নিয়ম ভেঙে বাস অন্য লেনে ঢুকে পড়াতেই ঘটেছে দুর্ঘটনা।
বৃহস্পতিবার রাতে দু’নম্বর জাতীয় সড়কে কুলটির দামগড়িয়ায় দূরপাল্লার বাস ও পণ্য বোঝাই লরির মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তের শেষে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে কলকাতাগামী ওই বাসটি নিয়ম ভেঙে অন্য লেনে ঢুকে পড়ার জন্যই এই দুর্ঘটনা হয়েছে।” তিনি জানান, ওই সময়ে উল্টো দিকে নিজের লেন দিয়ে লোহার তার বোঝাই দশ চাকার একটি লরি কলকাতা থেকে ঝাড়খন্ডের দিকে যাচ্ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানান, লরি ও বাস দু’টিই দ্রুত গতিতে ছুটছিল। মুখোমুখি এসে পড়ায় কেউই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সংঘর্ষের পরে লরিটি সড়কের মাঝ বরাবর আড়াআড়ি ভাবে উল্টে যায়। বাসটিও ডিভাইডারের উপরে উঠে যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বাসের খালাসি চাঁদ খানের (৩৪)। গুরুতর জখম প্রায় ৩৫ জন। তাঁরা আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। রাতে হাসপাতালে যান আসানসোলের মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মা। |
ওই রাতে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন আহত যাত্রীরা। মহিলা, শিশু, পুরুষেরা আর্তনাদ করছেন। দুর্ঘটনার শব্দে ছুটে আসেন আশপাশের গ্রামের মানুষজন। তাঁরাই উদ্ধারকাজ শুরু করেন। বাস থেকে যাত্রীদের নামান তাঁরাই। পুলিশ না পৌঁছনোয় গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে সমস্যায় পড়েন এলাকাবাসী। ফলে আহতদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো যায়নি। উদ্ধারকারী যুবকদের অভিযোগ, প্রায় এক ঘণ্টা পরে পুলিশ এলেও অ্যাম্বুল্যান্স আসেনি। পুলিশের জিপেই আহতদের আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিযোগ, এর অনেক পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একটি অ্যাম্বুল্যান্স ও পুলিশের উদ্যোগে জোগাড় করা তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স। |
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেন, পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধারকাজে হাত লাগায়। আহতদের পুলিশের জিপে চাপিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারকাজের জন্য সব সময় তাঁদের একটি অ্যাম্বুল্যান্স, একটি ক্রেন ও একটি নজরদার গাড়ি মজুত থাকে। দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র তিনটি গাড়ির ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর কথা। আসানসোলের গারুই টোলপ্লাজায় মজুত থাকে এই সব গাড়ি। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে দুর্ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে পৌঁছয় জাতীয় সড়কের অ্যাম্বুল্যান্স। এলাকাবাসীর দাবি, তার অনেক আগেই উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে যায়। অথচ গারুই টোলপ্লাজা থেকে দুর্ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রজেক্ট অফিসার কৃষ্ণ মুরারি বলেন, “কেন অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছতে দেরি হল, তার বিভাগীয় তদন্ত হবে। অভিযোগের সত্যতা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দায় কার?
বৃহস্পতিবার
রাতে কুলটির দামাগড়িয়ায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান এক জন। গুরুতর চোট রয়েছে অন্তত ৩৫ জনের। (ডান দিকে তাঁদেরই দু’জন। প্রশ্ন উঠছে, রাস্তায় লেন ভেঙে যদি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায়, তার দায় নেবে কে? রাতের রাস্তায় নজরদারির দায়িত্ব কে নেবে? |