সম্পাদকীয় ২...
আত্মশক্তির পরীক্ষা
বাইশে শ্রাবণ কি রবীন্দ্রনাথের বাসভবন বন্ধ থাকা উচিত? তাহাতে পর্যটকদের অসুবিধা নয়? বিশ্বভারতী এই ভাবে পর্যটকবৃন্দকে নিরাশ করিতে পারে কি? এইটুকুই নহে, আরও প্রশ্ন। বিশ্বভারতীর নির্দেশ, এখন হইতে পঁচিশে বৈশাখ ও বাইশে শ্রাবণ আর ছুটির দিন নহে, নিয়মিত কাজকর্ম পড়াশোনা সবই চলিবে, অনুষ্ঠানের জন্য খানিক সময় বরাদ্দ থাকিবে মাত্র। কিন্তু রবীন্দ্রপিপাসু পর্যটকরা কি তবে এই দুই পবিত্র দিনে যথেচ্ছ আশ্রমবিহার করিবেন না? ছুটি না থাকিলে রবীন্দ্রস্মৃতির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা জানানো যাইবে কি? ইত্যাদি। সংকট বটে। যে কোনও কাজের দিনকেই ছুটির দিনে পর্যবসিত করিতে যখন পশ্চিমবঙ্গের সরকার এবং সমাজ সিদ্ধহস্ত, সেই রাজ্যেই সম্পূর্ণ বিপরীত পথে হাঁটিয়া ছুটির দিনকে কাজের দিনে পরিণত করিবার সিদ্ধান্ত সাহসী বলিতে হইবে। এবং রবীন্দ্রশ্রদ্ধার খাস পরিমণ্ডলেই এমন সিদ্ধান্ত দ্বিগুণ সাহসী বলিতে হইবে। যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষেই, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক সমাগম একটি বড় সমস্যা। বিশেষত সাম্প্রতিক দোল কিংবা পৌষমেলার সময়টি মনে রাখিলে সমস্যার পরিমাণটি স্পষ্ট হয়। আবার ইহাও ঠিক, বিশ্বভারতী যে হেতু ‘যে কোনও’ বিশ্ববিদ্যালয় নহে, একটি বিশেষ আশ্রমিক আদর্শ লইয়াই ইহার যাত্রা শুরু, তাই তাহার সমস্যা আরও গভীর। কী ভাবে একটি নির্দিষ্ট সারস্বত চর্চাকেন্দ্র ও পর্যটনকেন্দ্রের নিরুপদ্রব সহাবস্থান সম্ভব, তাহা ভাবিবার বিষয়।
প্রাথমিক গঠন এবং পরবর্তী সম্প্রসারণের ইতিহাস মাথায় রাখিলে বিশ্বভারতীর উচিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং পার্শ্ববর্তী বসতি অঞ্চল লইয়া নিজেকে একটি “গেটেড কমিউনিটি” কিংবা বারিত গোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করা। ইহার মূল কথা: এই গোষ্ঠীর সদস্য ভিন্ন অপরাপর মানুষের ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার থাকিবে নিয়ন্ত্রিত। অর্থাৎ আসা-যাওয়ার পথে একটি নিয়ন্ত্রক সীমানা থাকিবে। সীমানা বলিতে কেবলই আক্ষরিক অর্থে প্রাচীর বা দেওয়াল নহে। ইহা একটি নীতির প্রশ্ন। সেই নীতি অনুযায়ী, সকলেই স্বাগত, কিন্তু সম্মতি-সাপেক্ষে। একমাত্র এই ভাবেই শান্তিনিকেতনের নিজস্ব সংস্কৃতি ধরিয়া রাখিয়াও সর্বসাধারণের গম্য স্থান হিসাবে তাহার চলমানতা অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব। রবীন্দ্রনাথের আশ্রমের মূল আদর্শটি হইতে না সরিয়া সেই আদর্শ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
একটি কথা স্পষ্ট করা জরুরি। রবীন্দ্র-আদর্শ সুরক্ষিত রাখিবার অর্থ কিন্তু আদর্শের অচলায়তন নির্মাণ নহে। রবীন্দ্রনাথের আশ্রম-কল্পনার মৌলিক ভিত্তি একটি সার্বিক, অন্তঃগ্রথিত, ধারাবাহিক এবং বিশ্বমুখী শিক্ষার ভাবনা কিন্তু সেই মৌলিক ভিত্তিটি রক্ষার জন্য কাল এবং স্থানের প্রয়োজনে চলমান রীতির জরুরি সংস্কারও জরুরি। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথ নিজেও সেই সময়োপযোগী সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিতেন। দরকারে গোটা আশ্রমসমাজের জন্য নূতন নিয়ন্ত্রণের ভাবনা জরুরি, কিংবা বিজ্ঞানের নূতন নূতন বিভাগ নির্মাণ জরুরি, নন্দনকলা ও শিল্পভাবনার নূতন ধারা চালু করা জরুরি। অর্থসংগতির দুশ্চিন্তা নাই, প্রশাসনিক সমর্থনের দুর্ভাবনা নাই। এত সুবিধা সত্ত্বেও বিশ্বভারতী যদি নিজেকে যুগ যুগ ব্যাপী একই ঠুলিতে আটকাইয়া রাখে, নিজেরই দুর্ভাগ্য তাহাতে ধাবিয়া আসিবে। ক্রমাগত আত্মপরীক্ষা ও আত্মবিবর্তনের সাহস যদি এখনও রপ্ত না হয়, দুর্ভাগ্য আটকাইবার পথ থাকিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.