|
|
|
|
তমালিকার বিরুদ্ধে তদন্তে স্থগিতাদেশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রথমে লক্ষ্মণ শেঠের জামিন। তার পরে তাঁর মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত রায়। এ বার লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকা পণ্ডা শেঠের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ। পর পর তিন বার শেঠ-দম্পতিকে নিয়ে আদালতে ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার তথা প্রধান শাসক দল।
হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিছু দিন আগে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ, যার চেয়ারম্যান এখন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী) পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে। অভিযোগ করা হয়, চেয়ারপার্সন নিয়ম না-মেনে উন্নয়ন নিগমের জমি অন্য ব্যক্তিকে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তমালিকাদেবী কলকাতা হাইকোর্টে এফআইআর খারিজের আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত জানান, ওই মামলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত পুলিশ তদন্ত করতে পারবে না। এই নির্দেশের ফলে হলদিয়া বিষয়ক তিনটি মামলাতেই আদালতের প্রাথমিক নির্দেশ সাম্প্রতিক কালে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে গেল। সদ্যই হলদিয়া পুরভোটে জিতে পুরসভা দখলে রেখেছে সিপিএম। ফের চেয়ারপার্সন হয়েছেন তমালিকাদেবীই। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে লক্ষ্মণবাবুর জামিন মঞ্জুর এবং তাঁর মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। সেই ঘটনার পুলিশি তদন্তে এ দিনের স্থগিতাদেশ তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এই ঘটনাপ্রবাহে আপাতত ‘স্বস্তি’তে। চেয়ারপার্সন তমালিকাদেবী সকাল থেকে পুরভবনেই ছিলেন। আদালতের নির্দেশ জানতে পেরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এমনই ধারণা ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এইচডিএ-র সিইও-কে ভুল পথে পরিচালনা করায় তিনি এফআইআর করেছিলেন।” তাঁকে কে ভুল পথে পরিচালিত করল, তা নির্দিষ্ট ভাবে না-বললেও তমালিকাদেবীর মতে, “হলদিয়া পুরভোটে জনগণের রায় মানতে যাঁদের সমস্যা হয়েছে, তাঁরাই পুরসভার কাজকর্ম ব্যাহত করতে এই এফআইআর করেছেন।”
নাম না-করলেও তমালিকাদেবীর ইঙ্গিত অবশ্যই তমলুকের তৃণমূল সাংসদ তথা এইচডিএ চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারীর প্রতি। শুভেন্দু অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, ‘আইন বহির্ভূত ভাবে’ই ওই জমি ‘লিজ’ দিয়েছিল পুরসভা। তিনি বলেন, “মূল মামলাকে বজায় রেখে ফৌজদারি ব্যবস্থায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এইচডিএ-র পক্ষ থেকে আমাদের আইনজীবীদের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এইচডিএ-র মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক পি উলগানাথনের বক্তব্য, “হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
শাসক দলের ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র চেষ্টা হিসাবেই হলদিয়ার এই ঘটনাকে দেখাতে চাইছে সিপিএম। সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি, ‘অন্যায়’ ভাবে তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। চেয়ারপার্সন তার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করে ‘বিচার’ পেয়েছেন। তাঁর কথায়, “সরকার, নির্বাচিত পৌরসংস্থা ভোট করতে দিচ্ছে না বা ভোটে নির্বাচিত হলে কাজ করতে দিচ্ছে না। অভিযুক্তদের বিনা বিচারে খালাস করে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা চাই, তমালিকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করা হোক।” লক্ষ্মণবাবুর প্রতিক্রিয়া, “বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে। মানুষের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে এইচডিএ ও পুরসভার একযোগে কাজ করা উচিত। শাসক দলেরও সহিষ্ণুতা থাকা চাই। জনগণের রায় মানতে হবে।” |
|
|
|
|
|