চোট লাগার ভয়ে দুই ছেলেকে বক্সিংয়ে দেবেন না মেরি কম
‘আমার পদক এ দেশে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করবে’
“ম্যায় খুশ, মেরা ফ্যামিলি খুশ, পুরা দেশ খুশ।”
যে ভাবে গতকাল মাঝরাতেও অভূতপূর্ব উন্মাদনার মাঝে জনতার কাঁধে চেপে সুশীল কুমার ও যোগেশ্বর দত্তকে বরণ করেছিল ভারত, ততটা না হলেও আজ সকালে ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেরি কমকে বরণ করে নিতে হাজার খানেক মানুষ তো ছিলই। মালায়-মালায় ঢাকা পড়ে গেলেন দেশের প্রথম অলিম্পিক পদকজয়ী মেয়ে বক্সার। অবাক মেরি কম বলেই ফেললেন “বিমানবন্দরে পা রাখতেই এ রকম সংবর্ধনা দেশবাসী আমাকে দেবেন, সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমি খুশি। আমার বাড়ির লোকেরা খুশি। গোটা দেশ আনন্দিত।”
এহেন আপ্লুত মেরি কম কয়েক ঘণ্টা পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া সংবর্ধনা সভায় মণিপুরি নাচিয়েদের সঙ্গে কোমরও দোলালেন।
বিমানবন্দরে মেরিকে নিতে এসেছিলেন তার স্বামী ওনলার কম এবং মা আখা কম। সঙ্গে হাজির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রচুর মানুষ। তাঁদের দেখেই দু’বাচ্চার মা মেরি বললেন “গোটা দেশের আনন্দ দেখে আমি, আমার বাড়ির লোকেরা সবাই অভিভূত। লন্ডনে ভারতীয় সমর্থকেরা তো বটেই অন্য দেশের দর্শকরাও আমাকে সাপোর্ট করেছেন। অলিম্পিক পদক জেতার জন্য আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তবে বিমানবন্দরেই এত মানুষ দেখে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম, দেশবাসী আমাকে কতটা ভালবাসে!”
ব্রোঞ্জ জয়ের উৎসব। নাচছেন মেরি কম।
মঙ্গলবার নয়াদিল্লির এক অনুষ্ঠানে। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া
ওনলার কম বলছিলেন “অলিম্পিকের পোডিয়ামে মেরিকে দেখে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি আমি। ও গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঘিনী। ভারতবর্ষের গর্ব। ও এখন গোটা দেশের, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তরুণ প্রজন্মের কাছে আইকন।” আখা কম তো বিমানবন্দরে এত লোক তাঁর মেয়েকে নিয়ে নাচানাচি করছে দেখে হতবাক। উত্তেজনায় গলা কাঁপছে। কথা বলার মত অবস্থায় নেই। জয়ধ্বনির মধ্যেই মেরিকে হুড খোলা জিপে তুলে গাড়ি ছুটল অশোকা হোটেলের উদ্দেশ্যে। সেখানেই কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রকের মন্ত্রী কিশোর চন্দ্র দেও সংবর্ধনা দিলেন অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ী কুকি মহিলাকে।
যদিও অলিম্পিক ফাইনালে উঠতে না পারার আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছে না মেরি কমের। “সোনাই জিততে চেয়েছিলাম লন্ডনে। তা-ই কষ্ট তো অবশ্যই পেয়েছি। সে জন্য অবসরের চিন্তা মাথায় আনছি না। আমার শরীর যদি সাহায্য করে, তা হলে চার বছর পর রিওতে নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করার পরে তবেই আমি বক্সিং গ্লাভস আলমারিতে তুলে রাখব,” সাফ বলে দিলেন বছর ঊনত্রিশের মেরি। ভারতের পুরুষ বক্সাররা লন্ডনে পদকহীন থাকাতেও কষ্ট পাচ্ছেন মেরি। “আমি আরও খুশি হতাম যদি আমাদের পুরুষ বক্সাররাও আমার মত পদক জিতত। তবে এ বার অলিম্পিকে বক্সিং বিচারকরা তাঁদের অনভিজ্ঞতার পরিচয় রেখে যে ভাবে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা অলিম্পিকের মত এত বড় টুর্নামেন্টে চলে না। এ রকম সব বিচারককে অলিম্পিকে কেন রাখা হল বুঝলাম না। ওঁদের ভুল বিচারে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হল তো ভারতীয় বক্সারদেরই।”
পাশাপাশি অলিম্পিক পদকজয়ী দেশের প্রথম মেয়ে বক্সার হতে পেরে দারুণ গর্বিত মেরি কম। বললেন, “আমার এই পদক ভারতের মেয়ে বক্সারদের উদ্বুদ্ধ করবে। আর তারা ভবিষ্যতে ভারতের মুখোজ্জ্বল করবে।” সাহসী মেরি কম পাঁচ-পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। সদ্য অলিম্পিক পদকজয়ী। তা সত্ত্বেও নিজের পাঁচ বছর বয়সি যমজ ছেলেদের ভবিষ্যতে বক্সিংয়ে আসতে দিতে চান না। কেন? “আমি ওদের মা। সন্তানদের চোট লাগুক সেটা আমি সহ্য করব কী করে বলুন তো?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.