উত্তর কলকাতা
সৌন্দর্যায়ন
পাড় বাঁচাতে
বালি তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গঙ্গা লাগোয়া রাস্তা। তাই বালি তোলা বন্ধ করতে কুমোরটুলি ঘাটে প্রবীণদের বসার জায়গা তৈরির কাজ শুরু হল। অর্থ মিলছে বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে। কিন্তু তার পাশেই জমছে আবর্জনা। অভিযোগ, দুর্গন্ধে এখানে হাঁটাই যায় না। প্রশ্ন উঠেছে, পরিকাঠামো ঠিক না করে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্প আদৌ কার্যকরী হবে কি?
স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজা বলেন, “কুমোরটুলি ঘাট থেকে বালি তুলে নিয়ে যাওয়া অনেক দিনের সমস্যা। তা ঠেকাতেই এখানে আমার উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ করে এই পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা রয়েই গিয়েছে। এ ব্যাপারে নানা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
গঙ্গার ধার থেকে বালি তোলায় কী সমস্যা হতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নদীর পাড় থেকে বেশি বালি বা মাটি তুললে সেখানে ধস নামতে পারে। এ ক্ষেত্রে কুমোরটুলি ঘাট সংলগ্ন স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। বসে যেতে পারে সংলগ্ন পুরনো বাড়ির ভিতও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর দু’য়েক ধরে এখান থেকে মাটি কেটে বা বালি তুলে ডাঁই করে পাড় লাগোয়া রাস্তায় রাখা হয়। হাওয়ায় বালি উড়ে আশপাশের বাড়িতে ঢোকে। শশীদেবী বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরে আমি জায়গাটি দেখতে যাই। এ ভাবে বালি তোলা বেআইনি। যে জায়গায় বালি তুলে রাখা হচ্ছে, সেখানে কোনও সৌন্দর্যায়নের কাজ করলে বালি তোলা বন্ধ হতে পারে। বাসিন্দাদের অনেক দিনের দাবি ছিল প্রবীণদের জন্য একটি বসার বেঞ্চ তৈরি করার। এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে আমার বিধায়ক তহবিলের অর্থেই এই কাজ শুরু হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই শেষ হবে। বালি তোলা বন্ধ রাখতে পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে বলেছি।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান বলেন, “বন্দর কর্তৃপক্ষ লাইসেন্স দিলে তবেই মাটি কাটা বা বালি তোলা সম্ভব। কোথা থেকে বালি তোলা হবে তা কর্তৃপক্ষই ঠিক করে দেন। সেই লাইসেন্স নিয়ে নদী থেকে বালি বা পলি তোলা যায়। যাঁদের লাইসেন্স নেই তাঁদের পুলিশ ধরে। এই অভিযোগের ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানি না। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। তবে ইতিমধ্যেই গঙ্গার ধারে নজরদারি অনেক বাড়ানো হয়েছে।”
কলকাতা বন্দরের এক আধিকারিক বলেন, “গঙ্গার যেখানে-সেখানে মাটি বা বালি তোলার কোনও অনুমতি বন্দর কর্তৃপক্ষ দেন না। এতে ধস নামার আশঙ্কা থাকে। নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকেই মাটি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। অভিযোগ পেলে আমরাই পুলিশকে জানাই। তবে, কুমোরটুলির ক্ষেত্রে এখনও কোনও অভিযোগ এসেছে বলে জানা নেই।”
তবে, সৌন্দর্যায়নের এই প্রকল্প নিয়ে জমি-জট তৈরি হয়েছিল। গঙ্গার পাড়ের এই অংশটি কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের। তাঁদের অনুমতি পাওয়ার পরেই কাজ শুরু হয়েছে। এর পাশেই রয়েছে কেএমডিএ নির্মিত একটি শৌচাগার। সেটির অবস্থাও খারাপ। কেএমডিএ-কে শৌচাগারটি পুনর্নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিতালী সাহা বলেন, “ঘাটের এক দিকে খোলা জায়গায় ফুল ও প্রতিমা রাখা হয়। সৌন্দর্যায়নের পক্ষে এটি ক্ষতিকারক। এটি বন্দরের এলাকা। তবে, পুরসভাও এই আবর্জনা পরিষ্কার করে। এখানে সুদৃশ্য ভ্যাট নির্মাণ করলে গঙ্গার ধারের রাস্তা নোংরা হবে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ ব্যাপারে আবেদন জানাব। এ ক্ষেত্রেও বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। তত দিন বন্দর কর্তৃপক্ষকেই এই জায়গা পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছি।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.