বিএসএফ বলীয়ান ‘পুলিশি’
ক্ষমতায়, মানবে না ক্ষুব্ধ রাজ্য

নসিটিসি’র পরে বিএসএফ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে রাজ্যগুলির সঙ্গে ফের সংঘাতের সম্ভাবনা জাগিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে রাজ্য পুলিশ-এলাকায় ঢুকে গ্রেফতারি-তল্লাশির অধিকার দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কার্যত রাজ্যগুলিকে ‘উপেক্ষা করে’ এবং ‘ঘুরপথে’ নেওয়া এই সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুব্ধ। মহাকরণ একে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপের প্রয়াস হিসেবেই দেখছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্রের ঘোষণা, “আমরা এটা মানব না।”
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ‘খাতিরে’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ বিভিন্ন এজেন্সিকে বাড়তি ক্ষমতাদান ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন নতুন নয়। এর আগে কিছু রাজ্যের আপত্তির মুখে ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টার (এনসিটিসি) গঠনের পরিকল্পনায় দিল্লিকে পিছু হটতে হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলে বিএসএফ’কে বাড়তি ক্ষমতায় বলীয়ান করার লক্ষ্যে বিএসএফ-আইনে একটি সংশোধনীও আনতে চায় কেন্দ্র, যার বক্তব্য ছিল, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ বিএসএফ যে কোনও স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে পারবে।
কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধিতায় সে প্রয়াসও ফলপ্রসূ হয়নি। তাই দিল্লি এ বার কোনও রকম আগাম আলোচনা ছাড়াই বিএসএফের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিয়েছে বলে রাজ্যের অভিযোগ। আর তা করা হয়েছে ১৯৬৭ সালের পাসপোর্ট-আইন সংশোধনের মাধ্যমে। যার সুবাদে ‘নাগরিকত্ব যাচাইয়ের’ কারণ দেখিয়ে সীমান্ত ছাড়িয়ে রাজ্যের এলাকার মধ্যে বেশ কিছুটা ঢুকে মানুষকে গ্রেফতার, তল্লাশি ও সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার অধিকার পাচ্ছেন সীমান্তরক্ষীরা। অর্থাৎ আগে পাসপোর্ট-আইনে কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, এখন পাকিস্তান-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ এবং নেপাল-ভুটান সীমান্তে মোতায়েন সীমা সুরক্ষা বল (এসএসবি)-কে সেই অধিকার দেওয়া হল বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা।
স্বভাবতই দিল্লির এ হেন ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যারপরনাই ক্ষুব্ধ। মহাকরণের খবর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতিক্রমে এ ব্যাপারে নিজেদের ‘কঠোর অবস্থান’ প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। দফতরের এক মুখপাত্রের কথায়, “আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তাতে কেন্দ্রের খবরদারি মানা হবে না।’’
নতুন ব্যবস্থায় ঠিক কী অতিরিক্ত ক্ষমতা বিএসএফ পাচ্ছে?
দ্বন্দ্ব-ধারা
১৬ এপ্রিল, ২০১২
বিএসএফ-আইন সংশোধনের কেন্দ্রীয়
প্রস্তাবে তীব্র আপত্তি মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে।
৫ মে
প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে মমতা-সহ বিভিন্ন
মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতায় আটকে গেল এনসিটিসি।
১১ জুন
রাজ্যগুলিকে অন্ধকারে রেখে পাসপোর্ট-আইন
পাল্টে বিএসএফ-কে বাড়তি ক্ষমতা।
সরকারি-সূত্রের খবর: গত ১১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের পাসপোর্ট আইনের ১৩ ও ১৪ নম্বর ধারায় যে সংশোধনী এনেছে, তাতে বলা হয়েছে: মণিপুর-ত্রিপুরা-মিজোরাম-নাগাল্যান্ড-মেঘালয় ও জম্মু-কাশ্মীরের যে কোনও জায়গায় বিএসএফ মনে করলে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে, বাজেয়াপ্ত করতে পারবে সন্দেহজনক যে কোনও সামগ্রী। গুজরাতের সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটার ও রাজস্থানে সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত সীমান্তরক্ষীদের ওই অধিকার থাকবে। পঞ্জাব, অসম ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বিএসএফের ‘বাড়তি ক্ষমতা’টি সীমাবদ্ধ থাকছে সীমান্ত থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
এমন ব্যবস্থার দরকার পড়ল কেন?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি: অনুপ্রবেশ, নকল টাকা, গরু, মাদক ও নারী-শিশুপাচার ঠেকাতেই বিএসএফের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অরাজক’ অবস্থা রোধে সীমান্তরক্ষীদের এই ‘আইনি বর্ম’ দেওয়াটা জরুরি ছিল বলে দিল্লি মনে করছে। বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় এডিজি বংশীধর শর্মার মন্তব্য, “এতে সীমান্তরক্ষীদের সুবিধাই হবে। আইনি কর্তৃত্ব নিয়ে তাঁরা কাজ করতে পারবেন।”
মহাকরণের কর্তারা অবশ্য এমনটা ভাবছেন না। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার অভিযোগ, “এটা পরিষ্কার রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ। আমাদের মতামত না-নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজ্যের আপত্তি দিল্লিকে জানানো হবে।” রাজ্যের প্রশাসনিক মহলের আশঙ্কা, ১৫ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে গ্রেফতারের ক্ষমতা থাকার অর্থ, সীমান্ত-লাগোয়া ব্লকগুলোর প্রায় অর্ধেক এলাকায় এ বার বিএসএফ গিয়ে ধরপাকড় চালাতে পারবে। তাতে পুলিশের সঙ্গে সীমান্তরক্ষীদের কাজকর্মে ‘ঠোক্কর’ লাগার সম্ভাবনা প্রায় প্রতি পদে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রের এনসিটিসি-প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সংস্থার অফিসারেরা দেশের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে রাজ্য পুলিশের সাহায্য ছাড়াই যে কোনও মামলার তদন্ত, প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে পারবেন। এর বিরোধিতায় সবচেয়ে সরব মমতা। এমনকী অ-কংগ্রেসি এবং অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদেরও তিনি পাশে পেয়েছেন। তাঁদের মিলিত আপত্তিতে উদ্যোগটি আপাতত মুলতুবি। একই ভাবে বিএসএফ-আইনের সংশোধনী সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কথা মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বেশ কিছু রাজ্য পশ্চিমবঙ্গকে সমর্থন করায় সেটিও কার্যকর করা যায়নি।
এবং ওই কারণেই এখন ঘুরপথে পাসপোর্ট-আইন পাল্টে বিএসএফের এক্তিয়ার বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। ফলে তৈরি হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের আরও একটা ক্ষেত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.