পূজারার তৈরি বেদিতে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন স্পিনাররা
ডানকান ফ্লেচারের নোটবুকে শুক্রবার সকালে কোন চারটে জিজ্ঞাসা ছিল, আন্দাজ করা বোধহয় শক্ত নয়।
চেতেশ্বর পূজারার ডাবল সেঞ্চুরি হবে?
ধোনিকে ঘিরে যাবতীয় বিতর্কের জবাব দেবে তাঁর ব্যাট ?
দেশের মাঠে কিউয়িদের কুড়ি উইকেট তুলতে অশ্বিন-ওঝা ঠিক কতটা সক্ষম?
জাহির খান ফেব্রুয়ারির অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত টানতে পারবেন? ফিটনেস কোন জায়গায়?
শেষোক্ত জিজ্ঞাসাটি বাদ দিলে প্রথম তিনটে প্রশ্নের উত্তর বেশ সন্তোষজনক। সে ঠিক আছে। সব সময় ‘যা চাইব, তাই পাব’-র কাহিনি লেখা যায়? বরং হায়দরাবাদ টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখা ভাল। আকাশ থেকে যদি অঝোরে না ঝরে (আজ যার ভাল সম্ভাবনা ছিল), অঘটনের অভিশাপে যদি না ডুবতে হয়, তা হলে হায়দরাবাদের রানওয়ে থেকে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে একটাই ফ্লাইট বেঙ্গালুরু রওনা হচ্ছে। যার ককপিটে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ঘাড়ের উপর রানের এভারেস্ট নিয়ে নিউজিল্যান্ড এখনই হাঁসফাঁস, দ্বিতীয় দিন শেষে স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে ১০৬-৫। অতি বড় কিউয়ি-সমর্থকও নিশ্চয়ই এর পর নিজের দেশের উপর বাজি ধরবেন না, এবং উপ্পলের সন্ধেয় শুধু একটাই জল্পনা। টেস্ট শেষ হতে কত দিন? পাঁচ? চার? নাকি কালই?
মধ্যমণি অশ্বিন এবং দ্বিতীয় দিনই উৎসবের মেজাজ। উপ্পল স্টেডিয়ামের শুক্রবার। ছবি: এপি
স্পিন খেলা নিয়ে সাহেবদের দুর্নাম বরাবরের। উপমহাদেশের উইকেটে অজিরাই ভারতকে সমঝে চলে, নিউজিল্যান্ড তো কোন ছার! ব্ল্যাক ক্যাপসরা তাই স্পিনের ফাঁদে যে খাবি খাবে, তাতে আর আশ্চর্য কী? বিশেষজ্ঞরা বারবার ‘ওয়ার্নিং’ দিচ্ছিলেন, দু’টো দিন পেরোতে দিলেই নিজমূর্তি ধরবে উপ্পলের পিচ। ধরলও। আর এ-ও বোঝা গেল, দু’বছর আগে এই পিচ নিয়ে হরভজনের গালাগালে ঠিক কতটা কাজ হয়েছে! ভাল রকমই নয়, বল এ বার ঘুরছে লাট্টুর মতো। সঙ্গে জুড়েছে বাউন্স। অশ্বিনের এক-একটা বল টেলর-উইলিয়ামসনদের কাঁধ সমান লাফাল। শেষ বেলায় ধোনির মুখে চওড়া হাসি। দেখে কে বলবে, এই লোকটাই আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে উপ্পলের পিচ নিয়ে বলে গিয়েছেন, “এখানে একটা টেস্ট খেলেছিলাম... আট দিন লাগত যেটা শেষ হতে!”
আট দিন কেন, এ বার চার দিনও লাগে কি না সন্দেহ। আর এই পিচে যে অধিনায়কের হাতে অশ্বিন-ওঝা, তিনি তো হাসবেনই। জাহির খান সম্ভবত এখনও পুরো ফিট নন। তাঁর পেস বা সুইং কোনও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে দশ ওভারের মধ্যে দুই স্পিনার আনলেন ধোনি। ওখানেই কিস্তিমাত। পাঁচটা উইকেট স্পিনাররাই তুলেছেন। ওঝা দিয়ে শুরু, ওঝা দিয়ে শেষ। মাঝের তিনটে অশ্বিন। দেশের ক্রিকেটমহল বলে, ‘টার্বুনেটর’-এর মতো বৈচিত্র নেই অশ্বিনের। কিন্তু বলের সঙ্গে বুদ্ধি মেশাতে পারেন। আজকের তিনটের পিছনেও শিল্পের চেয়েও বুদ্ধির প্রয়োগ বেশি। প্রথম বলটাই লেগ-মিডলে ফেলে গুপ্টিলকে বাধ্য করলেন ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগের হাতে ক্যাচ তুলতে। রস টেলরের ‘মৃত্যু’-ও একই ভাবে। ফ্লিন আবার ওঝাকে দু’টো বাউন্ডারি মেরে ভেবেছিলেন, অশ্বিনের উপরেও সুইপের ওষুধ কাজ দেবে। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ফ্লিন সেই চেষ্টাও করলেন, কিন্তু বল সোজা প্যাডে ধাক্কা খেল। পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। ওঝার হাতে ম্যাকালাম-বধ শুরুতেই সাঙ্গ। এবং ৬০ রানের মধ্যে কিউয়ি ব্যাটিংয়ের কোমর পর্যন্ত সাফ। শুধু লেজটুকু পড়ে! প্রেসবক্সে ততক্ষণে ও দেশের সাংবাদিকদের গলা শুকিয়ে কাঠ। কমেন্ট্রি বক্সে সৌরভ উত্তেজিত, “রায়না, এখন রায়নাকেও আনুক ধোনি।” শুধু রায়না কেন, ‘ক্যাপ্টেন কুল’ একে-একে সহবাগ-সচিনকেও নামিয়ে দিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। উইকেটসংখ্যা বাড়েনি, কিন্তু পরে অশ্বিনকে বলতে শোনা গেল, “ওদের ফলো অন করানো ছাড়া কিছু ভাবছি না।”
ভাবা উচিতও নয়। কিন্তু ভাবনার এই প্ল্যাটফর্মই তৈরি হত না পূজারার বেদি না থাকলে। তাঁর ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি। কিন্তু ১৫৯ রানের ইনিংসটারও কম মর্যাদা নেই। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড পেসাররা এই দু’দিনের মধ্যে আজই সেরা বোলিং করছিলেন। সেখানে ধন্য ছেলের অধ্যবসায়। এগারো ঘণ্টা ক্রিজে পড়ে। এক-আধ বার ‘বিট’ হওয়া ছাড়া বিশেষ ভুল নেই। এমনিতেই পূজারার ব্যাটিংয়ে দ্রাবিড়-ঘরানার ছাপ যথেষ্ট। কর্নাটকীর মতোই একটু ঝুঁকে স্টান্স নেন। একই ভঙ্গিতে বল ছাড়েন। আবার ‘গুরু’র কথা শোনেনও মন দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দ্রাবিড়ই তাঁকে বলেছিলেন, ‘পুল’ মারা ছাড়তে। প্রায় ছেড়েওছেন। এক-আধটা যা বেরোল, ব্যাটের ব্লেড সব ক্ষেত্রেই মাটির সঙ্গে সামন্তরাল। ইচ্ছেমতো কাট, ড্রাইভ, গ্লান্স করেছেন। অধিনায়কের সঙ্গে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। ধোনির ব্যাটিং অবশ্যই বিপরীতধর্মী। তিনি নিজেকে এবং অশ্বিনকে (৩৭) আর একটু সময় দিলে, আরও ভাল জায়গায় থাকতে পারত টিম। ধোনি সেঞ্চুরি পাননি, ইনিংসে খুঁতও আছে, তবু তাঁকে নিয়ে এই ডামাডোলের বাজারে ৭৩-ও খারাপ নয়। সমালোচকদের মুখ ক’দিনের জন্য হলেও বন্ধ থাকবে।
সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল? পূজারাদের কাজ তাঁরা করেছেন। তৈরি মঞ্চে ফুল ফোটানোর বাকি দায়িত্ব অশ্বিনদের। টেলররা এখনও ৩৩২ রানে পিছিয়ে, হাতে তিনটে দিন, সহবাগরাও নিশ্চয়ই আর ব্যাট করতে চাইবেন না। বাইরের সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে দেখা গেল, ইতিমধ্যেই রবিবারের রিটার্ন ফ্লাইটের সূচি নিয়ে বসে পড়ছেন! ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ডের হিসেব সত্যিই বোধহয় শুরু হয়ে গেল!

স্কোর বোর্ড
ভারত
প্রথম ইনিংস ৪৩৮ (আগের দিন ৩০৭-৫)
পূজারা ক ফ্র্যাঙ্কলিন বো পটেল ১৫৯
ধোনি ক ব্রেসওয়েল বো পটেল ৭৩
অশ্বিন স্টাঃ ফান উইক বো পটেল ৩৭
জাহির ক ফান উইক বো বোল্ট ০
ওঝা নঃআঃ ৪
উমেশ রান আউট ৪
অতিরিক্ত ১২
মোট ৪৩৮।
পতন: ৪৯, ৭৭, ১২৫, ২৫০, ২৬০, ৩৮৭, ৪১১, ৪১৪, ৪৩০।
বোলিং: মার্টিন ২৭-৪-৭৬-১, বোল্ট ২৭-৪-৯৩-৩, ব্রেসওয়েল ১৯.১-১-৮৮-১,
ফ্র্যাঙ্কলিন ১৩.২-০-৪০-০, পটেল ৪১-৯-১০০-৪, উইলিয়ামসন ৭-০-৩১-০।

নিউজিল্যান্ড
প্রথম ইনিংস ১০৬-৫
ম্যাকালাম ক কোহলি বো ওঝা ২২
গুপ্টিল ক কোহলি বো অশ্বিন ২
উইলিয়ামসন ক সহবাগ বো ওঝা ৩২
টেলর ক কোহলি বো অশ্বিন ২
ফ্লিন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১৬
ফ্র্যাঙ্কলিন ব্যাটিং ৩১
ফান উইক ব্যাটিং ০
অতিরিক্ত
মোট ১০৬-৫।
পতন: ২৫, ২৯, ৩৫, ৫৫, ৯৯।
বোলিং: জাহির ৫-১-২০-০, উমেশ ৩-০-৪-০, ওঝা ১৫-৪-৩৫-২,
অশ্বিন ১৪-৩-৩০-৩, সহবাগ ২-০-৪-০, রায়না ২-০-৬-০, সচিন ১-০-৬-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.