ক্ষোভ জঙ্গলমহলে
টাকা দেবে কে, জটে থমকে সাইকেল বিলি
বাম সরকারের আমলেই জঙ্গলমহলের তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। ‘পরিবর্তন’-এর সরকার ক্ষমতায় এসে জঙ্গলমহলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্রীকে সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। সেই মতো অনেকেই সাইকেল পেয়েছে। কিন্তু অনেকেই এখনও তা পায়নি। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ জঙ্গলমহলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের একাংশ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক থেকে ছাত্রীদের একাংশ সাইকেল চেয়ে আবেদন জানাচ্ছেন বিডিও এবং জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরকে। তবু সাইকেল মেলেনি। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, সাইকেল না এলে দেব কোত্থেকে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিক শান্তনু দাস বলেন, “আমরা অনেক দিন আগেই রাজ্য সরকারের কাছে সাইকেলের জন্য আবেদন জানিয়েছি। তা পেলেই স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া হবে।”
মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া জঙ্গলমহলের বেশিরভাগ ছাত্রীই হেঁটে স্কুলে যেত। এ ছাড়া উপায়-ই বা কী? যে সব হতদরিদ্র মানুষের দু’বেলা অন্নসংস্থান করতেই হিমসিম খেতে হয়, তাঁদের কাছে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোটাই বিলাসিতা। আবার স্কুলে যাওয়ার জন্য সাইকেল! টাকা কোথায়! সমস্যা সমাধানে গরিব তফসিলি উপজাতির নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল বাম সরকার। ২০১০ সালের এপ্রিলে ঝাঁ চকচকে একগুচ্ছ সাইকেল হাজির হয়ে গিয়েছিল জেলায়। সেই সময় ৪ হাজার ৭১৬ জনকে সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। বছর খানেকের মধ্যে রাজ্যে সরকার পাল্টায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, শুধু তফসিলি উপজাতি নয়, জঙ্গলমহলের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সব ছাত্রীকেই সাইকেল দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তালিকা তৈরি শুরু হয়। গত বছরের নভেম্বরে সেই তালিকাও পাঠানো হয়। দেখা যায়, সব ছাত্রীকে দিতে হলে আরও ২৬ হাজার ২০৪টি সাইকেল প্রয়োজন (বাম সরকারের দেওয়া ৪৭১৬টি বাদ দিয়ে)। প্রথম দফায় ১৮ হাজার ১২৭টি সাইকেল পাঠানো হয়। তার মধ্যে ১৮ হাজার ৬৮টি সাইকেল বিলি করা হয়েছে। শুধু সাঁকরাইল ব্লকে ৫৫টি সাইকেল পড়ে রয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও একটি স্কুলে সাইকেল দিতে হলে কমপক্ষে দেড়শো সাইকেল প্রয়োজন। তার পরিবর্তে কোনও ৫০-৫৫ জনকে সাইকেল দিয়ে দিলে অন্য ছাত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাকে কেন্দ্র করে জোরদার ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা যেতে পারে। তাই দ্বিতীয় ধাপের সাইকেল না আসা পর্যন্ত তা বিলি করা যায়নি।
আরও ৮ হাজার ৭৭টি সাইকেলের প্রয়োজন বলে গত ফেব্রুয়ারিতে আবেদন জানানো হয়েছিল রাজ্য সরকারের কাছে। তারপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার তদ্বির করা হয়। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরও হয়েছে। কিন্তু নতুন সাইকেল আর আসেনি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোন দফতর সাইকেল কেনার টাকা দেবে তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়াতেই এই অবস্থা। বাম আমলে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকেই সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন সাইকেলের সংখ্যা ছিল খুবই কম। পরবর্তীকালে সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর রাজি হয়নি। তারা শিক্ষা দফতরকে টাকা দেওয়ার কথা বলে। স্কুল শিক্ষা দফতর এই খাতে কোনও অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। দুই দফতরের চিঠি চালাচালি চলতে থাকে।
এ বার রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর ও স্কুল শিক্ষা দফতর যৌথ ভাবে বাকি সাইকেলের অর্থ দেবে। কিন্তু কবে নতুন সাইকেলে চড়ে স্কুলে যেতে পারবেন সুমিত্রা শিট, তুলসী হাঁসদা, অপর্ণা মুর্মু, জয়িতা রাণারা? গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের প্রায় দেড়শো ছাত্রী এবং বিনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীতি আকুল সম্প্রতি লিখিত ভাবে প্রশাসনের কাছে এ কথাই জানতে চেয়েছেন। সুনীতিবাবু বলেন, “গত এপ্রিলে লালগড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে আমাদের স্কুলের ১৮ জনকে সাইকেল দেন। সাইকেল পাওয়ার কথা স্কুলের পাঁচশোরও বেশি ছাত্রীর। বাকিরা এখনও সাইকেল পায়নি।” দ্রুত সমস্যার সমাধান চাইছেন সকলেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.