মুকুন্দদাসের আনন্দময়ী
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শিলিগুড়ির আনন্দময়ী কালীবাড়ির নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ১৯২৪ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল থেকে আসা চারণকবি মুকুন্দ দাসের তৎপরতা ও অনুপ্রেরণাতে শিলিগুড়ি শহরে স্থাপিত হওয়া আনন্দময়ী কালীবাড়ির মাতৃপূজার পাশাপাশি তৈরি হয়েছিল ভারতের মাটি থেকে ইংরেজদের উৎখাতের জন্য স্বদেশিদের অনুশীলনের আখড়া। এই আখড়াতেই চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম সদস্য মধুসূদন দত্ত, বিজয় হোড় প্রমুখ দিনের পর দিন শারীরচর্চা, লাঠি ও ছোরা চালনার অনুশীলন করেছিলেন। ব্রিটিশ রাজত্বের ইতি টানতে বিপ্লবীদের অনেকেই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এই আনন্দময়ী কালীবাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। আইন অমান্য ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধমে দেশবাসীর মধ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনের উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য ১৯২৪ সালে বরিশাল থেকে চারণকবি মুকুন্দ দাস শিলিগুড়িতে আসেন। শিলিগুড়ি শহরের ডি আই ফান্ড হাট এলাকার একটি চালাঘরে কালীমন্দির স্থাপন সেই সময়কার উল্লেখযোগ্য ঘটনা। শিলিগুড়ির ডি আই ফান্ড-এর হাটখোলাতে টিনের চালাঘরে সাত দিন ধরে পালাগান করেছিলেন চারণকবি। এখানে কোনও কালীমন্দির নেই দেখে চারণকবি মুকুন্দ দাস মন্দির প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় মানুষদের উৎসাহিত করেন এবং পালাগান করে তার অর্থ-আয়ের সিংহভাগ টাকা মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। এ ছাড়া, এখানে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্যও অর্থ দান করেন। প্রতিদিন পালাগান গাওয়ার জন্য ৫১ টাকা করে যে পারিশ্রমিক পেতেন, তার থেকে এক টাকা রেখে বাকি টাকা মন্দির তৈরির জন্য দান করেন।
এ ছাড়া, এখানে একটি মেয়েদের স্কুল স্থাপনের জন্যও তিনি অর্থ সাহায্য করেন। ৫০১ টাকা দিয়ে কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি তৈরি করে কাশী থেকে শিলিগুড়িতে আনা হয়। ১৯২৫ সালে মাঘী সংক্রান্তিতে আনন্দময়ী কালীমায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকার জন্য এখানকার মানুষের আবেদনে সাড়া দিয়ে দ্বিতীয় দফায় চারণ কবি মুকুন্দ দাস শিলিগুড়ি আসেন। সে সময় তিনি বলিদান ও মাতৃমুক্তি নামে দুটি পালাগান পরিবেশন করেন। চারণকবিই এই মন্দিরের নামকরণ করেন শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালীমাতা মন্দির। শিলিগুড়িতে সেই আমলে প্রচুর বাঙালি বসবাস করলেও এখানে কালীমন্দির দেখতে না-পেয়ে অবাকই হয়েছিলেন চারণকবি। সেই সময় শিলিগুড়ির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তথা মহকুমা শাসক ছিলেন সাহেব। এই মন্দির স্থাপনের জন্য ডি আই ফান্ড-এর অধীন ১৬ কাঠা জমি কালীমন্দির কমিটিকে হস্তান্তর করেন তিনি। এর পরে মন্দির, অফিস ও পুরোহিতের আবাসের প্রয়োজনে আরও ৪ কাঠা জমি কেনা হয়। চারণকবি মুকুন্দ দাসের স্মৃতিবিজড়িত আনন্দময়ী কালীবাড়ি কালক্রমে জীর্ণদশাগ্রস্ত হলে সে সময়কার রেলের ইঞ্জিনিয়র তথা পরবর্তী কালে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বি সি গাঙ্গুলির সহযোগিতায় রেলের ঠিকাদার টিউমল শেঠ কালীমন্দির ১৯৫১ সালে পুনর্নির্মাণ করেন। আনন্দময়ী কালীবাড়ির পুজো শিলিগুড়ির প্রাচীনতম কালীপুজো।
এ বিভাগে ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এবিপি প্রাঃ লিমিটেড,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.