প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা
পুরনো শূন্য পদে নিয়োগ না করে উত্তর ২৪ পরগনায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিল হাইকোর্ট। আগামী ২৬ অগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও মালদহের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনাতেও ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে বাকি তিন জেলায় ওই দিন পরীক্ষা হলেও উত্তর ২৪ পরগনায় কী হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় ডামাডোল চলছে দীর্ঘ দিন। ২০০৬ সালের পরে জেলায় কোনও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগই হয়নি। ২০১০ সালে জেলায় ৫ হাজারেরও বেশি শূন্য পদ ঘোষণা করে পরীক্ষার নেওয়ার পরে নিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪ হাজার পদে। সে সময়ে কেন ১,২৫৬টি শূন্য পদে নিয়োগ হল না, তা নিয়ে ওই বছরেই হাইকোর্টে মামলা করেন কিছু পরীক্ষার্থী। ওই মামলার সুরাহা হওয়ার আগেই ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন আরও কিছু শূন্য পদের জন্য ফের পরীক্ষা নেওয়া হয় উত্তর ২৪ পরগনায়। তাতে প্রায় ৪০ হাজার জন পরীক্ষা দেন। ২০১১-র মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১১-র গোটা পরীক্ষা-প্রক্রিয়াটিই বাতিল করে। ঠিক হয়, ২০১২-র ২৬ অগস্ট নতুন করে ওই ৪০ হাজার চাকরিপ্রার্থীকেই ফের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে। রাজ্য প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “২০১১ সালে যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। আমরা নতুন করে কোনও প্রার্থীকে ডাকছি না।” এ দিন ২০১০ সালের মামলার রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া জানিয়ে দেন, ২০১০-এর হিসেব মতো, উত্তর ২৪ পরগনায় শূন্য পদ পূরণ না করে নিয়োগের জন্য নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। অভিযোগকারীদের আইনজীবী সুবীর সান্যাল বলেন, “দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে আদালতে জানাতে হবে, শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও কেন ২০১০-এর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে নিয়োগ করা হয়নি।” মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ধার্য হয়েছে বলে জানান সুবীরবাবু।
এই মামলায় হাইকোর্টে আবেদনকারী এক পরীক্ষার্থী বিমান রায় বলেন, “ওই ১,২৫৬টি শূন্য পদে আমরা যারা পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তাঁদের মধ্যে থেকেই নিয়োগ করা যেত। তা না করে নতুন ভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় আমাদের আর সে সম্ভাবনা থাকছে না। চাকরি পেতে গেলে ফের পরীক্ষায় বসতে হবে। এ দিকে, প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়ার বয়সও (জেনারেল কোটায় ৪০ বছর) পেরিয়ে যাচ্ছে অনেকের!” উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। উত্তর ২৪ গরগনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন মীনা ঘোষ বলেন, “৩১ অগস্টের মধ্যে হাইকোর্ট বিষয়টি জানাতে বলেছে। এর মধ্যে আমরা সমস্ত কিছু আলোচনা করে দেখছি।”
ঘটনা হল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়াতেও প্রাথমিক শিক্ষক পদপ্রার্থীদের এই চাকরির জন্য নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। হাওড়া জেলাতে ২০১০ সালে প্রায় ১৫ হাজার জন লিখিত পরীক্ষা দেন। মৌখিক পরীক্ষা হয় ৭,৪০০ জনের। তার পরেও সংসদের বিরুদ্ধে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ণে গোলমাল হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে মামলা করেন কয়েক জন। ২০১০-এই আদালতের নির্দেশে সমস্ত লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র ফের মূল্যায়ন করে আরও ৬৩ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়। তার পরেও চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয়নি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশে তৃণমূল পরিচালিত সংসদ ফের ১৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর উত্তরপত্র খতিয়ে দেখে। শেষ পর্যন্ত সংসদ সভাপতি তালিকা বাতিল করে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেন। তার ভিত্তিতেই এ বার পরীক্ষা হচ্ছে। ২০১০-এই একই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। কিন্তু পদ্ধতিগত ‘কারচুপি’র অভিযোগে নতুন সরকার সেই পরীক্ষা-প্রক্রিয়াও বাতিল করে। ওই জেলায় নতুন করে ফের ২৬,০০৯ জন পরীক্ষার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, একাধিকবার উত্তরপত্র মূল্যায়ণ করা হয়েছে। যাঁদের ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তাঁদের বাদ দিয়ে বাকিদের নিয়োগপত্র দেওয়া হল না কেন? সংসদ সভাপতির জবাব, “বাদ দিলে তাঁরা ফের মামলা-মোকদ্দমা করে গোটা নিয়োগপ্রক্রিয়া বানচাল করতে পারতেন। তাই আমরা সবাইকে ডেকেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.