উত্তর কলকাতা
সুরাহা কবে
বিপন্ন বাস
ঘিঞ্জি এলাকায় বহুতল আবাসনের মধ্যে বা ধারেকাছে কোথাও গজিয়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ, কোথাও বা অনুষ্ঠান বাড়ি। অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেরই দমকলের ছাড়পত্র বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র নেই। মাঝেমধ্যে রেস্তোরাঁ, অনুষ্ঠান বাড়িগুলির রান্নাঘরে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। অথচ এ নিয়ে দমকল, পুরসভা বা পর্ষদকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।
দমদম রোডের হনুমান মন্দিরের কাছে নতুন এক আবাসনের নীচে রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ। আবাসিকদের অভিযোগ, ওই রেস্তোরাঁর রান্নাঘর থেকে ধোঁয়া বেরনোর পাইপলাইন গিয়েছে আবাসনের মিটার-ঘরের ভিতর দিয়ে। পাইপটি যতটা লম্বা করার কথা ছিল, ততটা করেননি রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ। আবাসনের মিটারগুলি ওই পাইপলাইন ঘেঁষে থাকায় অনেক সময়েই পাইপ থেকে গরম তেল চুঁইয়ে পড়ে মিটার বক্সের তারে। ওই তার সব সময়ে গরম হয়ে থাকায় মাঝেমধ্যে ছোটখাটো আগুনও লেগেছে বলে জানান আবাসিকেরা। এ ছাড়া, ওই ঘরে রয়েছে জেনারেটরও। আবাসিকদের কথায়, কোনও ভাবে মিটার বক্সগুলিতে ও সেখান থেকে জেনারেটরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ওই ঘরে বিস্ফোরণও ঘটতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি দমকল, পুরসভা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জানালেও কোনও সমাধান হয়নি।
ওই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, তাঁরা অগ্নিনির্বাপণের সব রকম সুরক্ষা-বিধি মেনেই রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন। ধোঁয়া বেরনোর পাইপলাইনের মুখ মিটারঘরের থেকে অনেক উপরে। পাইপটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়। ফলে সেটি থেকে বিপদের কোনও আশঙ্কা নেই। বাসিন্দারা এই নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হচ্ছেন।
অন্য দিকে, দমদম রোডে দক্ষিণ দমদম পুরসভার নিজস্ব অনুষ্ঠানবাড়িটি রয়েছে একটি আবাসনের মধ্যে। সেটি নিয়েও একই রকম অভিযোগ ওই আবাসন এবং লাগোয়া আবাসনের বাসিন্দাদের। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হলেও কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না খাস পুরসভাই। বাড়িটির রান্নাঘর থেকে এত ধোঁয়া বেরোয় যে তাঁরা জানলাই খুলতে পারেন না। ওই আবাসনের বাসিন্দা তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের কথায়: “বিয়ে বা কোনও অনুষ্ঠান হলে ওই বাড়ির রান্নাঘরে এত ধোঁয়া হয় যে, ঘরের জানলা খুলতে পারি না। এ ছাড়া, বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে রান্নাঘরে রাখা হয় একাধিক সিলিন্ডার। অথচ রান্নাঘরের উপরেই আবাসিকদের ফ্ল্যাট। সিলিন্ডারগুলিতে কোনও ভাবে বিস্ফোরণ হলে গোটা আবাসনেই আগুন ধরে যেতে পারে।” তুষারবাবু জানান, এ নিয়ে দমকল, পুরসভা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
এ ভাবেই চিমনি থেকে তেল গড়িয়ে পড়ছে
অনুষ্ঠান বাড়িটির কর্তৃপক্ষের তরফে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান ইন-কাউন্সিল প্রবীর পাল (জনস্বাস্থ্য বিভাগ) বলেন, “অভিযোগ পেয়ে রান্নাঘর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ধোঁয়া বেরনোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর অসুবিধা থাকার কথা নয়। তবু আবাসিকেরা কোনও অভিযোগ জানালে ফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
সমস্যা সমাধানে কী করছে দমকল, পর্ষদ বা পুরসভা?
এডিজি (দমকল) দেবপ্রিয় বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগ পেলে আমরা পরিদর্শক পাঠিয়ে প্রয়োজনে নোটিস দিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রে আগের অভিযোগে যদি কাজ না হয়ে থাকে, তা হলে এলাকাবাসীরা ফের আমার কাছে অভিযোগ জানান। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এমন বেশ কিছু বিপজ্জনক বহুতল যে দমদম এলাকায় রয়েছে, তা স্বীকার করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুরসভা। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ দত্ত বলেন, “আবাসন চত্বরে রেস্তোরাঁ বা অনুষ্ঠান ভবন থেকে মাঝেমধ্যে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ পাই। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সংস্থার কাছে পর্ষদের সার্টিফিকেট আছে কি না দেখা হয়। অনেক সময়েই দেখা যায় প্রথমে ওই সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে নানা বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।” বিনয়বাবু জানান, ইনস্পেক্টর পাঠিয়ে সমাধান না হলে দু’পক্ষকে ডেকে শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা হয়। অনেক ক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সংস্থা বন্ধও করে দেওয়া হয়েছে। হনুমান মন্দিরের কাছে ওই রেস্তোরাঁ ও পুরসভার ওই অনুষ্ঠান ভবন বিষয়ে তিনিও জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার তরফে প্রবীরবাবুর বক্তব্য: “আমরি-কাণ্ডের পর থেকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হয়েছি। পুরসভায় আমাদের একটি দল রয়েছে, যারা বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে। অনেক সময়ে প্রয়োজনে ট্রেড লাইসেন্সও আটকে রাখা হয়।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.