাই হবে খুদে পড়ুয়াদের গবেষণাগার। সেখানে হাতে-কলমে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখল, তারও মূল্যায়ন হবে।
কী থাকবে ওই ক্লাসঘরে?
বিজ্ঞানের অভিজ্ঞ শিক্ষকেরা বলেন, খুব বড় আয়োজনের দরকার নেই। হাতের কাছে পাওয়া যায়, এমন সব টুকিটাকি জিনিস দিয়েই এত কিছু করা যায়, যা দেখে বা হাতে-কলমে করে বিজ্ঞানের প্রতি পড়ুয়াদের উৎসাহ বাড়তে পারে। সরকারের ভাবনাও কতকটা সেই ধরনেরই। জলের গ্লাস, পোস্টকার্ড, ব্যাটারি, মোমবাতি, বিদ্যুতের তার ইত্যাদি। যন্ত্র বলতে থাকবে ল্যাপটপ, এলসিডি প্রজেক্টর। আপাতত ১০০টি স্কুলে চালু হবে ওই ‘অ্যাক্টিভিটি রুম’। এটি গড়ে তুলতে প্রতিটি স্কুলকে সাড়ে চার লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। পরে আরও বেশি সংখ্যক স্কুলে ওই ব্যবস্থা হবে।
কী ভাবে এই বিশেষ ক্লাসরুম গড়ে তোলা যায়, তার রূপরেখা তৈরির জন্য একটি কমিটি গড়েছিল রাজ্য সরকার। কমিটির এক সদস্য বলেন, “সাধারণ ভাবে শিক্ষক ঘরে ঢুকে ব্ল্যাকবোর্ডে আগে বিষয়টি লিখে তার পরে পড়াতে আরম্ভ করেন। কিন্তু তাতে পড়ুয়াদের আগ্রহ তৈরি হয় না। ধরা যাক, বায়ুর চাপ পড়ানো হবে। শিক্ষক ঘরে ঢুকে জলের গ্লাস আর পোস্টকার্ডের সহজ একটা পরীক্ষা করে দেখালেন এবং ছাত্রদের কাছেই জানতে চাইলেন, ওই পরীক্ষা থেকে কী বোঝা গেল।
তাতে ক্লাসটা আনন্দদায়ক হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহও বাড়বে।”
নতুন ক্লাসরুম চালু হলে পঠনপাঠনের ধরনটাই বদলে যাবে। তাতে লাভ হবে বলেই আশা করছেন প্রবীণ শিক্ষকেরা। পদার্থবিদ পার্থ ঘোষ বলেন, “অনেক দিন ধরেই এ ভাবে পড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এত দিনে সরকারি স্তরে এমন একটা উদ্যোগ শুরু হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে। তবে খুব যত্ন নিয়ে এই কাজ করতে হবে। না-হলে কিন্তু পুরো পরিকল্পনাটাই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।” তাঁর মতে, সরকারের এই উদ্যোগ রূপায়ণের মূল দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। কিন্তু নতুন কিছু চালু করতে গেলে তাঁদের অনেকেই তেমন আগ্রহ দেখান না। তেমন হলে কিন্তু এই উদ্যোগে ফল মিলবে না। |