দেখবি আর জ্বলবি...
লকাতার পাবলিক বাস না-ফুরান ওয়ানলাইনের চলমান স্যাম্পল। এই লেখার শিরোনামটির কৃতজ্ঞতায় আমি ধন্য। বাঙালিকে স্ট্রিট স্মার্ট করেছে বাসের পেছনে লেখা এমন অনেক স্মরণীয় পংক্তিমালা। সেই লুচির মতো ফুলে-ফেঁপে ওঠার ইতিবৃত্ত নিয়ে আজকের পংক্তিভোজের কথকতা।
কত কিছুই তো ফোলে। বেলুন থেকে ঠোঁট। কিন্তু লুচির মতো না ফুললে সেটা যেন ফোলাই নয়। আর, ফুলকো না হলে সেটা আবার লুচি কীসের? কষা মাংস থেকে কাশ্মীরি আলুর দম, কত শত রান্নার ঘরকন্নায় লুচি সবসময় লিড রোলে। এ পারের নুচি বা ওপারের লুচি, বাঙালির আবহমান মেনুতে স্বমহিমায় ছিল, আছে, থাকবে। কত রবিবারের সকাল, কত লক্ষ্মীপুজোর রাত, কত বিয়ের নেমন্তন্ন জুড়ে এই খাদ্যবস্তুটির জায়গির ছড়ানো! কচৌড়ি-পুরির হিন্দুস্থানি আগ্রাসনে একা বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এই লুচিবাবু। ময়দা ও গাওয়া ঘিয়ের অসামান্য যুগলবন্দিতে রচিত বাবুগিরি, বাংলার বিবিদের এক পেটেন্ট বিশেষ। মা-ঠাকুমাদের হাতে বানানো ফুলকো লুচির ফান্ডা এখন নামী রেস্তরাঁর শেফেদের ট্রেড সিক্রেট। ময়দার সঙ্গে সামান্য সুজি মিলমিশে যে ফুলন্ত লুচির জন্ম, তা হয়তো আজকের অনেক ঘরনিরই আয়ত্তে নেই, জেনে নিতে অসুবিধে কোথায়?
ছবি: দেবাশীষ দেব
আজকাল অবশ্য জানিয়ে দেওয়ার লোকের অভাব নেই। পথে গজিয়ে ওঠা কুকারি ক্লাস আর ওয়ার্কশপে লুচি মেকিং মেড ইজি-র কোর্স চলছে। ছোট থেকেই চাইনিজ বা কন্টিনেন্টাল রেসিপিতে দড় বাঙালিনিদের বাংলা রান্নার ক্রেজ কিছু কম নয়। এন আর বি-দের ছেড়েই বলছি, খাস কলকাতাতেও আজ বাঙালি রান্না জানা মানুষের আকাল। তবু ভাগ্যিস আজও আমরা কিছুসংখ্যক সেকেলে বাঙালিরা জানি, আর জানি বলেই মানি, লুচি আটার হলে নিম্নরুচির পরিচয়। স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে যাঁরা স্বাদের হরিবোল চান, আমি তাঁদের দলে নেই। সাদা রং সেরা লুচির লক্ষণ। লালচে হলেই গেল, মজাটাই শেষ। আসলে বাঙালিদের মনে লুচির একটা ভিসুয়াল আইডেন্টিটি রয়েছে। তার থেকে ফসকেছ তো কেস খারাপ। পহলে নজরদারি, পিছে গুণবিচারি কথাটা সত্যিই ফেলনা নয়। দুধসাদা পোর্সেলিন প্লেটে ঘি-সাদা লুচি মাস্ট। রং-এর এ দিক-ও দিক, ইলেকশনের রেজাল্টে চলে, বাঙালির রান্নায় চলে না।
তো, লুচি নিয়ে যেমন অসংখ্য রূপকথা, তেমনই লুচির অ্যাকম্প্যানিমেন্ট হিসেবে আলুর দম থেকে ছেঁচকি, মায় বোঁদে-মিহিদানা, জিভে জল আনার হাজার ফিকির। কচি পাঁঠা হোক বা দেশি মুরগি, লুচি সহযোগে সে তো অমৃত। কালো জিরে দিয়ে সাদা আলুর তরকারি বা পুজোর পায়েস, বাঙালির ‘লুচি’শীলতার পরিচয় সর্বত্র।
শ্রীরামকুমার চাটুজ্জের বিখ্যাত গান: লুচি তুমি অরুচির রুচি, মনে পড়ে? আমার এক অ্যাডভেঞ্চারাস কবি বন্ধু এক বার তাঁর প্রেমিকাকে এক কবিতায় তুলনা করেছিল লুচির সঙ্গে। একটি লাইন ছিল অনেকটা এ রকম:
তোমার যেমন রুচি
আমার তেমন লুচি!

শুনেছি, কেতাদুরস্ত মেয়েটির ঠোঁট-ফোলা রাগে দাউ দাউ করে জ্বলে গিয়েছিল পদ্য লেখা কাগজের টুকরোটা।
লুচি মানেই এমন সব বিচিত্র গল্প। লুচি মানেই উৎসব। লুচি মানেই সেলিব্রেশন। রুটি থেকে লুচিতে উত্তরণ তো রীতিমত ইকনমি থেকে এক্সিকিউটিভ ক্লাসে যাওয়ার শামিল। রুটির সঙ্গে রুজির যেমন মিল, লুচির সঙ্গে রুচির। খানদানি খানায় সে এক অবশ্যভোগ্য রসদ। তবে, ইদানীং নান-তন্দুরি-রুমালির দৌত্যে লুচির পজিশন বেশ ঢিলে। অষ্টমীর সকাল বা সাপ্তাহান্তিক রবিবারের ছুটি ছাড়া সে যারপরনাই, অ্যাবসেন্ট প্লিজ! কে জানে, অদূরে কোনও ‘লুচি বাঁচাও সমিতি’ তৈরি হবে কি না। না কি বাংলাই হয়ে উঠবে সাক্ষাৎ বে‘লুচি’স্থান!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.