জিনে খুশির তুফান উঠেছে
বৃষ্টি নামল, আর মেয়ে দুটো পড়ি কি মরি দৌড়ল। বৃষ্টি থেকে গা-মাথা বাঁচিয়ে দু’জনে হাসিতে লুটোপুটি। হাসি আর থামে না দু’জনের। ছেলেটা, তাদের মতোই কুড়ি কি একুশ, সে দৃশ্য দেখে থ। তার মাথাতেই আসে না, এত হাসির কী হল! শেষে দুই মেয়ে অনেক কষ্টে হাসি সামলে বলে, ‘বা রে, বৃষ্টির সঙ্গে কম্পিটিশন করলাম, জিতলাম, মজা লাগবে না?’ ছেলেটা একটু বোকা বোকা মুখে হাসল, অকারণে এমন আহ্লাদের কারণটা ঠিক ঠাহর করতে পারল না।
এ-রকমই একটা দৃশ্য লিখেছিলেন বাণী বসু, তাঁর একটি উপন্যাসে। ভারী ঠিকঠাক দৃশ্য। মেয়েরা ওই রকমই। ছোট ছোট মুহূর্ত থেকে, সম্পূর্ণ ‘অকারণে’ অনাবিল মজা খুঁজে নিতে মেয়েদের সত্যিই জুড়ি নেই। একটু টক-ঝাল তেঁতুলমাখা টাকরায় আওয়াজ তুলে খাওয়ার যে কী আনন্দ! গড়িয়াহাটের মোড় থেকে পুরো পঞ্চাশ মিনিট দরাদরি করে কেনা দশ টাকার কানের দুলেও কী কম মজা! ফুচকা-ঝালমুড়ি-আইসক্রিম তো ছেড়েই দিলাম, হঠাৎ একটা নতুন শাড়ির অনন্ত আহ্লাদও না-হয় উহ্য রাখা গেল, স্রেফ সকালে উঠে জানলা খুলতেই শরতের রোদ্দুর আর ছোট্ট চড়াইপাখিটা চোখে এসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে বিপুল তরঙ্গ রে! এই এমনি এমনি খুশি হয়ে ওঠার হিসেব মেলাতে না পেরেই তো বেচারি ছেলেরা ‘স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম্’ নিয়ে শ্লোক রচনা করে। কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না: খুশি, তুমি কোথা হইতে আসিতেছে?
‘জিন’ হইতে বলছেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি, কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, এবং নিউ ইয়র্ক স্টেট সাইকিয়াট্রিক ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মোনো-অ্যামাইন অক্সিডেস এ (এম এ ও এ) নামের জিনটির এক বিশেষ ধরনের নিচু মাত্রার (লো এক্সপ্রেশন) রূপ আছে, মেয়েদের শরীরে সেটি আছে বলেই তাদের এমন বাড়তি খুশি খুশি ভাব।
‘প্রোগ্রেস ইন নিউরো-সাইকোফার্মাকোলজি অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সাইকিয়াট্রি’ জার্নালে অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণার রিপোর্ট। তার মানে, খুশি থাকার রহস্যটা মেয়েদের একেবারে নিজস্ব। মেয়েদের ‘হ্যাপিনেস জিন’-এর খোঁজ এই প্রথম পাওয়া গেল, দাবি করছেন গবেষকরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, এম এ ও এ জিন একটা বিশেষ এনজাইম-এর কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। এই এনজাইমটি সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং মস্তিষ্কের অন্য নিউরোট্রান্সমিটারদের ভেঙে দিয়ে মন-ভাল-করা রাসায়নিক তৈরি করে। কম-মাত্রার এম এ ও এ থাকলে বেশি মাত্রায় মোনো-অ্যামাইন তৈরি হয়। আর এই মোনো-অ্যামাইন ওই ফিল গুড নিউরোট্রান্সমিটার ও রাসায়নিকগুলোকে বেশি পরিমাণে মস্তিষ্কে থাকতে সাহায্য করে। আর তার ফলেই মেজাজটা ফুরফুরে হয়। বিজ্ঞানীরা অবশ্য কোনও কথাই এতটা জোর দিয়ে বলেন না, খুশির জিন আপাতত তাঁদের ‘অনুমান’। গবেষণা আরও চলবে। কিন্তু আমরা অনুমানেই খুশি।
ছেলেরা তর্ক করবে: মেয়েরা অকারণে খুশি হয় বটে, কিন্তু অকারণে দুঃখ পায়, রেগে যায়, তা-ও তো সত্যি! তাদের চেনা অভিযোগ: মেয়েরা অতিরিক্ত ‘মুডি’। এই হাসছে, তো এই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছে। এই ফুরফুরে, তো এই রেগে অগ্নিশর্মা! দেবতা তো কোন ছার, মেয়েদের মন স্টিভ জোবসও বুঝে উঠতে পারেননি! বিজ্ঞানীরাও সেটা অস্বীকার করেননি। কিন্তু, তাঁদের বক্তব্য: মেয়েদের যতই গোসা হোক, ওদের মতো ওভারঅল খুশি খুশি ভাবটা কিন্তু পুরুষদের থাকে না। অর্থাৎ, রাগ-টাগ, দুঃখ-টুঃখ সবই একটা খুশিয়াল বাতাবরণে ঘোরাফেরা করে। পুরুষরা এই খবরটি শুনে খামখা হিংসে করবেন না, বরং এই ভেবে আশ্বস্ত হোন যে, আপনার সাধের সেই মেয়েটি গোসাঘরে ঢুকলেও খুব বেশি উতলা হওয়ার দরকার নেই, মেঘ কেটে যাবে, যাবেই। রাজা দশরথ কথাটা জানলে অবশ্য রামায়ণ আদিকাণ্ডেই সমাপ্ত হত।
ছেলেরা দুরারোগ্য তার্কিক, আবার প্রশ্ন তুলবে: কে বলেছে আমরা আইসক্রিম খেলে খুশি হই না? নতুন জামাকাপড় পেলে গদগদ হই না? বৃষ্টিতে ভিজে ইস্কুল ফেরতা পথে জমা-জলে ছেলেরা দুষ্টুমি করে না? আহা, করে তো, করে। কিন্তু কত দিন? যে-ই না ছোট থেকে একটু বড় হওয়া, যে-ই না মিষ্টি গলাটা ভাঙতে শুরু করা, অমনি কী করে জানি ওই এমনি এমনি খুশি হওয়ার অভ্যেসটা চলে যায়, তখন আনন্দেরও কেমন একটা জঙ্গি ভাব চলে আসে। চকোবার-এর অবয়বটি গলে গিয়ে ঠোঁট আর গাল বেয়ে দুধের স্রোত গড়িয়ে পড়ছে কলেজপড়ুয়া ছেলেটির জামায় আর তার বন্ধুরা বান্ধবী নয়, বন্ধুরা সেই দৃশ্য দেখে খিলখিল করে এ-ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে, এমন দৃশ্য দেখেছেন কখনও? দেখলে ছবি তুলবেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বাঁধা।

সুখের কথা
যদি কোনও মেয়েকে হাসাতে পারো,
তবে তাকে দিয়ে যা খুশি
তা-ই করিয়ে নিতে পারো।


মেরিলিন মনরো

অস্কার ওয়াইল্ড
যে পুরুষ তার প্রেয়সীকে ‘সুস্থ সাধারণ
মানুষ’ মনে করে, তার সঙ্গে কোনও নারী
সুখী হবে, এমনটা আশা করো কী করে?
সুখ হল সবল শরীর
আর দুর্বল স্মৃতিশক্তি।


ইনগ্রিড বার্গম্যান

অড্রে হেপবার্ন
আমি মনে করি হাসিখুশি
মেয়েরাই সবচেয়ে সুন্দরী।

হ্যাঁ, কলেজ না হয়ে প্রাইমারি স্কুল হলে এমনটা হতেও পারে, হতেই পারে, কিন্তু একটু বড় হলেই, ব্যস, হা-হা চলবে, হো-হো তো চলবেই, কিন্তু হি-হি, এক্কেবারে না! ছি! মেয়েদের মতো হাসে নাকি? ছেলেবেলার ফুর্তি বড়বেলায় এসে উধাও হয়ে যায় কেন, তারও কারণ বাতলেছেন বিজ্ঞানীরা। এম এ ও এ জিনের গুণ, যেটা মেয়েদের মধ্যে কার্যকর, সেটাই ছেলেদের মধ্যে কাজ করতে পারে না। তার মূলে রয়েছে টেস্টোস্টেরন। বয়ঃসন্ধির আগে পর্যন্ত ছেলেরা হয়তো বেশি খোশমেজাজে থাকতে পারে কারণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেক কম থাকে। তার পর যখনই ওই বস্তুটির মাত্রা বাড়ে, অমনি মেজাজটা অন্য রকম হয়ে যায়।
আচ্ছা, এম এ ও এ জিনের ওই নিচু মাত্রার রূপটি ছেলেদের শরীরে থাকে না বুঝি? থাকে, কিন্তু তার পরিণাম অন্য। সত্যি বলতে কী, এই জিনের এ-যাবৎ বেশ দুর্নাম ছিল। এর প্রভাবে নাকি মানুষ বেশি রেগে যায়, আচারে আচরণে একটু জঙ্গি গোছের হয়ে ওঠে, অতিরিক্ত মদ্যপানে আসক্ত হয়, নানা অসামাজিক অন্য কাজকর্মের দিকে যায়। এই কারণেই কোনও কোনও বিজ্ঞানী এটিকে ‘যুদ্ধবাজ’ জিনও বলে থাকেন। কিন্তু অন্তত মেয়েদের বেলায় এই জিনেরই ভাল দিক খুঁজে পাওয়া গেল। তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, একই জিন ছেলেদের এবং মেয়েদের ওপর দু’রকমের প্রভাব ফেলে। কিন্তু তা হলে তো কৃতিত্বটা কেবল জিনের নয়, মেয়েদের মেয়েত্বও ক্রেডিট নিতে পারে বইকী।
তা হলে ছেলেরা কী করবেন? টেস্টোস্টেরনের নিয়তি মেনে নিয়ে মেয়েদের হঠাৎ-খুশিকে ‘যত্ত সব’ বলে উড়িয়ে দেবেন? মনের হিংসে মনে চেপে উদাসীন ঘুরে বেড়াবেন? খুশির জিন নিয়ে আরও আরও গবেষণার ফলের অপেক্ষায় বসে থাকবেন?
তা কেন? মেয়েদের দেখে শিখলেই হয়। সামনেই পুজো। পুজো মানেই পুজোর বাজার। পুজোর বাজার মানেই মেয়েরা হইহই, হাসিখুশি, আহ্লাদে বত্রিশখানা, আর ছেলেরা ব্যাজার মুখে সেই পথ লক্ষ করে... চলুন, নিয়মটা ভেঙে দেওয়া যাক। প্রাণ খুলে উইন্ডো উইন্ডোশপিং করুন। জিনিসটা আমার নয়, হয়তো বা যা দাম, তাতে কেনাও হবে না কোনও দিন, কিন্তু দেখেই কি কম মজা!
কীসের মজা? মেয়েদের কাছে শিখে নিন। জিনের তোয়াক্কা না করেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.