বেআইনি কয়লা খনন চলছেই
ধসল বন্ধ খাদানের চাল, উদ্ধার ৩ দেহ
বেআইনি ভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে খনির চাল ধসে মৃত্যু হল তিন জনের। সালানপুর এরিয়ার ডাবোড়ে একটি খোলামুখ খনির এই ঘটনায় মোট কত জন কয়লা কাটতে ঢুকে চাপা পড়েছেন, সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত ভাবে কিছু জানাতে পারেনি।
শুক্রবার সকালে এই ঘটনার পরে ফের খনি এলাকায় অবৈধ খননের অভিযোগে সরব হয়েছে নানা রাজনৈতিক দল ও এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, অবৈধ খনন প্রায় বন্ধ রয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও তা যে সত্য নয়, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। যদিও পুলিশের দাবি, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেটি অবৈধ খাদান নয়, ইসিএলেরই একটি বন্ধ রাখা খনি। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ও বলেন, “খনিটিতে এখন জল ঢুকেছে। তাই উৎপাদন বন্ধ। জল বের করার কাজ চলছে। তবে সেটির একাংশে একটি বেসরকারি ঠিকা সংস্থাকে খননের বরাত দেওয়া হয়েছে। শুনেছি, সেই অংশেই এই ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথাবার্তা শুরু হয়েছে।”
সালানপুরের ডাবোড়ে দুর্ঘটনাস্থল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালে ডাবোড় খোলামুখ খনির চাল থেকে প্রায় ২৫ ফুটের একটি চাঁই খসে পড়ে। সেই সময়ে খনির ভিতরে কয়েক জন কয়লা কাটছিলেন। ওই খোলামুখ খনির ১০ নম্বর পিটে একাধিক অবৈধ খাদান তৈরি করে কয়েক মাস ধরেই অবৈধ খনন চলছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার সকালেও সেখানে কয়েক জন কয়লা কাটতে যান। হঠাৎই চাল ধসে পড়ার শব্দ পান আশপাশের বাসিন্দারা। কী ঘটেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তাঁদের। ঘটনার পরেই আশপাশের খাদানগুলিতে যাঁরা কয়লা কাটছিলেন তাঁরা বেরিয়ে ছুট লাগান। এলাকাবাসীই ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।
কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। হাজির হন ইসিএলের লোকজনও। এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খনিটির আশপাশের বেশ কিছু অংশের মাটি বসে গিয়েছে ও ফাটল ধরেছে। উদ্ধারকাজে হাত লাগায় পুলিশ। তিনটি দেহ বের করে আনা সম্ভব হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম মোহন বাউরি (৪৫), পূর্ণচন্দ্র বাউরি (৪০) ও অজয় বাউরি (৪৫)। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, দুর্ঘটনার সময়ে ভিতরে কত জন ছিলেন তা পরিষ্কার নয়। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই খাদানে এ দিন সকালে প্রায় দশ জন কয়লা কাটতে নেমেছিলেন।
গত সেপ্টেম্বরে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট চালু হওয়ার পর থেকে পুলিশের তরফে বারবার দাবি করা হয়েছে, এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবার প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই দাবি যে পুরোপুরি সত্য নয়, নানা ঘটনায় তা সামনে এসেছে। সালানপুর থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় অবৈধ খনন চলছে বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। চালু খনির চারপাশে কয়েক হাজার গর্ত (র্যাট হোল) তৈরি করে অবৈধ খনন চলছে।
এই ঘটনার পরে বেআইনি কয়লা কারবার বন্ধে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে নানা রাজনৈতিক দল। বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, “সালানপুর থানার নজরদারিতে গাফিলতি তো আছেই। তা না হলে এই দুর্ঘটনা কি ঘটত?” প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য তথা সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদারের বক্তব্য, “কয়লা চুরি বন্ধ থাকলে ওই খাদানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল কী করে? প্রশাসন দাবি করছে বটে, তবে কয়লা চুরি পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে, এটা ঠিক নয়।” সালানপুর ব্লকের তৃণমূল নেতা পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “কমিশনারেট গঠনের পরে কয়লা চুরি কিছুটা কমেছে। কিন্তু সালানপুর থানার নজরদারির অভাবে যে এখনও কিছু অবৈধ খাদান চলছে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।” সিপিএমের বারাবনি জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রশাসন এখনও ঠিক মতো নজর দিচ্ছে না বলেই এমন ঘটেছে।”
এ দিনের ঘটনায় অবশ্য অবৈধ খাদানের রমরমার অভিযোগ মানতে নারাজ এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রতবাবু। তাঁর দাবি, এই খনিটি ইসিএলের চালু খনি। বর্ষার জল ঢুকে যাওয়ায় ইসিএল আপাতত কিছু দিন উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। খনির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। উৎপাদন বন্ধ থাকার সুযোগে কিছু বহিরাগত শুক্রবার সকালে ওই খনিতে কয়লা কাটতে নামে। সুব্রতবাবু বলেন, “নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ এড়িয়ে তারা কী ভাবে ঢুকল, আমরা তা তদন্ত করে দেখছি।”

ছবি: শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.