বাস্তবের পথে হেঁটেও স্বপ্ন দেখালেন প্রেসিডেন্ট ওবামা
প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা পূরণও করলেন।
কেন ফের বারাক ওবামা, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রথম দিন মঞ্চে উঠেছিলেন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, দ্বিতীয় দিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। বৃহস্পতিবার রাতে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনের তৃতীয় ও চূড়ান্ত দিনে মঞ্চে বারাক ওবামা। যা বললেন, যে ভাবে বললেন, তাতে বেশ বোঝা গেল, এই ওবামা চার বছর আগের ওবামার থেকে আলাদা। অনেকটাই।
চার বছর আগে বারাক ওবামার বক্তৃতায় ছিল উষ্ণায়নের প্রসঙ্গ। বলেছিলেন, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে চলা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এক পরিবেশ সচেতন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই বিষয়টির উপরে তিনি বিশেষ জোর দেবেন। এ দিনের ওবামা অনেক সংযত, বাস্তববাদী। মনে করিয়ে দিলেন, তাঁর পদ্যঘেঁষা গদ্য আর দিলখোলা হাসির ফাঁকে লুকিয়ে আছে এক সোজাসাপ্টা মানুষ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম, আর যথেষ্ট পরিশ্রম করে বেড়ে ওঠা। গত বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ভোটারদের সামনে ওবামা এই ‘পরিচয়’ বার বার তুলে ধরেছিলেন। এ বার তাই সাধারণ মার্কিন ভোটারদের বাড়তি প্রত্যাশা ছিল, ওবামা তাঁদের জন্য বিশেষ কিছু ভাববেন। ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনে উপস্থিত ‘মধ্যবিত্ত’ ভোটারকে একেবারেই নিরাশ করেননি প্রেসিডেন্ট।
জাতীয় সম্মেলনে সপরিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শার্লটে। ছবি: এ এফ পি
ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা এবং দেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারা থেকে ‘উদ্ধার’ করা, গত চার বছরে ওবামা-প্রশাসনের এই দু’টিই প্রধান ‘কৃতিত্ব’। প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার শুরুতেই ছিল প্রসঙ্গ দু’টি। কিন্তু ‘কী করেছি’, তার থেকে এ দিন ওবামা অনেক বেশি জোর দিয়েছেন ‘কী করতে চাই’-এর উপর। রিপাবলিকানদের জাতীয় কনভেনশনে ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনি বার বার তোপ দাগছিলেন এই বলে যে, ওবামার কোনও ‘দিশা’ নেই। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল হতে পারলেন না। সেই সমালোচনার জবাবে ওবামা ব্যাখ্যা করলেন, ধাপে ধাপে, আগামী দশ বছরে আমেরিকার অর্থনীতিকে কী ভাবে চাঙ্গা করতে চান।
দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে রোমনি পাঁচ দফা দাওয়াই প্রস্তাব করেছিলেন। ওবামার সমাধান সূত্রেরও পাঁচটি ধাপ। এবং মজার কথা, বেশির ভাগই রোমনির সূত্রের সঙ্গে এক সুরে বাঁধা। জ্বালানি তেলের আমদানি কমানো ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছিলেন রোমনি। বলেছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করা দরকার। ওবামা-ও বললেন প্রায় একই কথা। কেমন সেই সমাধান সূত্র?
এক, ২০১৬ সালের মধ্যে দশ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান। দুই, ২০১৫-র মধ্যে আমেরিকার রফতানি দ্বিগুণ। তিন, ২০২০-র মধ্যে তেল রফতানি অর্ধেক কমানো। চার, দশ বছরে বিজ্ঞান ও অঙ্কে দশ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ। লক্ষ্য, শিক্ষার মান বাড়ানো। এবং পাঁচ, দশ বছরে আর্থিক ঘাটতি চল্লিশ হাজার কোটি ডলার কমিয়ে ফেলা।
এই ভবিষ্যৎ-মুখী ওবামা অবশ্য অতীত-চারণও করেছেন। বলেছেন, “ভুল আমরা করেছি। কিন্তু এই সব ভুল থেকেই শিক্ষাগ্রহণ করেছি।” তাঁর বিভিন্ন নীতির সমর্থনে বার বার বলেছেন, “আমি তো এক বারও বলিনি, চলার পথ মসৃণ হবে। কিন্তু তা’ বলে তো হাঁটা থামিয়ে দেওয়া যায় না!” সহযাত্রী হিসেবে আহ্বান জানিয়েছেন দেশের সাধারণ মানুষকে“আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। পরিবর্তনের স্বপ্ন। আপনারা সেই স্বপ্ন সাকার করেছিলেন। আপনারাই দেখবেন, চার বছর ধরে এতটা পথ চলার পরে সেই স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়।”
কে বলেছিল, এই ওবামা বাস্তববাদী? বাস্তবের জমিতে হেঁটেও তাঁর মতো স্বপ্নচারী ক’জন আছে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.