খেলাধুলা ৩...
কিডনি বেচে আর পরের অলিম্পিকে যেতে হবে না
তাপস পালের ‘সাহেব’ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছোটবেলায় নিজের একটা কিডনি বিক্রি করে বন্দুক কেনার কথা ভেবেছিলেন!
বিশ্বকাপ থেকে পদক জিতে সর্বোচ্চ স্কোর করেছিলেন। তা সত্ত্বেও কমনওয়েলথ গেমস থেকে ‘অন্যায়ভাবে’ বাদ দেওয়ার পর তাঁর জেদ বেড়ে গিয়েছিল এতটাই যে কুড়ি দিন পরে মিউনিখে গিয়ে বিশ্বকাপে সেরা স্কোর করেছিলেন!
রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাক শ্যুটিং রেঞ্জের ৭৪ মিনিট বদলে দিয়েছে বত্রিশ বছরের সেই জেদি যুবকের জীবন!
যে দিন অলিম্পিকে রওনা দিচ্ছেন সে দিন একটা ক্যামেরাও তাক করেনি তাঁকে। রাইফেল, গুলি আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে উঠে পড়েছিলেন লন্ডনগামী বিমানে!
গলি থেকে রাজপথ শব্দগুলো বহু ব্যবহারে ক্লিশে! অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা তা-ও বহু ব্যবহৃত! নাগেরবাজার অমর পল্লির নিবেদিতা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে যখন জয়দীপ কর্মকার ফিরলেন, তখন তাঁকে ঘিরে মিডিয়া আর মানুষের ভিড় এবং উন্মাদনা দেখে মনে হচ্ছিল‘নায়ক হয়ে ফেরা’ হয়তো একেই বলে।
ঠিক তখন কেমন মনে হচ্ছিল বাংলার খেলাধুলার নতুন আইকনের? “আমার কেমন যেন একটা ঘোর লাগছিল। আমি সেলিব্রিটি এটা ভাবি না। তা আমাকে নিয়ে যাই হোক। আমার সবথেকে বড় আনন্দ অলিম্পিক গেমস নিয়ে মানুষের সচেতনতা এবং আগ্রহ বাড়াতে পেরেছি বলে,” বলছিলেন জয়দীপ। মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই ‘অর্জুন’ ঘোষিত হয়েছেন। কিন্তু কোনও উত্তাপ নেই। বরং অদ্ভুত একটা জেদ। “লক্ষ্য না থাকলে মানুষ ফুরিয়ে যায়। আমি আরও পাঁচটা অলিম্পিকে যাব।”
রাইফেল শ্যুটিং বাংলার আম-জনতার খেলা নয়। পদকের দৌলতে অভিনব বিন্দ্রা বা গগন নারঙ্গের নাম কেউ কেউ জানলেও ক্রিকেট, ফুটবলের মতো শ্যুটিং নিয়ে মাথা ঘামানো এখনও রপ্ত করেনি বাঙালি। দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হয় শ্যুটিং রেঞ্জ। সেই খেলা থেকেই উঠে এসেছেন জয়দীপ। অলিম্পিক গেমসে নিখাদ বঙ্গসন্তানের তকমা নিয়ে যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন তা স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে পেরেছেন শুধু একজন--লিয়েন্ডার পেজ। টেনিসে ব্যক্তিগত ব্রোঞ্জ জিতেছেন অলিম্পিকে।
৫০ মিটার রাইফেল প্রোনে জয়দীপ পদক পাননি ঠিকই। কিন্তু ঠোঁট ও কাপের ফারাকে ধরতে পারেননি লিয়েন্ডারকে। চতুর্থ হয়ে ফিরেছেন। রাইফেল নিয়ে জয়দীপের যুদ্ধ আর হাতের তালু থেকে পদক পিছলে যাওয়া উসকে দিয়েছে ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিংহ এবং ‘স্প্রিন্ট কুইন’ পি টি ঊষার স্মৃতিকে। দু’জনের ভাগ্যই মোক্ষম সময়ে সঙ্গী হয়নি।
“দেখুন পদক পাইনি বলে কোনও দুঃখ নেই আমার। নিজেকে ট্র্যাজিক নায়ক বলেও মনে করি না। স্লোভানিয়ার রেজমন্ড দেবেভেক বলে যে লোকটা ব্রোঞ্জ জিতেছিল এটা ছিল ওর আট নম্বর অলিম্পিক। আর আমি তো সবে...” একেবারেই হতাশ শোনায় না জয়দীপের গলা। পাশে ছেলে আদ্রিয়ান। বাবার মতোই ঝকঝকে। সে-ও তো হাতে তুলে নিয়েছে রাইফেল।
একই খেলায় নামলেও অভিনব বিন্দ্রা নন জয়দীপ। বৈভব বা প্রাচুর্য তাঁর সঙ্গী ছিল না কোনও দিনও। অভিনবর মতো বাবা শ্যুটিং রেঞ্জও বানিয়ে দেননি বাড়িতে। বরং ‘বড়লোকের খেলা’ খেলতে গিয়ে অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর ছেলেকে হাত পাততে হয়েছে নানা জায়গায়। কখনও সরকারের কাছে। কখনও যেতে হয়েছে শুভানুধ্যায়ীদের দরজায়। “আমার জীবনের সাফল্য যদি কিছু এসে থাকে তা হলে রসায়ন একটাই, হার না মানা। আমি হারব না। সব সময় জিতব। জেদ, আবেগ, ক্ষোভ, রাগ মানুষের যে ‘বদ’ গুণগুলো থাকে সব আমি ব্যয় করেছি পদক জেতার জন্য। সে জন্য একবার আবেগের বশে ভেবেছিলাম কিডনি বেচে একটা রাইফেল কিনব,” বলছিলেন বাংলার খেলাধুলোর নতুন নায়ক।
সামাজিক কিছু সমস্যার জন্য নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছেন বহু দিন। পাঁচ ঘণ্টা, সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ট্রেনিং করার পর সঙ্গী করেন আইপ্যাডকে। ফেসবুক, ট্যুইটারে সবসময় সজীব রাখেন নিজেকে। যেখানে যান, যখন যান ছবি পাঠিয়ে জানিয়ে দেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে। সাফল্য, ব্যর্থতা, ক্ষোভ ওগরানোর জায়গাও ওটাই। অলিম্পিকে চতুর্থ হওয়ার পর লিখেছিলেন, “আমি ব্যর্থ হইনি। লন্ডন অলিম্পিক থেকে আমি নিয়ে যাচ্ছি সাফল্যের রসদ। তাতে ভর করেই নামতে চাই পরের এশিয়াডে, অলিম্পিকে...।”
রসদ থেকে আগামীর জয়-দীপ কতটা জ্বলে ওঠেন এখন তার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলার খেলাধুলার জগৎ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.