সিংহাসনের তৃতীয় দাবিদার তিনি। এখন থেকেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, হবু রাজার কাপড় কোথায়?
রাজকুমার হ্যারির নগ্ন ছবি সামনে আসার পর থেকে ব্রিটেনে হইহই কাণ্ড। দেশের কোনও কাগজ যাতে সে ছবি না ছাপে, তার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে রাজপরিবার। বাকিংহামের পক্ষে ঘটনাটা কেলেঙ্কারির, নিঃসন্দেহে। হ্যারির সরকারি মুখপাত্র ক্ল্যারেন্স হাউস এমনিতে বিশেষ মুখ খোলেন না। তিনিও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, “ছবিগুলো আসলই।” ক্ল্যারেন্স তা-ও অনুরোধ করেছেন, সংবাদমাধ্যম যেন হ্যারির ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে সম্মান করে!
কিন্তু ঘটনা হল, এলিজাবেথের ২৭ বছরের নাতিটি নিজেই মেপেজুপে চলার ধারেননি! এই ঘটনায় তিনি নিজে মর্মাহত, এমন কোনও খবরও মেলেনি। বিমানচালকের প্রশিক্ষণ শেষ করে বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে সপ্তাহান্তে লাস ভেগাস গিয়েছিলেন। ‘ছুটির মেজাজে’ ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসেছেন! যে মার্কিন সাইটটি হ্যারির ছবিগুলো প্রকাশ করেছে গত কাল, তারা জানাচ্ছে, বিলাসবহুল হোটেলের পুলসাইড পানশালায় বন্ধুদের নিয়ে আমোদ করছিলেন হ্যারি। সেখানে এক দল লাস্যময়ী যুবতীর সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। হ্যারি সকলকে নিজের ভিআইপি স্যুটে আমন্ত্রণ জানান। সেখানেই বেশ উদ্দাম আবহে ‘স্ট্রিপ বিলিয়ার্ড’ খেলায় মেতেছিলেন তাঁরা! |
খেলার ফলাফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নগ্ন অবস্থায় হ্যারি দু’হাত দিয়ে যৌনাঙ্গ ঢেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর গলায় শুধু একটা নেকলেস, হাতে ঘড়ি। তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে আড়াল খুঁজছেন আর এক নগ্ন রহস্যময়ী। অন্য একটি ছবিতে আবার ওই নগ্ন মহিলার পিছন থেকে উঁকি মারছেন হ্যারি নিজে। কোথাও আবার পিছন থেকে আলিঙ্গন করছেন এক যুবতীকে। ক্যামেরার সামনে উন্মুক্ত হ্যারির পশ্চাদ্দেশ! ওই যুবতীরা কারা, পরিচয় এখনও জানা যায়নি। অনুমান করা হচ্ছে, ওঁদেরই কেউ মোবাইলে ছবি তুলে রেখেছিলেন!
হ্যারির কীর্তি সুতরাং নিরাপত্তার প্রশ্নটাও উস্কে দিচ্ছে! ব্রিটিশ জনতাই সেই প্রশ্ন তুলছে! করদাতাদের টাকায় রাজপরিবারের জন্য যে বিপুলায়তন নিরাপত্তা বাহিনী রাখা হয়, তার ফাঁক গলে হ্যারির ঘরের ভিতর থেকে ছবি উঠল আর সে ছবি মার্কিন সাইটে উঠেও গেল এটা কী করে হল? তবে হ্যারিকে যাঁরা জানেন, হ্যারির সেই ব্যক্তিগত রক্ষীরা জনান্তিকে বলছেন, হ্যারিকে সামলে রাখা সম্ভব নয়! রাজপুত্তুর অঘটন ঘটাবেনই!
১৪ বছর বয়সে পানশালায় হাজির হয়েছিলেন! হ্যারির বিতর্কে জড়ানোর ইতিহাস দীর্ঘ। ২০০৫ সালে একটি ফ্যান্সি ড্রেস পার্টিতে হ্যারি হাজির হয়েছিলেন নাৎসি পোশাকে। সেই ছবি ছাপার পরে রাজকুমার অবশ্য বলেন, “খুব বোকামো করে ফেলেছি।” তার দু’বছর পরেই প্রাক্তন বান্ধবী চেলসি ডেভির সঙ্গে প্রকাশ্যে চুম্বনরত অবস্থায় হ্যারির ছবি প্রকাশিত হয়। সে বার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলেন রাজকুমার। ২০০৯ সালে একটি ওয়েবসাইটে ভিডিওয় দেখা যায়, সেনাবাহিনীর এশীয় এক সহকর্মীকে ‘পাকি ফ্রেন্ড’ বলে সম্বোধন করছেন হ্যারি। পরে দাবি করেন, কারও সম্মানহানি করতে তিনি ওই সম্বোধন করেননি। তাতে যদিও চিঁড়ে ভেজেনি। তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
এই লাস ভেগাস সফরেও হ্যারি তাঁর ‘রঙিন’ জীবনের স্বাক্ষর ইতিমধ্যেই রেখেছিলেন! লন্ডন অলিম্পিকে সোনাজয়ী মার্কিন সাঁতারু রায়ান লখটের সঙ্গে পার্টি করে বেড়াচ্ছেন তিনি এমন অনেক ছবিই ছাপা হয়েছে ব্রিটিশ খবরের কাগজগুলোতে। হোটেলের পুল পার্টিতে বন্ধু লখটের সঙ্গে রাত তিনটের সময় জিনস পরে খালি গায়ে সাঁতারের লড়াইয়ে নেমে খোশমেজাজে দেখা যাচ্ছে রাজকুমারকে। কিন্তু এ বার বিলিয়ার্ডের আসর অতীতের সব ‘কীর্তি’কে ম্লান করে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে প্রিন্স উইলিয়ামের উল্টো মেরুতে দাঁড়িয়ে থাকা ‘পার্টি প্রিন্স’ হ্যারির ভাবমূর্তি
উঁচু করতে কম চেষ্টা করেনি বাকিংহাম। হ্যারি নানা রকম দানধ্যানের কাজ করেন বলে ফলাও করে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রচারিত করা হয়েছে। রানি এলিজাবেথের ৭৫ বছর উদ্যাপনের সময় রাজপরিবারের বিভিন্ন সদস্য এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা গিয়েছে রাজকুমার হ্যারিকে। লন্ডন অলিম্পিকের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রানির সঙ্গে রাখা হয়েছিল হ্যারিকেই। কিন্তু এ বারের ঘটনায় সেই সব রকম চেষ্টাতেই জল ঢেলে দিলেন হ্যারি।
ব্রিটেন জুড়ে এখন একটাই আলোচ্য, হ্যারির কাণ্ডকারখানা! তার সবটাই যে ভয়ানক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, তা-ও অবশ্য নয়। ভিক্টোরীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী অনেকের চোখ কপালে উঠেছে ঠিকই। হবু সামরিক অফিসার হিসেবেও হ্যারির আরও দায়িত্ববান হওয়া উচিত ছিল, অনেকে বলেছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, রাজপুত্র বলে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত জীবন থাকবে না? হোটেলের ঘরে হ্যারি কী করছেন না করছেন, তাতে কী এসে গেল? অনেকেরই বক্তব্য, হ্যারি বয়সের ধর্ম পালন করেছেন। আর পাঁচটা যুবকের মতোই আচরণ করেছেন। এতে তাঁর ‘টিআরপি’ বাড়বে বই কমবে না! |