বিনোদনে পাইকপাড়া বেলগাছিয়া
স্মৃতিচিত্র
পার্ক ঘুরে অপর দিকে রাস্তা ইন্দ্র বিশ্বাস রোড। একটু যেতেই মনে হলো দরজায় যেন দাঁড়িয়ে আছেন শৈলজানন্দ তারাশঙ্করের অপেক্ষায়। কখন চায়ের আসর বসবে, চলবে প্রাণ খোলা আড্ডা। আর একটু এগোতেই মনে হলো খুটখাট শব্দ, যেন ছাপা মেসিন চলছে, তবে কি শনিবারের চিঠি ছাপার কাজ চলছে? ওখান থেকে বাঁ-দিক ঘুরে আবার তারাশঙ্কর অ্যাভিনিউ ধরে ঝিল-পার্কের দিকে ফিরে আসলে ডান হাতে খেলার মাঠ। ছেলেরা খেলছে মাঠ জুড়ে এই মাঠ থেকে উঠেছে কত না নামজাদা ফুটবলার। এই মাঠের নাম টালা পার্ক (জিমখানা গ্রাউন্ড)। এখানে নিয়মিত টেস্ট ম্যাচ খেলা হতো। সোজা এসে ঝিল পার্কে বসে পূর্ব দিকে তাকালেই মনের খাতায় ভেসে ওঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন অন্নদা মুন্সী।’ পাইকপাড়ার বাসিন্দা এক সহনাগরিক শান্তনু ঘোষ এমনই স্মৃতির চোখে দেখেন পাইকপাড়া-বেলগাছিয়াকে। স্মৃতি, কিন্তু স্মৃতিবিলাস নয়, স্মৃতি থেকে ইতিহাসের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন এই প্রবীণ।
আর তারই ফল বিনোদনে পাইকপাড়া বেলগাছিয়া (দে’জ)। এই অঞ্চলের বিখ্যাত, স্বল্পখ্যাত কিংবা অখ্যাত কৃতী মানুষদের সংক্ষিপ্ত জীবনী সংকলন করেছেন শান্তনু। সেই সংকলনে অনেক প্রায় না-জানা তথ্য। দীর্ঘ সেই তালিকায় নজরুল ইসলাম থেকে নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় ধরা পড়েছেন প্রায় সবাই। আছে বেশ কিছু ছবিও। কিন্তু এমন উদ্যোগের প্রেরণাটা কী? সংকলক বলছেন, “রোজ কাকভোরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে যত বৃদ্ধ দল, আমি তাদেরই এক জন। রোজ সকালে বৃদ্ধদের সঙ্গে দেখা হলে সেই পুরাতনী কথা। আমি তাদের মুখে শুনি নানান জীবন আলেখ্য যা পাইকপাড়া ও বেলগাছিয়াকে ধন্য করেছে। বাতাসে কান পেতে এখনও শোনা যায় তাঁদের কথা। রোজ ভোর হয়, আমিও রোজ বের হই। এক এক দিন এক এক দিকে এ যেন এক পুণ্যভূমি।’’ সেই পুণ্যভূমিকে আন্তরিকতায় ধরে রাখার এই উদ্যোগ নিশ্চয় প্রেরণা হয়ে জন্ম দেবে কলকাতার আরও অনেক আঞ্চলিক ইতিহাসের। এ কলকাতার মধ্যেই যে আছে অনেকগুলো কলকাতা! সঙ্গে সুকুমার রায়ের ক্যামেরায় টালাপার্কে ভোর।

উত্তম-স্মরণ
যে উত্তমকুমার ১৯৪৮-এ দৃষ্টিদান ছবিতে প্রথম দেখা দিলেন তাঁর মধ্যে উত্তমকুমার হয়ে ওঠার সম্ভাবনার প্রকাশ কতটা ছিল? উত্তমের তেমন ধারাবাহিক মূল্যায়ন আজও হয়নি। ২৪ এপ্রিল ১৯৪৮ চিত্রা সিনেমাহলে মুক্তি পেয়েছিল সেই প্রথম ছবি। তাঁর নাম তখন অরুণকুমার। পরের পাঁচ বছরে উত্তম অভিনয় করলেন ১৯টি ছবিতে কামনা, মর্যাদা, ওরে যাত্রী, সহযাত্রী, নষ্টনীড়, সঞ্জীবনী, বসু পরিবার, কার পাপে, সাড়ে চুয়াত্তর, লাখ টাকা, নবীন যাত্রা, বউঠাকুরাণীর হাট, মনের ময়ূর, ওরা থাকে ওধারে, চাঁপাডাঙার বউ, কল্যাণী, মরণের পরে, সদানন্দের মেলা, অন্নপূর্ণার মন্দির। সেই প্রথম যুগের উত্তমকে ফিরে দেখতে চেয়েছে নবপর্যায় ‘মাসিক বসুমতী’-র সাম্প্রতিক উত্তম-সংখ্যা। লিখেছেন নানা জনে। স্মৃতি থেকে মূল্যায়ন কিংবা নিছক ঘরোয়া আড্ডায় একটি সংগ্রহযোগ্য উত্তম-স্মরণ।

বাঙালি
রবীন্দ্র-কবিতার জাপানি অনুবাদ মুগ্ধ করেছিল তাঁকে। সেটা ১৯৬১। রবীন্দ্রনাথকে জানতেই সস্ত্রীক বাংলা শিখতে শুরু করেছিলেন কাজুও আজুমা। বিশ্বভারতীতে জাপানি বিভাগ শুরু হলে হাজিমে নাকামুরার আমন্ত্রণে তিনি চলে আসেন এ দেশে। সাড়ে তিন বছর জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির অধ্যাপনা করেন। জাপানে প্রকাশিত ১২ খণ্ডের রবীন্দ্র রচনাবলির অন্যতম সম্পাদক ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ জাপানে গিয়ে যাঁদের সঙ্গে পরিচিত হন, তাঁদের আত্মীয়দের নিয়ে কাজুও আজুমা তৈরি করেন ‘টেগোর অ্যাসোসিয়েশন’। বলতেন, পরজন্মে বাঙালি হয়ে জন্মাতে চাই। তাঁরই চিন্তাভাবনার ফসল এ শহরে রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন। এক বছর আগে প্রয়াত মানুষটির স্মরণেই সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি ও ভারত-জাপান সংস্কৃতি কেন্দ্র রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে আয়োজন করেছিল এক অনুষ্ঠানের। উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী, বর্তমানে টেগোর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কেইকো আজুমা (সঙ্গের ছবি) এবং জাপানের কনসাল জেনারেল মিত্শিয়ো কাওয়াগুচি। বাংলা আকাদেমি প্রকাশ করল ‘স্মরণে কাজুও আজুমা’, তাতে আছে সাক্ষাৎকার, বিস্তারিত গ্রন্থপঞ্জি।

সুখচর পঞ্চম
উপেন্দ্রকিশোরের কলমের সেই আশ্চর্য জাদু না থাকলে ছোটদের মনের গোপন রাস্তা কিছুতেই জানা যায় না। লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। এ বছর উপেন্দ্রকিশোরের সার্ধশতবর্ষ সেই উপলক্ষে এবং ছোটদের নিয়ে নাট্যশিক্ষার কাজে নিজেদের কুড়ি বছর পেরনোকে কেন্দ্র করে ছোটদের এক নাট্যমেলার আয়োজন করেছে সুখচর পঞ্চম রেপার্টরি থিয়েটার। ৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টায় শিশিরমঞ্চে। জোলা ও সাত ভূত, সাতমার পালোয়ান, ঘ্যাঁঘাসুর। সামগ্রিক পরিকল্পনা ও পরিচালনায় মলয় মিত্র, বন্ধু সহযোগী শিশু কিশোর আকাদেমি ও সন্দেশ পত্রিকা। সন্দেশ পত্রিকার ভবানীপ্রসাদ দে নাটকের ফাঁকে ফাঁকে গল্পে স্মৃতিকথায় মনে পড়িয়ে দেবেন উপেন্দ্রকিশোরকে।

মহাপথিক
১৮৮১-তে প্রেসিডেন্সি কলেজ ছেড়ে নরেন্দ্রনাথ ভর্তি হয়েছিলেন তাঁর পাড়ার কলেজ জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশনে, পরে যার নাম হয় স্কটিশ চার্চ কলেজ। স্নাতকস্তরে দর্শনের এই ছাত্র শুষ্ক জ্ঞানের রাজ্যে ঘুরে ঘুরে তখন দিশেহারা, পাশ্চাত্য দর্শন অর্থাৎ মিল, স্পেন্সার বা হেগেল-এ ডুবে আছেন। ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের স্মৃতিচারণায় জানতে পারি, ‘পাশ্চাত্য দর্শন নরেনের তীব্র আত্মিক সংকট সৃষ্টি করল। ঠিক এই সময়েই অধ্যক্ষ হেস্টি সাহেবের বক্তৃতায় প্রথম শুনলেন দক্ষিণেশ্বরের সাধুর কথা। তারপর যা ঘটল, তা ইতিহাস।’ সেই মহাপথিক প্রাক্তনীর জন্মসার্ধশতবর্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে স্কটিশ চার্চ কলেজের অর্ধশতবর্ষ প্রাচীন প্রাক্তনী সমিতি, সহায়তায় সংস্কৃতি মন্ত্রক, ভারত সরকার। আলোচনা সভা, বিতর্ক, নাটক ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উদ্যাপনের সাড়ম্বর সূচনা ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে তিনটেয়, ঐতিহাসিক কলেজ হল-এ। যোগ দেবেন বহু বিশিষ্ট প্রাক্তনী, শিক্ষাবিদ ও অন্যরা। আগামী ছ’মাস চলবে নানা অনুষ্ঠান।

শিক্ষক
সুন্দরবন অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৫০-এ ট্যাংরাখালিতে ‘বঙ্কিম সরদার কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৫ বছর সেখানে ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। পরে এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। আমৃত্যু শিক্ষকতা করেছেন। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে তাঁর বহু কৃতী ছাত্র। ১৯৩৯-এ মেধাবী ছাত্র সুধীন্দ্রনাথ যোগ দেন অনুশীলন সমিতিতে। ’৪২-এর অগস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ‘রসিদ আলি দিবসে’ পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরে যোগ দেন আরএসপি-তে। ‘দৈনিক কৃষক’-এর সহ-সম্পাদক ছিলেন। লিখেছেন ‘শতবর্ষের আলোকে রবীন্দ্রনাথ’, ‘সুতানুটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ ইত্যাদি। শ্যামপুকুর পল্লিমঙ্গল সমিতির মাধ্যমে এলাকার মানুষের সেবায় ছিলেন অক্লান্ত। সহ-সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির, সম্পাদনা করেন তাদের পত্রিকাটিও। দীর্ঘ দিন বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি ৮৭ বছর বয়সে চলে গেলেন শিক্ষাবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

পরিচালক
এক ভূত শ রুপিয়া... হেঁকে হেঁকে চলেছেন ওম পুরী এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রামে। আশির দশকের শুরু, ক্ষুধা-দারিদ্র নিয়ে বিপ্লব রায়চৌধুরীর হিন্দি ছবি ‘শোধ’ মাত করে দিয়েছিল কলকাতার দর্শককে। সেরা ছবির জন্যে সে বারেই শুধু স্বর্ণকমল পাননি বিপ্লব, এক দশক আগেই সমাজ-সংক্রান্ত তথ্যচিত্রের জন্যে পান রাষ্ট্রপতির পদক। সত্তরের মাঝামাঝি ওড়িয়া ছবি ‘চিল্কা তীরে’ও পেয়েছিল জাতীয় পুরস্কার। বহু প্রশংসিত তাঁর বাংলা ছবি ‘বর্ণ বিবর্ণ’, এ ছাড়াও উল্লেখ্য ‘স্পন্দন’ ‘আশ্রয়’ ‘অরণ্য রোদন’ ‘নির্বাচন’। সামাজিক সংকটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তথ্য ও কাহিনিচিত্র করেছেন আজীবন। ১৯৪২-এ জন্ম, ডাক্তারি পড়া ছেড়ে চলে আসেন ছবি সম্পাদনায়, সেখান থেকে পরিচালনা। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত সর্বভারতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ফিল্মোৎসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কর্মসূত্রে, এই সূত্রেই মার্কিন মুলুকে। স্বাধীনতা দিবসের আগেই চলে গেলেন নিঃশব্দে। নন্দন ও ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ-এর উদ্যোগে স্মরণ অনুষ্ঠান ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৬টায়, দেখানো হবে ‘শোধ’।

মননমিলন
মানুষটি এমনিতেই স্বল্পভাষী। তাও যেন তাঁর কথা বলা-না-বলার মধ্যে লুকিয়ে থাকত কিছু রহস্য, কিছু ভাবনা। নয়তো সমস্ত জীবন অখণ্ড ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেও, হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে লড়েও কেন তিনি ১৯৪৭-এর সেই মাসগুলিতে তিনি নীরব, নিরুত্তর? সে কি কেবলই হতাশায়? হতাশাই যদি হয়, তবে স্বাধীনতার পর কেনই-বা মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে রাষ্ট্রের অত ঘনিষ্ঠ মহলে দেখা গেল? ঐতিহাসিক মুশিরুল হাসানের কথা থেকে বেরিয়ে এল এই সব প্রশ্ন। আজাদকে নিয়ে তিন দিন (২৮-৩০ অগস্ট) ঐতিহাসিকরা একত্র হয়ে আলাপ-আলোচনা চালালেন এই শহরে, যে শহরে মৌলানা আজাদ তাঁর জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। আলোচনার বিষয়বস্তু, ফর নেশন অ্যান্ড ইসলাম: মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইন রিট্রসপেক্ট। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আমেরিকা এবং, অবশ্যই, ভারতের অন্যান্য শহর থেকে এসেছিলেন প্রায় সমস্ত আজাদ-গবেষক। মুশিরুল হাসান, মুজাফ্ফর আলম, ইরফান হাবিব, আনিসুজ্জামানের মতো চেনা পণ্ডিতদের তো কখনও কখনও কলকাতায় দেখা যায়, কিন্তু দেখা যায় কি লাহৌরের সাংবাদিক-সম্পাদক, ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আজম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকদের? দেখা যায় কি করাচির আবুল কালাম আজাদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর আবু সলমন শাজাহানপুরীর মতো বর্ষীয়ান অভ্যাগতকে যিনি উর্দু ভাষাতেই ইতিহাস লিখেছেন সারা জীবন? আজাদ সম্পাদিত পত্রিকা ‘আল-হিলাল’-এর শতবর্ষ উপলক্ষে এমন একটি সম্পন্ন মননমিলন ঘটল মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজ-এর সৌজন্যে।

ব্যতিক্রমী
স্বাধীনতার বছরে জন্ম তাঁর। আর এই মুহূর্তে যে উপন্যাসটি লেখায় ব্যস্ত তিনি তার পটভূমি ১৯৪৬-এর নোয়াখালি দাঙ্গা, পাকিস্তানের শত্রু সম্পত্তি আইন এবং সেই সময়। তিনি সেলিনা হোসেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই লেখিকা একটি সম্মান নিতে এখন এই কলকাতায়। অনেক ছোটগল্প, প্রবন্ধের পাশাপাশি তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ৩৩। কিন্তু একের পরে এক উপন্যাস কেবল লেখার জন্যই লেখা নয়, বিষয়ে বার বার সেলিনা খুঁজেছেন নতুন কিছু। বাংলা সাহিত্যে চর্যাপদ নিয়ে মাত্র দুটি উপন্যাসের একটি তাঁরই লেখা, ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ (আর একটি শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাহ্ন’)। ব্যতিক্রমী এই লেখিকা জানালেন, ’৪৬-’৪৭ নিয়ে তাঁর নতুন উপন্যাসের নাম ‘সোনালি ডুমুর’।

কাজের কাজ
কলকাতায় ট্যাক্সি ধরা আর গেছোদাদার দেখা পাওয়ার গল্প মোটামুটি এক ট্যাক্সিওয়ালা কোথায় যাবেন, সেটা জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে তিনি কোথায় কোথায় যাবেন না। মুশকিল হল, ট্যাক্সি ধরার সময় তাড়া থাকে, অত জটিল হিসেব কষা হয়ে ওঠে না। ট্যাক্সিচালকরাও প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হন! তবে, এ বার প্রত্যাখ্যাত হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন ফেসবুকেই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের পাতায়। আর এতে কাজও হচ্ছে। সম্প্রতি এক রেডিয়ো জকি প্রত্যাখ্যাত হয়ে ট্যাক্সির নম্বরসহ অভিযোগ করেছিলেন। সেই চালককে গ্রেফতার করে, তার ছবি তুলে ফেসবুকেই আপলোড করেছে পুলিশ। প্রকল্পটি যাঁর মাথা থেকে বেরিয়েছে, কলকাতাবাসী নিশ্চয়ই তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।

আবার অয়দিপউস
নিয়মিত মঞ্চাভিনয় শুরু ’৮৬ থেকে। ‘নান্দীকার’ প্রযোজিত ‘ফুটবল’ নাটকে। তার পর থেকে একে একে ‘গোত্রহীন’, ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’, ‘কাছের মানুষ’, ‘রুদ্ধসঙ্গীত’-সহ অসংখ্য প্রযোজনায়। বর্তমান প্রজন্মের এই অভিনেতার অভিনীত নাটকগুলি নিয়ে এই শহরে হয়েছে নাট্যোৎসব। তবু, নির্মীয়মাণ এক নাট্যের নামভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে আবেগ আর উত্তেজনা চাপা দিতে পারছেন না এই নট। দেবশঙ্কর হালদার (সঙ্গের ছবি) বলছেন, “যে চরিত্রে স্বয়ং শম্ভু মিত্র অভিনয় করতেন, সেই চরিত্র আবার করতে গেলে ভয় থাকেই। তবু, এক জন অভিনেতাকে তো মাঝে মাঝে অসম্ভব এক সীমায় পৌঁছতে হয়! পায়ের পাতায় ভর দিয়ে, গোড়ালি উঁচু করে চরিত্রের সেই উচ্চতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করতে হয়! আমি সেই চেষ্টাই করছি মাত্র।”
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল পাঁচ-পাঁচটি দশক। ’৬২-র ১২ জুন নিউ এম্পায়ার প্রেক্ষাগৃহে প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘রাজা অয়দিপাউস’। ‘বহুরূপী’র প্রযোজনায় সাড়া জাগানো সেই নাটকের নামভূমিকায় ছিলেন শম্ভু মিত্র। সেই নাটকই আবার মঞ্চস্থ হতে চলেছে ‘দৃশ্যপট’-এর প্রযোজনায়, ‘অয়দিপউস’। নির্দেশনায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য (‘আগুনের বর্ণমালা’র নির্দেশক)। সোফোক্লিস-এর সেই নাটকটিকে নব আঙ্গিকে লিখেছেন হর ভট্টাচার্য। সঙ্গীত পরিচালনায় রয়েছেন ময়ূখ-মৈনাক। আলো জয় সেনের। ‘অয়দিপউস’ চরিত্রে এ বার দেবশঙ্কর। যিনি বলছেন, ‘‘এই চরিত্রের সঙ্গে বোঝাপড়া করার একটা আলাদা রহস্য আছে।’’ ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সেই ‘রহস্য’ উন্মোচনের অপেক্ষায় অ্যাকাডেমি মঞ্চ।


সঙ্গীতসাধক
বড় বড় রাজদরবার থেকে ডাক আসতো কিন্তু তিনি অনড় ‘প্রথম অন্নদাতা’কে ছেড়ে যাবেন না, মাইহারের মহারাজা ব্রিজনাথ সিংহের দরবারেই জীবন কাটাবেন। ১৯৭২-এর ৬ সেপ্টেম্বর মাইহারেই শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। জীবন্ত কিংবদন্তি আলাউদ্দিন খাঁ সর্বজনীন ‘বাবা’, সেনিয়া-মাইহার ঘরানার জনক। এক দিকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি লোকসঙ্গীতে গভীর টান, অন্য দিকে পাশ্চাত্য যন্ত্রসঙ্গীতে তালিম আপাতদৃষ্টিতে যা চরম বৈপরীত্য বাবা আলাউদ্দিনের কাছে তা সুরের অন্য রূপ। সারা জীবন নিমগ্ন থেকেছেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় যন্ত্রসঙ্গীতের সাধনায়, গড়ে তুলেছেন ‘মাইহার ব্যান্ড’। তাঁর তালিমে গড়ে উঠেছেন তিমিরবরণ, রবিশঙ্কর, আলি আকবর, অন্নপূর্ণা দেবী, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, বাহাদুর খাঁ-র মতো শিল্পী। কুমিল্লায় জন্ম, আট বছর বয়সে গান শেখার জন্য প্রথম পালিয়ে আসেন কলকাতায়। বাড়ির লোকজন ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও মন বসে না, আবার চলে আসেন। ‘নুলো গোপাল’-এর কাছে ধ্রুপদ, স্বামী বিবেকানন্দের ভাই অমৃতলাল (হাবু) দত্তর কাছে পাশ্চাত্য যন্ত্রসঙ্গীত শিক্ষা। ধ্রুপদ শেখার সময় দুপুরে খাওয়া বলতে ছিল পাথুরিয়াঘাটা রাজবাড়িতে কাঙালিভোজন, রাতে কলের জল। বাবা আলাউদ্দিনের উৎসাহেই ১৯৩৮-এ প্রথম সেতার-সরোদের যুগ্মবাদন শোনান রবিশঙ্কর-আলি আকবর। এ বছর সেই যুগলবন্দির ৭৫ বছর। এই অভিনবত্বকে স্মরণ করে তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সহায়তায় বাবা আলাউদ্দিন স্মারক সমিতির নিবেদনে থাকছে পার্থ বসু-পার্থসারথির সেতার-সরোদের যুগ্মবাদন। অন্নপূর্ণা দেবীর শিষ্য পণ্ডিত নিত্যানন্দ হলদিপুরী শোনাবেন বাঁশি, কণ্ঠসঙ্গীতে রাগেশ্রী দাস, বাবার প্রয়াণ দিবস ৬ সেপ্টেম্বর, রবীন্দ্র সদনে, বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.