মাটির মানুষ
‘অমৃতলোক’-এর খোঁজে
এক আলোর পথযাত্রী
র্যাপদ থেকে বাংলা সাহিত্যের যে যাত্রাপথ শুরু হয়েছিল আজ তা নানা শাখাপ্রশাখায় প্রসারিত এক মহীরুহ। প্রতিনিয়ত তার পুষ্টিবর্ধন করে চলেছেন জানা ও অজানা অনেকে। যদিও তাঁদের অনেকেই থাকেন গোপনে। পাঠক তাদের সৃষ্টিকে চিনলেও আড়ালেই থাকেন সৃষ্টিকর্তা। সেরকমই একজন সমীরণ মজুমদার।
পারিবারিক সূত্রে আদি বসত বাংলাদেশের ফরিদপুর হলেও সমীরণের জন্ম অবশ্য কলকাতায়। বাবা ছিলেন রেলকর্মী। বদলির চাকরি। স্কুলজীবন কেটেছে আসানসোল ও খড়গপুরে। কলেজ মেদিনীপুরে। কর্মস্থল মেদিনীপুর জেলা কালেক্টরেট। সমীরণের বর্তমান ঠিকানা পশ্চিম মেদিনীপুরের স্টেশন রোডের ভাড়া বাড়ি। এই অবধি পড়ে ভাবা যেতেই পারে এত এক চেনা মধ্যবিত্ত জীবন। কিন্তু এর বাইরে সমীরণবাবু হলেন এক ‘অমৃতলোকে’র যাত্রী। সত্তরের কালবেলায় সমীরণ তৈরি করেছিলেন পাক্ষিক কবিতা পত্রিকা ‘শ্বেতপদ্ম’। কিন্তু সেটি বাঁচেনি। বা বলা ভাল বাঁচাতে পারেননি সমীরণ। কিন্তু তা দমাতে পারেনি তাঁকে। ১৯৭৫ সালে তৈরি করেন ‘অমৃতলোক’। সেই থেকে আপ্রাণ লড়াই করে চলেছে ‘অমৃতলোক’।
পত্রিকার প্রাবন্ধিক তালিকায় রয়েছে অশীন দাশগুপ্ত, হোসেনুর রহমানের মতো নক্ষত্রের নাম। পত্রিকার বিশেষ ক্রোড়পত্রে বিষয় হিসাবে এসেছে এলিয়ট থেকে বাদল সরকার। আছে অনেক নতুন মুখও।
মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকায় এসেছে দেরিদা-ফুঁকো-বাখতিনের কথা। পত্রিকার তথাকথিত ব্যবসার জন্য লেখার মানের সঙ্গে অবশ্য বরাবরই বৈরীতা সমীরণের। আর তাই পছন্দ না হলে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখা ফেরত দিতে আজও কোনওরকম দ্বিধাবোধ করেন না। এই প্রসঙ্গে স্বপ্নময় চক্রবর্তী জানালেন, “সত্যিই গল্পটা সমীরণ ফেরত দিয়ে ঠিক করেছিলেন। ওটা ভাল হয়নি। ওই ঘটনার পরে আমি ভাল গল্প লিখতে পেরেছিলাম।” পত্রিকার লেখকগোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সমীরণবাবু। পত্রিকা বের করার মাঝেই তৈরি করেছেন গ্রন্থ প্রকাশনা, নাম ‘অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ’। পত্রিকার পক্ষ থেকে উঠতি লেখকদের উৎসাহিত করতে ‘অমৃতলোকের যাত্রী’ ও জীবনানন্দ দাশ’ পুরস্কার-এর ব্যবস্থা করেছেন। লেখা সংগ্রহ ও তার মান বিচারের কাজে ব্যস্ত থাকতে থাকতে নিজের লেখক পরিচয় ভুলেছেন। নিজের পত্রিকা নিয়ে এতটাই মগ্ন যে ক্রমশ কমেছে পিএফের সঞ্চয়, বেড়েছে ঋণ।
অমৃতলোকের পাতায় উঠে এসেছে বামচিন্তা ও আদর্শ নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ। তবে সমীরণ কোনও ‘দল’-এর নন। রাজনৈতিক আদর্শের চেয়ে তাঁর কাছে প্রিয় সাহিত্য সৃষ্টি। বিশ্বের নানা প্রান্তের সামাজিক সমস্যা নিয়ে নিয়মিত আলেচনা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকার পাতায়। না। একটু ভুল হল। ছোটবেলা থেকে ‘শিকড়হীন’ সমীরণবাবুর শিকড় কখনই একটি জেলায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ‘বিশ্ব-নাগরিক’। নিজেকে আলোর পথযাত্রী হিসাবেই তুলে ধরতে চান সমীরণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.