টের পেলেই বসে পড়ুন
চুপিসারে হুঁশ কেড়ে বিপদ ডাকে ‘ব্ল্যাক আউট’
বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন বাসস্ট্যান্ডে। হঠাৎ চার পাশ অন্ধকার হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড হুঁশ নেই। সম্বিৎ ফেরার পরে ফের সব ঠিকঠাক। আর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। কিছু ক্ষণ আগে যেন কিছুই হয়নি! চিকিৎসক দেখলেন। দেখেও কিছু বুঝতে পারলেন না।
ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই এক মহিলার মনে হচ্ছিল, বুকটা ভীষণ ধড়ফড় করছে। নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। অসুবিধাটা বাড়তে বাড়তে বিকেলের দিকে কয়েক মুহূর্তের জন্য জ্ঞান হারালেন তিনি।
এটা কী? চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এটার নাম ‘ব্ল্যাক আউট’। যুদ্ধের হিড়িকে নিয়ম করে আলো নিভিয়ে দেওয়া হত শহরে। ‘ব্ল্যাক আউট’ ছিল সেটার চলতি নাম। শরীরের ক্ষেত্রেও ‘ব্ল্যাক আউট’ আসলে আলো চলে যাওয়াই। চেতনার আলো চলে যাওয়া।
কী ধরনের শারীরিক পরিস্থিতি এটা?
চিকিৎসকেরা বলছেন, মূলত শরীরের রক্ত চলাচল প্রক্রিয়ায় হঠাৎ কোনও পরিবর্তন হলেই এমনটা হয়। আবার ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ায় অনিয়ম হলে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ কমে গিয়েও হতে পারে ‘ব্ল্যাক আউট’। মৃগী রোগীদেরও যখন-তখন এমনটা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “হয়তো কারও হৃৎস্পন্দন হঠাৎ বেড়ে গেল (‘ট্যাকি অ্যারিদমিয়া’) বা কমে গেল (‘ব্র্যাডি অ্যারিদমিয়া’)। তখন ‘ব্ল্যাক আউট’ হতে পারে। আবার অনেক ক্ষণ টানা দাঁড়িয়ে থাকলে, বসে থাকার পরে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে এমনটা হতে পারে। রক্ত বা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দেখেও অনেকের রক্তচাপ আচমকা কমে গিয়ে ব্ল্যাক আউট হতে পারে।”
কী ক্ষতি হতে পারে এতে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ব্ল্যাক আউটের ফলে শারীরিক ক্ষতি তেমন না-হলেও অন্য বিপদ হতে পারে। রাস্তা পেরোতে গিয়ে চোখ অন্ধকার হয়ে গেলে কিংবা আগুনের সামনে রান্না করতে করতে ব্ল্যাক আউট হলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ব্ল্যাক আউটে কী করা উচিত? এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ই বা কী?
শুভ্রবাবু বলেন, “এই সব ক্ষেত্রে শরীর খারাপ লাগছে বুঝলেই সঙ্গে সঙ্গে উবু হয়ে বসে পড়া বা শুয়ে পড়া উচিত। এতে রক্তচাপ সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে যায়।” পুরোপুরি মুক্তি না-পেলেও ব্ল্যাক আউটের আগাম আঁচ পেলে সাবধান হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে কয়েকটি যন্ত্র। সম্প্রতি কয়েকটি সংস্থা এমন যন্ত্র এনেছে, যা শরীরে লাগিয়ে রাখলে সব সময়েই হৃৎস্পন্দন মাপতে পারে। এক্সটার্নাল ও ইনটার্নাল লুপ রেকর্ডার নামে ওই যন্ত্র লাগিয়ে রাখলে হৃৎস্পন্দনের হঠাৎ ওঠানামা ধরা পড়ে। তা থেকে ব্ল্যাক আউটের হামলার আঁচ পাওয়া যেতে পারে।
হরমোন বিশেষজ্ঞ শুভঙ্কর চৌধুরী জানান, ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে শর্করার পরিমাণ অতিরিক্ত কমে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হয়ে গেলে এই ধরনের ব্ল্যাক আউট হতে পারে। তাঁর কথায়, “যাঁদের এমন প্রবণতা রয়েছে, তাঁদের মাথা ঘুরছে মনে হলেই গ্লুকোজ বা একমুঠো চিনি এবং তার পরে দু’টো বিস্কুট বা একটু মুড়ি খেয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হবে সময়মতো। সময়ে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। এতে ব্ল্যাক আউট আটকানো যাবে।”
ব্রেন স্ট্রোক বা কয়েক ধরনের মৃগী থেকেও ব্ল্যাক আউট হতে পারে বলে জানাচ্ছেন স্নায়ু শল্যচিকিৎসক পরিমল ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, “অনেক মৃগীতে রোগীর হয়তো হুঁশ আছে। কিন্তু তাঁর মনে হয়, চোখে কিছু দেখছেন না। অনেকের খিঁচুনি হয়। এ-সব ক্ষেত্রে আগুন, জল, গাড়ি চালানো এড়িয়ে চলতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.