তলিয়ে গেলেন যুবক
গাড়ুই উপচে ভাসল রেলপাড়
টানা ১৫ ঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ল আসানসোলের রেলপাড় এলাকা। বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় প্রায় একশোটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ুই নদীর জলের তোড়ে তলিয়ে গিয়েছেন এক যুবক। উদ্ধারকাজে নামে দমকল। জলবন্দি মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মহকুমা প্রশাসন। নদীতে তলিয়ে যাওয়া যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছে প্রশাসন। এ দিন বিকেলে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “মাইথন ও আসানসোল সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে গাড়ুই নদীতে জলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় জল জমেছে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ১০টা নাগাদ তার বৃষ্টির জোর বাড়ে। ফলে আসানসোলের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া গাড়ুই নদী ফুলে ওঠে। রাত ১২টা নাগাদ নদী ভয়াল হয়ে ওঠে বলে জানান বাসিন্দারা। নদীবক্ষ থেকে প্রায় ৫০ ফুট উঁচতে জল বইতে শুরু করে। গাড়ুই নদীর দু’পাশে রয়েছে পুরসভার ২৫ থেকে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেলপাড় এলাকা। নদীর জল দু’কূল ছাপিয়ে প্লাবিত হয় রামকৃষ্ণ ডাঙা, কাল্লা, কানাই মহল্লা, মুদসুদ্দি মহল্লা, পঞ্জাবি মহল্লা, ঝিঝরি মহল্লা-সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল। খবর পেয়ে দমকল পৌঁছয়। জলমগ্ন এলাকাগুলির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়। তাঁদের খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়। আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া বলেন, “দু’টি পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।”
শুক্রবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা তখনও স্বাভাবিক হয়নি। কাল্লা সেতুর উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। নদীর দু’পাশ তখনও জলমগ্ন। প্রায় একশোটি পরিবারের হাজার খানেক বাসিন্দা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পঞ্জাবি মহল্লার কালে সিংহ নামে এক যুবক গাড়ুই নদীতে তলিয়ে গিয়েছেন। তাঁর মা বাবলি কউর বলেন, “এ দিন সকালে ছেলে কাজে যাওয়ার জন্য বেরোয়। জল দেখার জন্য নদীর কাছে গিয়েছিল। হঠাৎই কাদা মাটিতে পা হড়কে নদীতে পড়ে যায়। জলের তোড়ে ভেসে যায়।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই যুবকই পরিবারের একমাত্র উপায়ী।
স্থানীয় আবাদ বস্তি এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সরফরাজ জানান, স্থানীয় সিদ্দিক সেতুর কাছে তাঁর দোকান রয়েছে। বৃষ্টির তোড়ে সেটি ভেঙে পড়েছে। পুরানি মসজিদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ ইকবালের কথায়, “ঈদ উপলক্ষে আমরা বাজার করেছিলাম। ঘরে জল ঢুকে সে সব নষ্ট হয়েগিয়েছে।”
শুক্রবার সকালে ওই এলাকায় যান আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। প্রায় তিন ঘণ্টা তিনি এলাকা ঘুরে দেখেন ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাংসদ অভিযোগ করেন, রেলপাড় অঞ্চলের নিকাশি ব্যবস্থা ভাল নয়। গাড়ুই নদীও নিয়মিত সংস্কার হয় না। ময়লা জমে নদী প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। তার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর জল ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সাংসদের অভিযোগ, “আমি দেখছি, গাড়ুই নদীর গতিপথ আটকে এলাকায় ব্যঙের ছাতার মতো অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে। ফলে নদীর জল ঠিক মতো বইতে পারছে না। একটু বেশি বৃষ্টি হলেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।” এ সব অভিযোগের কথা এ দিন তিনি আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক ও আসানসোলের মহকুমাশাসককে। মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া জানান, তাঁর এ সব জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। এ দিন জলমগ্ন বাসিন্দাদের খোঁজ নিতে যান পুরসভার মেয়র পারিষদ অনির্বাণ দাস। পুরসভা ক্ষতিগ্রস্তদের সব রকম সাহায্য করবে বলে তাঁর আশ্বাস।
ছবি: শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.