চার বছর আগে বেজিংয়ের ট্র্যাকে উসেইন বোল্ট যখন বিদ্যুৎ চমকানো শুরু করেছিলেন, তত দিনে বেজিং অলিম্পিক তার মহাতারকা খুঁজে নিয়েছে। ২০০৮ অলিম্পিকের সিংহাসন তত দিনে পাকাপাকি ভাবে মাইকেল ফেল্পসের দখলে। বাকি অ্যাথলিটদের কৃতিত্ব, তা সে রেকর্ড সময়ে বোল্টের নজিরবিহীন সোনার হ্যাটট্রিকই হোক না কেন, মার্কিন সাঁতারুর স্পটলাইট কেড়ে নিতে পারেনি। |
লন্ডনের ছবিটা অন্য রকম। ২০১২ অলিম্পিকের প্রথম সপ্তাহের শেষে ফেল্পস তিনটে সোনা-সহ একুশটা অলিম্পিক পদক জেতার বিশ্বরেকর্ড গড়ে নিজেকে অন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করে ফেললেও তেমন উন্মাদনা তৈরি করতে পারেননি। একটি ইভেন্টে পদক হাতছাড়া হয়েছে তাঁর। এবং এই পরিস্থিতিতে অলিম্পিক অভিযান শুরু করতে চলেছেন উসেইন বোল্ট। যাঁর সামনে এখন জীবন্ত কিংবদন্তি হওয়ার স্বপ্নের হাতছানি। একশো এবং দুশো মিটারে জোড়া সোনা জিততে পারলে বোল্টই যে লন্ডনের অবিসংবাদী নায়ক হয়ে উঠবেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
কিংবদন্তি হওয়ার পথে বোল্টের সবচেয়ে বড় কাঁটা তাঁরই স্বদেশী এবং ট্রেনিং সঙ্গী ইয়োহান ব্লেক। যিনি জামাইকার ট্রায়ালে একশো এবং দুশো মিটার, দুটো রেসেই বোল্টকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন। স্বয়ং বোল্ট যাঁর নাম দিয়েছেন ‘দ্য বিস্ট’। এ রকম চ্যালেঞ্জের সামনে অবশ্য নড়বড়ে নন বোল্ট। বরং নিজের অননুকরণীয় ভঙ্গিতে তিনি বলেছেন, “মনে হচ্ছে একশো মিটারের রেসটা অ্যাথলেটিক্স ইতিহাসের দ্রুততম রেস হবে!” |
বেজিংয়ে ৯.৬৯ সেকেন্ড সময়ে একশো মিটারে সোনা জিতেছিলেন বোল্ট। এক বছর পরের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সেই সময়টা কমিয়ে আনেন ৯.৫৮ সেকেন্ডে। বোল্ট এবং তাঁর কোচ গ্লেন মিলস দু’জনেরই বিশ্বাস, লন্ডন অলিম্পিকে সময়টা ৯.৪ সেকেন্ডের আশেপাশে নামিয়ে আনা সম্ভব। অবশ্যই যদি লন্ডনের আবহাওয়া তাঁদের পক্ষে যায়। রবিবার একশো মিটার ফাইনালের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তাঁরা খুশি হবেন না। মেঘলা আকাশের সঙ্গে বৃষ্টির তিরিশ শতাংশ সম্ভাবনা।
বোল্ট এবং ব্লেকের পাশাপাশি একশো মিটারে দৌড়বেন দুই বিখ্যাত মার্কিন অ্যাথলিট টাইসন গে এবং জাস্টিন গ্যাটলিন। চোট-আঘাতে বিধ্বস্ত কেরিয়ারে এখনও অলিম্পিক পদকের খোঁজে টাইসন। তাঁর স্বদেশী, ২০০৪ অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন জাস্টিন চার বছরের ডোপিং নির্বাসনের পরে আবার ট্র্যাকে ফিরছেন। জামাইকা থেকে রয়েছেন প্রাক্তন বিশ্বরেকর্ডের মালিক আসাফা পাওয়েল-ও।
সবাইকে টপকে বোল্ট পারবেন ইতিহাসের পাতায় ঢুকতে? অপেক্ষা আর মাত্র এক দিনের।
|
ফেল্পস ২১
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সাঁতারের পুলে দুই নজির। মার্কিন মাইকেল ফেল্পস সম্ভবত জীবনের শেষ ব্যক্তিগত অলিম্পিক ইভেন্টেও জিতে নিলেন সোনা। অন্য দিকে ২০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে বিশ্বরেকর্ড গড়ে এই অলিম্পিকে নিজের তিন নম্বর সোনা পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের মেয়ে মিসি ফ্রাঙ্কলিন। মিসির এটি লন্ডনের চতুর্থ পদক। ফেল্পস আজ ১০০ মিটার বাটারফ্লাই জিতলেন শেষ পঞ্চাশ মিটারে অসাধারণ সাঁতরে। সময় নিলেন ৫১.২১ সেকেন্ড। যাঁকে হারালেন, সেই দক্ষিণ আফ্রিকান শাদ লে ক্লোসেকে ফেল্পস নিজেই নিজের উত্তরসুরি বলে চিহ্নিত করেছেন। |
এ দিন অবশ্য শাদকে রুপোতেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। ফেল্পসের মোট অলিম্পিক সোনা দাঁড়াল ১৭টি। মোট পদক ২১টি। এর আগে ২০০ ব্যক্তিগত মেডলি ও ৪x১০০ ফ্রিস্টাইল রিলেতে সোনা জিতেছেন। সব মিলিয়ে লন্ডনে এখনও পর্যন্ত দু’টি রুপো-সহ পাঁচটি পদক ফেল্পসের। শনিবার কিংবদন্তি সাঁতারু সম্ভবত শেষ বারের মতো অলিম্পিকের পুলে নামবেন, ৪x১০০মেডলি রিলেতে।
|