জরাজীর্ণ বাড়ি, বিপজ্জনক খাগড়া
পুরনো শহর। পুরনো বাড়িরও অভাব নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, সে খেয়াল ছিল না।
বৃহস্পতিবার শহরের খাগড়া এলাকাতে হনুমানের দাপাদাপিতে একটি বাড়ি থেকে কংক্রিটের চাঙড় খসে পড়ে দুই মহিলার মাথায়। তাঁরা বাড়িতে বিয়ের জন্য জল সইতে যাচ্ছিলেন নদীতে। ডলি সাহা নামে এক জনের মৃত্যু হয় সেই দিনই। অন্য জনকে বহরমপুর থেকে কলকাতা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত তিনি ভাল আছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই পরিবারের বিয়েও এখন এই দুর্ঘটনায় স্থগিত হয়ে গিয়েছে। বহরমপুরের মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশাসন সতর্ক থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। এই প্রাচীন শহরে পুরনো বাড়ির সংস্কারও হয় না। বেআইনি ভাবে নতুন বাড়িও তরতর করে উঠে যেতে পারে।
বহরমপুরের পুরনো এলাকা বলতে খাগড়া-সৈদাবাদ-কাশিমবাজার এলাকাকেই বোঝায়।
খাগড়ায় দু’টি ভগ্নপ্রায় বাড়ি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
এক সময়ে সেখানে জলা ও নলখাগড়ার বন থাকলেও পরে সেখানে জনপদ গড়ে ওঠে। ওই নলখাগড়ার বনের জন্যই ‘খাগড়া’ নাম। ভাগীরথী গতি পরিবর্তন করে বর্তমান খাতে বইতে শুরু করলে খাগড়া নদীর তীর লাগোয়া এলাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযুক্ত স্থানে পরিণত হয়। তখন বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ পথ নির্মিত হওয়ায় এবং সেটি খাগড়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় এখানে স্থলপথেও পরিবহণের বিশেষ সুবিধা ছিল। আবার ভাগীরথী দিয়ে নৌ-পরিবহণের বিশেষ ব্যবস্থা থাকায় পণ্য আদান-প্রদানেরও সুবিধা ছিল। এছাড়া আজিমগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মিত হওয়ায় এবং সেখান থেকে স্টিমারে যাত্রী ও মাল পরিবহণের সুবিধা থাকায় খাগড়া আদর্শ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়। খাগড়ার সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশ দৌলতাবাদ-কুলবেড়িয়া অঞ্চল থেকে এবং কংসবণিকদের অধিকাংশ বড়নগর অঞ্চল থেকে খাগড়ায় উঠে আসেন। মুর্শিদাবাদ লাগোয়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও হস্তিদন্ত শিল্পীরাও এই সময়ে খাগড়ায় আসেন।
ব্রহ্মপুর হল বহরমপুর সমৃদ্ধ জনপদ খাগড়া
পলাশির যুদ্ধের পরে ইংরেজ আমলে বহরমপুর শহরের পত্তন ঘটে, যা এক সময়ে ছিল ব্রহ্মপুর। পলাশির যুদ্ধের পরে এই এলাকাতেই সেনানিবাস তৈরি করে ইংরেজরা। মিরজাফর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্রহ্মপুর মৌজায় ৪০০ বিঘা জমি দান করেন। তাই পলাশির যুদ্ধের আগে যে ব্রহ্মপুরের অস্তিত্ব ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। ১৭৬৮ সালে এই এলাকাতেই স্থাপিত হয় বহরমপুর ক্যান্টনমেন্ট। বহরমপুর পুরসভা প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৭৬ সালের ১ জুলাই। খাগড়ায়ও উনিশ শতকে বসতি স্থাপিত হয়। ইতিহাস গবেষক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছিয়াত্তরের মন্বন্তর ও ১৮১৩ সালের মহামারীতে বহরমপুরের আশপাশের গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে যায়। মুর্শিদাবাদের বহু অঞ্চলের মানুষ বহরমপুরে বাস করতে থাকেন। তাঁরা ভাগীরথীর পলি সমৃদ্ধ জনপদ খাগড়াকেই বেছে নিয়েছিলেন।”
এই সব শিল্পীদের জন্যই খাগড়া স্বর্ণশিল্প, কাঁসা শিল্প ও হস্তিদন্ত শিল্পে এক সময়ে সারা ভারতে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। শহরের বাসিন্দা ইতিহাসবিদ বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাশিমবাজার-সৈয়দাবাদ-খাগড়া প্রাচীন জনপদ। এই এলাকায় ২০০-৩০০ বছরের প্রাচীন বাড়িঘর রয়েছে। সেই সময়ে যত্রতত্র বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় এই এলাকা ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে। দু’টি বাড়ির মাঝে সরু গলি রাস্তা তৈরি হয়েছে। এদিকে দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ার ফলে পুরনো বাড়িগুলিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে তা সংস্কারের প্রয়োজন।” অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিষাণ গুপ্তের কথায়, “কলকাতার চিৎপুর ও বৌবাজারের সঙ্গে খাগড়ার তুলনা টানা যেতে পারে। আমার ছেলেবেলায় দেখা খাগড়া এলাকার পুরনো বাড়িগুলোও মোটামুটি একই রকম রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি নতুন বাড়ি গড়ে উঠেছে। ওই বাড়িগুলিও প্রাচীন। সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। অবিলম্বে সংস্কার না হলে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।” কাশিমবাজারে পুলিশের ফাঁড়ি যে বাড়িটিতে, তারই খুব জরাজীর্ণ অবস্থা।
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বাড়িটি অবিলম্বে সংস্কারের চেষ্টা করছি আমরা।”
তবে বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে বহরমপুর পুরসভাও নড়েচড়ে বসেছে।

(দ্বিতীয় কিস্তি রবিবার)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.