ডানকুনি-ফুরফুরা প্রকল্প
হাত গোটাল রেল, জমি অধিগ্রহণ করবে রাজ্য
ফুরফুরা থেকে ডানকুনি রেল প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াল রেল। রাজ্য সরকারকেই এ বার ওই জমি সরাসরি অধিগ্রহণ করতে হবে। গত ৩ অগস্ট হুগলি জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে ওই জমি অধিগ্রহণ করার অনুরোধ করেছে পূর্ব রেল। রাজ্য তাতে সম্মত।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জানিয়েছিল, শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ তারা করবে না। সংশ্লিষ্ট শিল্পসংস্থাকে সরাসরি জমি নিতে হবে। এমনকী, কাটোয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত এনটিপিসি-র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও রাজ্য জমি অধিগ্রহণ করছে না। তা হলে এ ক্ষেত্রে কী করবে সরকার? শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্য সরকার অনিচ্ছুক চাষিদের জমি জোর করে নেওয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় তো আছেই। রেলের ব্যাপারটা তার মধ্যেই পড়ে।”
এনটিপিসি কি সেই ছাড়ের মধ্যে পড়ে না? পার্থবাবু এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করেননি।
২০১০ সাল নাগাদ রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হুগলির ফুরফুরা শরিফ থেকে ডানকুনি পর্যন্ত রেলপথ চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুসলিমদের ধর্মস্থান ফুরফুরার সঙ্গে হিন্দুদের ‘শৈবতীর্থ’ তারকেশ্বর ও কামারপুকুরকে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত করার ইচ্ছা তিনি বিভিন্ন মহলে বহুবার জানিয়েছেন। সেই মতো দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে ঘটা করে প্রকল্পটির উদ্বোধনও হয়। শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের কাজ। রেল কর্তৃপক্ষ জানান, এই কাজে জমি দিলে টাকা তো বটেই, রেলে চাকরিও দেওয়া হবে।
১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯.৫ কিলোমিটার এই রেল প্রকল্পে জাঙ্গিপাড়ার দিক থেকে প্রথম ৫ কিলোমিটার রেললাইন পাতার প্রয়োজনীয় জমির অনেকটাই অধিগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। চাকরিও পেয়েছেন প্রায় ১০০ জন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রেলের তরফে খানিকটা ‘ঢিলেঢালা’ ভাব দেখা যাচ্ছিল। জমি অধিগ্রহণের গতি কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শেষমেশ জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব থেকেই সরেই দাঁড়াল রেল। রেলের তরফে জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত সমস্ত ফাইলপত্র হস্তান্তর করতে চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে প্রকল্পের সব কাজ আপাতত স্তব্ধ।
কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নিল রেল? রেলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের জন্য ন্যূনতম কত পরিমাণ জমি দিলে চাকরি পাওয়া যাবে, তার কোনও হিসেব রেলের তরফে ধার্য করা হয়নি। ফলে এক-দু’কাঠা বা কিছু ক্ষেত্রে তারও কম জমি দিয়েও চাকরি দাবি করে বসছেন অনেকে। জমি দিলে চাকরি পাওয়া যাবে শুনে ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় জমি কেনাবেচার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। অনেকে রাতারাতি জমি কিনে সেই জমিই রেলকে দিতে চাইছেন। সবেমাত্র ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। প্রকল্পের জন্য মোট জমি লাগবে ২২৫ একর। রেল কর্তৃপক্ষ বুঝেছেন, এই পরিস্থিতিতে চাকরির দাবিদারের তালিকা ক্রমে দীর্ঘতর হয়ে উঠবে। প্রায় এক হাজার জন জমি দিতে চেয়ে ‘সম্মতিপত্র’ দিয়েছেন। সকলকে শেষমেশ রেলে চাকরি দেওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছেন রেল কর্তৃপক্ষের একাংশ। সেই ‘ঝঞ্ঝাট’ এড়াতেই রেল জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব রাজ্যের ‘ঘাড়ে ঠেলে’ দিল বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। হুগলির জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন বলেন, “রেলের চিঠি (সিএও/সিওএন/ল্যান্ড/এমআইএসসি/২৩৭) পেয়েছি। শীঘ্রই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।”
কিন্তু রাজ্য সরকার সরাসরি জমি নিলেই কি সব সমস্যা মিটবে? এর স্পষ্ট উত্তর নেই রেল-প্রশাসন কারও কাছে। আবার সরকার জমি নিলে চাকরি মিলবে কিনা, তা নিয়ে জমিদাতাদের মধ্যে সংশয় আছে। রেলমন্ত্রী মুকুল রায় অবশ্য বলেন, “জমিদাতাদের চাকরি-সহ যে সব সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, সবই দেবে রেল। বিশেষ প্রকল্প হিসেবে এই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে রাজ্যের পাশাপাশি রেল তো রইলই।” হুগলিরই আর এক প্রান্ত সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে ‘মুখ পুড়েছিল’ বাম সরকারের। সেই জমি আন্দোলনের ‘ফসল’ ঘরে তুলে এখন রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল। এ বার রেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে নেমে তাদের সরকার কোন পরিস্থিতিতে পড়ে, তা সময়ই বলবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.