নিকাশি সংস্কার
বদলের আশা
বাড়ির সামনে খেলতে গিয়ে কয়েক বছর আগে বর্ষার জমা জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল দু’টি শিশুর। আবার, জমা জলে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। এই সব স্মৃতি আজও ভুলতে পারেন না বালি সাঁপুইপাড়া-বসুকাটির বাসিন্দারা। পাশাপাশি, বর্ষার পরেও ছ’মাস এলাকায় জলবন্দি হয়ে থাকার যন্ত্রণা আজও তাড়া করে বেরোয় চকপাড়া-আনন্দনগর, নিশ্চিন্দার বাসিন্দাদের।
কিন্তু এ বারে সেই চিত্রটা বদলাতে চলেছে। বালি জগাছা ব্লকের এই তিনটি পঞ্চায়েতের নিকাশির আমূল সংস্কার করা হয়েছে। যার ফলে এ বছর আর বর্ষার জমা জলে বাসিন্দাদের নাকাল হতে হবে না বলেই বলে দাবি প্রশাসনের। হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি) সূত্রে খবর, এই তিনটি পঞ্চায়েতের নিকাশির উন্নতির জন্য শেওড়াপোতা, পিঁজরাপোল ও সুতি খালের সংস্কার করা হয়েছে।

শেওড়াপোতা খাল
সংস্কারের আগে সংস্কারের পরে
ফি বছর বর্ষাতেই সাঁপুইপাড়া-বসুকাটি, চকপাড়া-আনন্দনগর ও নিশ্চিন্দা পঞ্চায়েতের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েন। বেশি ভোগান্তি হয় শান্তিনগর, প্রান্তিক, অরবিন্দনগর, অগ্রদূত, ঘুঘুপাড়া, ঝাউতলা গ্রামের বাসিন্দাদের। বর্ষার শুরুতে প্রথম কয়েক দিনের বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট কোমর সমান জলে ডুবে যায়। খেলার মাঠ পুকুরের চেহারা নেয়। একতলা বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় জল। যাঁদের দোতলা বাড়ি, তাঁরা একতলা ছেড়ে সেখানে আশ্রয় নেন। কেউ আবার একতলা বাড়ির ভিতরেই মেঝেতে ইট পেতে খাট উঁচু করে তার উপরে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম করেন। অনেকে আবার বাড়ি ছেড়ে কয়েক মাসের জন্য অন্যত্র চলে যান।
এই জমা জলকে সঙ্গী করেই বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে হয়। অধিকাংশ গ্রামেই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকো। বাসিন্দারা আবার নিজেদের উদ্যোগেই বানিয়ে নেন বাঁশের সাঁকো। পুজোর সময়েও এই ভোগান্তি দূর হয় না। দীর্ঘ দিন ধরেই জমা জলের এই সমস্যা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
বালি জগাছা ব্লকের ওই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় জল জমে থাকত কেন?
হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা সূত্রে খবর, ওই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকাই খুব নিচু। সেখানেই গড়ে উঠেছে বসতি। পাশাপাশি রয়েছে নিকাশির সমস্যা। বালি জগাছার এই তিনটি পঞ্চায়েতের নিকাশি ব্যবস্থা মূলত শেওড়াপোতা, পিঁজরাপোল ও সুতি খালের উপরেই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে খালগুলিতে পলি জমে গিয়েছিল। পাড় না বাঁধানো থাকায় কোনও কোনও জায়গায় মাটি ধসে খাল বুজে গিয়েছিল। ফলে ওই তিনটি এলাকার জমা জল বেরোতে পারত না।

পিঁজরাপোল খাল
সংস্কারের আগে সংস্কারের পরে
এইচআইটি-র বাস্তুকারেরা জানান, জল জমার সমস্যা সমাধানে ২০০৫-এ জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন-এর (জেএনএনআরইউএম) সাবমিশন-১-এ কাজটি করার জন্য প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লিতে পাঠানো হয়। পরে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পরে ২০১০ থেকে তিনটি খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়।
কী কাজ করা হয়েছে?
এইচআইটি সূত্রে খবর, চকপাড়ার ঘুঘুপাড়ায় ব্রাঞ্চ ক্যানাল-২-এর সংযোগস্থল থেকে রাজচন্দ্রপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার শেওড়াপোতা খালের পলি তোলা হয়েছে। পাড়ও কংক্রিটের করা হয়েছে। চকপাড়া ঝাউতলায় শেওড়াপোতা খালের সংযোগস্থল থেকে প্রায় ২৩০০ মিটার পিঁজরাপোল খালেরও সংস্কার করা হয়েছে। আবার আনন্দনগর পিডব্লিউডি রোড থেকে শেওড়াপোতা খাল পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার সুতি খালেরও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০০ মিটার ও ১৬০০ মিটারের দু’টি নতুন নিকাশি নালাও তৈরি করা হয়েছে। খরচ হয়েছে ৪ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। স্থানীয় বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই তিনটি পঞ্চায়েতের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল নিকাশি সমস্যা সমাধানের। নির্বাচিত হওয়ার পরেই খাল সংস্কারের বিষয়ে প্রতিনিয়ত এইচআইটি-র সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। খালগুলি সংস্কার হওয়ার ফলে বর্ষার পরে আর ছ’মাস ধরে ওই তিনটি এলাকার মানুষ জলবন্দি থাকবেন না বলেই আশা করি।”
এইচআইটি-র এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জিত বসু বলেন, “পরবর্তী পর্যায়ে বাকি পঞ্চায়েতগুলির নিকাশির কাজ করা হবে। তবে মানুষ সচেতন না হলে ফের খালগুলি নোংরা আবর্জনা পড়ে বুজে যেতে পারে।” একই মত রাজীববাবুরও। তিনি বলেন, “মানুষ যাতে প্লাস্টিক ও আবর্জনা খালে না ফেলেন তার জন্য প্রচার চালাতে হবে। বিডিও-কে এ জন্য অনুরোধ করেছি। প্রয়োজনে নিজেও রাস্তায় নামব। কোনও ভাবেই খাল নোংরা করা যাবে না।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.