পুস্তক পরিচয় ২...
রাজা বদলেছে, বদলায়নি চাবুক
ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা, সুজাত ভদ্র। বন্দিমুক্তি কমিটি, ৫০.০০
দ্য টেরর অব ল/ ইউএপিএ অ্যান্ড দ্য মিথ অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি
। সিডিআরও, ৫০.০০
তাজমহলের প্রেক্ষাপটে এক দম্পতির ছবি সংবাদ মাধ্যমে মাঝেমধ্যে দেখা যেত। গুজরাত পুলিশ গোটা দেশের কাছে ওই দম্পতিকে বিখ্যাত করে দিয়েছে। শেখ সোহরাবুদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী কৌসর বাঈ। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন কবুল করেছিল, সাজানো সংঘর্ষে সন্ত্রাসবাদী সোহরাবুদ্দিনকে হত্যা করার দু’দিন পরে তাঁর স্ত্রীকেও মেরে পুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনা ২০০৫-এর নভেম্বরের। আর সোহরাবুদ্দিন হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তুলসীরাম প্রজাপতিকে ২০০৬-এর ২৮ ডিসেম্বর আর এক ভুয়ো সংঘর্ষে মেরে ফেলা হয় বলে গুজরাত পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
এ দেশে ভুয়ো সংঘর্ষের অজস্র অভিযোগের উল্লেখ করে মানবাধিকারের প্রেক্ষাপটে তা বিশ্লেষণ করেছেন মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র, তাঁর ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা গ্রন্থে। প্রকাশক: বন্দিমুক্তি কমিটি।
বস্তুত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণায়, বিভিন্ন দাবি-সনদে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রস্তাবে সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে নাগরিকদের জীবনের অধিকার। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র, পঞ্জাব, মণিপুর, কাশ্মীর একের পর এক নানা ঘটনা উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার প্রথমে দাবি করেছে, প্রত্যেকটি ঘটনাই প্রকৃত সংঘর্ষ। কিন্তু, যাবতীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্যান্বেষণে উন্মুখ মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনগুলি এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুজাত উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্ট এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায়ের। তুলে ধরেছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টও।
তবে এই গ্রন্থের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এর পরিশিষ্টটি। বিভিন্ন রাজ্যে ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনায় বিচারপতি তারপুণ্ডে কমিটির রিপোর্টের অংশ এই গ্রন্থে সংযোজিত হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর হাতে বিভিন্ন রাজ্যে নিহতদের নামের আংশিক তালিকা সংযোজিত করা হয়েছে। রয়েছে ১৯৯৩-এর জুলাই থেকে ২০১০ পর্যন্ত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নথিভুক্ত ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগের তালিকাও।
তবে, গ্রন্থের গোড়ার দিকে সুজাত যে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের উল্লেখ করেছেন, গ্রন্থের পরবর্তী অংশে তার সবিস্তার কোনও আলোচনা নেই। নেই বিদেশের সঙ্গে এ দেশের কোনও তুলনামূলক পর্যালোচনাও। ভুয়ো সংঘর্ষ প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ গ্রন্থেও কিন্তু অভাব থেকে গেল নাগরিক সমাজের ভূমিকা নিয়ে আলোচনার। মানবাধিকার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকা প্রসঙ্গেও সবিস্তার উল্লেখের প্রয়োজন ছিল।
মুদ্রণেও অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। কিষেণজি-সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের বেশ কিছু ছবি রঙিন আর্টপ্লেটে ছাপা হয়েছে। কিন্তু কোনও ছবিতেই পরিচিতি নেই। গ্রন্থটি উল্টেপাল্টে দেখলে মনে হয় যেন অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে এটি ছাপা হয়েছে। গণ আন্দোলনের সঙ্গে পেশাদারিত্বের কিন্তু বিরোধ নেই!
বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্রন্থ প্রকাশ করেছে দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চ ‘কোঅর্ডিনেশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস অর্গানাইজেশনস’ (সিডিআরও)।
টাডা এবং পোটা-র পদাঙ্ক অনুসরণে আনা হয়েছিল ইউএপিএ। এই মুহূর্তে গোটা দেশে অসংখ্য মানুষ এই আইনে জেলবন্দি। মানবাধিকার ও সামাজিক সংগঠনগুলি বার বার অভিযোগ এনেছে, নাগরিক অধিকার ছিনিয়ে নিতে এই আইন রাষ্ট্রের হাতে অগাধ ক্ষমতা তুলে দিয়েছে। ১৯০৮ সালে ‘ক্রিমিন্যাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিষদাঁত ভাঙতে চেয়েছিল। বেশ কিছু সংগঠনকে এই আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দ্য টেরর অব ল দেখিয়েছে, কী ভাবে তা বিবর্তিত হয়ে পরিণত হল ইউএপিএ-তে। ছত্রধর মাহাতো, স্বপন দাশগুপ্ত, রঞ্জিৎ মুর্মু-সহ নানা ঘটনার উল্লেখ করে সিডিআরও জানাচ্ছে, রাজার বদল হয়েছে বটে, বদলায়নি রাজার চাবুক!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.