‘হিন্দুস্থানের হকি টিম
কামব্যাক করতে জানে’

প্রশ্ন: আপনাদের টিভিতে দেখা গেল না কেন? ডাকেনি?

ভরত: কে বলল ডাকেনি? আমরাও ছিলাম। হয়তো পিছনে বলে দেখা যায়নি।

প্র: রাত্তিরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন?
ভরত: নিশ্চয়ই যাব। আমাদেরও নেমন্তন্ন আছে।

প্র: নিছক অলিম্পিক প্রতিযোগী আর অলিম্পিক পদকজয়ীদের মধ্যে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া তফাত দেখে কী মনে হচ্ছে?
ভরত: (নিস্তেজ গলা) মনে হচ্ছে আমাদেরও দিন ফিরে আসবে। আমি জানি দেশের মানুষ আমাদের সম্পর্কে খুব নিরাশ হয়ে রয়েছেন। কিন্তু এই অবস্থায় ওঁদের সমর্থন আমাদের চাই। একটা টিম যখন ভাল খেলতে থাকে তখন তো তার সমর্থন দরকার হয় না। সাপোর্ট দরকার হয় এই সব সময়।

প্র: যাদের নিয়ে আজ সংবর্ধনা হল, এদের ইভেন্ট দেখতে গিয়েছিলেন?
ভরত: গিয়েছিলাম টেনিস টিমের খেলা দেখতে। আর বোল্টের একশো মিটার দৌড়। বাকিগুলো দেখা হয়ে ওঠেনি।

প্র: হকি টিম যে ভাবে দেশকে ডুবিয়েছে তাতে সবাই খুব ক্ষুব্ধ।
ভরত: জানি। আমরা প্লেয়াররা আলোচনাও করেছি। গোটা দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। মাফি মাঙ্গ রহা হু।ঁ একটু সময় দিন আমাদের। ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আছে। কে বলতে পারে সেখানেই আমরা দেশবাসীর মুখে হাসি ফিরিয়ে আনব না। পাক্কা প্রতিজ্ঞা করছি।

প্র: কিন্তু আপনাদের স্পনসরই তো চলে যাচ্ছে। সহারা। কাগজে বেরিয়েছে টিমের পারফরম্যান্সে তারা বীতশ্রদ্ধ।
ভরত: জানি না তো। এই প্রথম শুনলাম। একটা কথাই শুধু বলি। দুঃসময় সব টিমের আসে। ভারতীয় ক্রিকেট টিম যখন ২০০৭ বিশ্বকাপে অমন জঘন্য রেজাল্ট করেছিল, তার পরেও কিন্তু মিডিয়া বা বোর্ড টিমটার পাশে ছিল। দেখুন সেই টিমটাই তো আবার ফিরে এসে চার বছর পর বিশ্বকাপ জিতল।

প্র: মিডিয়া মোটেও পাশে ছিল না। বরং এমন সমালোচনা হয় যে কোচ গ্রেগ চ্যাপেলকে সরে যেতে হয়। এত বড় বিপর্যয়ের পর সাধারণ ভাবে কোচ বা ক্যাপ্টেন যে কোনও একজনকে সরানো হয়। এক্ষেত্রে কে সরবে? আপনি?
ভরত: আমি এই অবস্থায় অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাই না। ছেড়ে দেওয়ার প্ররোচনা যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় গোটা টিমটা ছিন্নভিন্ন অবস্থায়, এই সময় ক্যাপ্টেনের চলে যাওয়া মানে জাহাজ ডুবতে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেনের সবার আগে নেমে যাওয়া। আমি সেটা করতে চাই না। ছাড়ব নিশ্চয়ই, তবে জিতে।

প্র: কখনও পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে আসে যে কোচ-ক্যাপ্টেনের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে না। পরিস্থিতি তাদের যে কোনও কাউকে সরে যেতে বাধ্য করে। গরিষ্ঠ মত হল, অস্ট্রেলিয়ান কোচ মাইকেল নবসকে অবিলম্বে সরানো উচিত। গ্রেগ চ্যাপেলের মতো তিনিও কুখ্যাত হয়ে পড়েছেন হকি সার্কিটে।
ভরত: কোচকে সরানো হলে খুব ভুল হবে। কোচ যথেষ্ট ঠিকঠাক প্ল্যানিংই করেছিলেন। মাঠে নেমে আমরা যদি সেটা ফলো করতে না পারি, তার দোষ ওঁর হবে কেন? কোচ এসে তো গোল বাঁচাবেন না। কোচ এসে গোল করবেনও না। দায়িত্ব ছিল আমাদের। আমরা করতে পারিনি।

প্র: শেষ ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে কোচ কী বললেন?
ভরত: বললেন, লন্ডনে যা হয়েছে ভুলে যাও। পরিশ্রম বাড়িয়ে দাও। পরের টুর্নামেন্টগুলোতে ভাল খেলতেই হবে।

প্র: আনন্দবাজারে ভেস পেজ লিখেছেন কোচ বেশি প্র্যাক্টিস করানোয় বিপর্যয় হয়েছে।
ভরত: অলিম্পিকের আগের পারফরম্যান্সগুলো দেখলেই বোঝা যাবে, এই ধারণায় যথেষ্ট যুক্তি নেই। গত পাঁচ-ছ’মাস আমরা বেশ ভাল খেলছিলাম। আজলান শাহতে আমরা ব্রোঞ্জ পাই। চ্যাম্পিয়ন্স চ্যালেঞ্জ হকির ফাইনাল গিয়েছিলাম। অলিম্পিকে আট বছর পর যোগ্যতা অর্জন করি। কী করে বলতে পারেন নবসের কোচিংয়ে কাজ হয়নি? ফিটনেসও যথেষ্ট ভাল ছিল। কোচ ফিটনেস নিয়ে প্রচুর খেটেছিলেন।

প্র: চক দে দেখেছেন?
ভরত: হ্যাঁ দেখেছি।

প্র: আপনাদের অস্ট্রেলিয়ান কোচের সঙ্গে কি কবীর খানের মিল আছে?
ভরত: ফিল্ম, ফিল্মই হয়। কিন্তু সিনেমার মতো নবসও খুব বলিষ্ঠ। অকপট। টিমের জন্য কোনও কম্প্রোমাইজ করেন না। সৎ মানুষ।

প্র: কিন্তু ক্যাপ্টেন হয়েও আপনাকেই তো সব ম্যাচে খেলানো হয়নি?
ভরত: তার পিছনে আছে রোটেশন সিস্টেম। এখন সেই দিন চলে গিয়েছে যে সেরা এগারো জনই খেলবে। এখন সেরা ষোলো জনের দিন। অ্যাস্ট্রোটার্ফে ফিটনেসটা এত ইর্ম্পট্যান্ট যে ষোলো জনকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে হয়।

প্র: এই তো গেল আপনার মনোভাব। আপনার টিম কী মনে করে? হকির এই অন্ধকারের দিন কি আদৌ কাটবে?
ভরত: মনে করা নয় ওরা বিশ্বাস করে যা ভুল করেছে তা থেকে দ্রুত শিখবে। মনে রাখবেন ’৮২-র এশিয়ান গেমস ফাইনালে আমরা পাকিস্তানের কাছে ১-৭ হেরেছিলাম। আবার আমরাই কমনওয়েলথে দিল্লির মাঠে সেই পাকিস্তানকে সাত গোল দিয়েছি। সুতরাং আমাদের রেকর্ডই বলে দিচ্ছে হিন্দুস্থানের হকি টিম কামব্যাক করতে জানে।

প্র: মাত্র ক’দিন আগেই সংবাদসংস্থায় আপনার মন্তব্য বেরিয়েছে—‘আমরা অলিম্পিকে খেলার যোগ্য নই’। আজ আবার অন্য কথা বলছেন। ওই মন্তব্যটা কি তখন চরম হতাশা থেকে করেছিলেন?
ভরত: আমি মোটেও মন্তব্যটা করিনি। সংবাদসংস্থার ওই রিপোর্টার বানিয়ে লিখেছেন। আমি কী বলেছিলাম, আর উনি কী লিখলেন, আকাশ-পাতাল তফাত। বাট, ঠিক আছে। পারফরম্যান্সই আবার আমাদের হয়ে কথা বলবে।

প্র: জনপ্রিয় ধারণা হল ভারতীয় হকির মোড় আর ঘুরবে না। অ্যাস্ট্রোটার্ফ এসে ভারত-পাকিস্তানের হকির দিন শেষ করে দিয়েছে।
ভরত: আমার মনে হয় না। তা হলে সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টগুলোতে আমরা এত ভাল খেললাম কী করে? এই যে লন্ডনে আমরা অত খারাপ খেলেছি তবু আম-পাবলিক কিন্তু সেই হকি টিমকেই ফলো করছিল। যতই দূরছাই করুন, আজও বিদেশে ভারতীয় হকি একটা ফ্যাক্টর। হল্যান্ডের সঙ্গে যে ভাবে আমরা ম্যাচে ফিরেছিলাম সেটা দেখে ওখানকার দর্শকরা রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা সেটা ধরে রাখতে পারিনি, আমাদের ব্যর্থতা।

প্র: প্রাক্তন অলিম্পিয়ানরা পর্যন্ত টিমের বিপর্যয়ে খুব উত্তেজিত।
ভরত: খুব স্বাভাবিক। আমরা খারাপ খেলেছি। ওঁদের হৃদয়ে দুঃখ দিয়েছি। এই দুঃখ থেকে ওঁদের সুখে ফেরত নিয়ে যাওয়াই আমাদের এখনকার মোটিভেশন।

প্র: টেকনিক্যালি অলিম্পিক বিপর্যয়ের কারণ কী?
ভরত: আমাদের একটা বিভাগও কাজ করল না। গোলকিপিং ঠিক হয়নি। ডিফেন্স ভাল ট্যাকলিং করেনি। হাফ লাইন যোগাযোগ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফরোয়ার্ডরা গোল মিস করেছে।

প্র: লন্ডন ২০১২ থেকে তা হলে কী শিখলেন?
ভরত: শিখলাম সেমিফাইনাল ম্যাচটা দেখে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানি। জার্মানরা মোটেই ভাল খেলছিল না। স্রেফ মনের জোরে ম্যাচটা বার করে নিয়ে গেল। খারাপ খেলেও কী করে ম্যাচ বার করে নিতে হয় সেটা আরও একবার দেখলাম।

প্র: অস্ট্রেলিয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে মনে করুন ভেঙে পড়া টিমকে উদ্দীপ্ত করার জন্য কাউকে বক্তা হিসেবে আনতে হবে। কাকে আনবেন হকি ড্রেসিংরুমে? সচিন তেন্ডুলকর?
ভরত: মেরি কম।

প্র: তাই?
ভরত: দু’বাচ্চার মা। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে উঠে এসে যা ফাইটিং স্পিরিট দেখিয়েছে তা অবিশ্বাস্য। আমার টিমকে ও-ই পারে অনুপ্রেরণার টগবগানিতে ভরিয়ে দিতে।

৬ ম্যাচে ২১ গোল হজম
ভারত ২ : নেদারল্যান্ডস ৩
ভারত ১ : নিউজিল্যান্ড ৩
ভারত ২ : জার্মানি ৫
ভারত ১ : কোরিয়া ৪
ভারত ০ : বেলজিয়াম ৩
ভারত ২ : দ. আফ্রিকা ৩




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.