সম্পাদকীয় ১...
অনধিকারী?
প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের সত্য। কূটনীতিতেও প্রতিক্রিয়া থাকে, তবে পদার্থবিদ্যা মানিয়া সর্বদা সমান ও বিপরীত হয় কি না, বলা কঠিন। যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্প্রতি ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি লইয়া কিছু মন্তব্য করিলেন। ভারতে প্রতিক্রিয়া হইল বিষম। অতি-প্রতিক্রিয়া। অতিরেকটি কী অর্থে, তাহা বিবেচনার জন্য দেখিতে হইবে ওবামা কী বলিয়াছিলেন। সংক্ষেপে, ওবামার বক্তব্য ছিল, ভারতে আরও অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। অন্যথা বিনিয়োগকারীগণ ভারতে আসিতে আগ্রহী হইবেন না। বক্তব্য শ্রবণমাত্রে ভারতে শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে নানা পক্ষ খড়্গহস্ত। মোদ্দা কথা ইহাই, বারাক ওবামা আমেরিকা লইয়া ভাবুন। নয়াদিল্লির অর্থনৈতিক কর্তব্য-অকর্তব্য সম্পর্কে কথা বলিবার অধিকার তাঁহাকে কে দিয়াছে? দেশপ্রেম বিষম বস্তু। প্রায়শই তাহা যুক্তির পথ রোধ করে। তখন, স্মরণে থাকে না যে, বৈদেশিক পুঁজিকে যদি আহ্বান করিতে হয়, তাহা হইলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলের মন্তব্যও শুনিতে হইবে। সেই সকল মন্তব্য মাননীয় কি না, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু, ‘ইহা ‘আমার’ দেশ, ‘উহারা’ বলিবার কে’ ধরনের ক্ষোভ শিশুসুলভ। পুঁজির চলাচল যদি দেশসীমা ছাড়ায়, তখন পুঁজির গতিবিধি লইয়া মন্তব্যও আন্তর্জাতিক স্তরেই চলাচল করিবে। তাহা মান্য করিবার বা না-করিবার অধিকার কেহ কাড়িয়া লয় নাই। কিন্তু, অর্থনীতির হাল লইয়া মন্তব্যের ক্ষেত্রে খামখা অধিকারী ভেদ কেন?
হইতে পারে, স্বদেশের বাণিজ্য ‘লবি’র চাপে পড়িয়া বারাক ওবামা এই ধরনের মন্তব্য করিয়াছেন। তাহাতে নয়াদিল্লির আপত্তি করিবার কারণ কী? বাণিজ্য ‘লবি’র অভিমত কত দূর বাঞ্ছিত, সেই সব লইয়া ভিন্ন মত থাকিতে পারে। থাকাই স্বাভাবিক। ওয়াশিংটন এবং নয়াদিল্লির বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং দৃষ্টিভঙ্গি অবিকল মিলিয়া যাইবে, এমন না-ই হইতে পারে। তৎসহ, আমেরিকা ক্রমে নির্বাচনের দিকে চলিতেছে। সুতরাং, বারাক ওবামার উপরে চাপ থাকিতেই পারে। সেই চাপের কারণে তিনি কী বক্তব্য রাখিবেন, তাহা ওবামারই বিবেচ্য। বেফাঁস কিছু বলিলে তাহার দায় তিনিই বহন করিবেন। অন্য দিকে, মার্কিন অর্থনীতি সম্পর্কেও নয়াদিল্লি মন্তব্য করিতে পারে। সেই অধিকার, কার্যত, অলঙ্ঘ্য। ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বের যুক্তি দিয়া অন্যের মন্তব্য করিবার অধিকারকে রুখিতে চাহিবার অর্থ নাই। কারণ, বিশ্বায়িত পুঁজির দুনিয়ায় সার্বভৌম বলিয়া কেহ অর্থনীতির দ্বার বন্ধ রাখিতে পারে না।
অতঃপর, অন্তিম প্রশ্ন। ওবামা কি কথাটি ভুল বলিয়াছেন? দেশপ্রেমের কাজল চক্ষু হইতে সরাইলে সত্য প্রকাশিত হইবে। সত্যই ভারতীয় অর্থনীতির পরিস্থিতি কী, বিদেশে তো বটেই, স্বদেশেও কেহ কেহ তাহা দেখিতে পাইতেছেন। যেমন, মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া। বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ যখন আপন বিবাদ-বিসংবাদ ভুলিয়া ওবামার নিন্দাবাদে ব্যস্ত, তখন মন্টেক একটি কালোচিত বার্তায় জানাইয়াছেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দুনিয়ার বিভিন্ন মহল হইতেই ভারতে বিনিয়োগ সম্পর্কে সংশয় জ্ঞাপন করা হইয়াছে। বিষয়টি, অতএব, বিবেচনার যোগ্য। বিবেচনা করিবে কে? কর্তব্যকর্মগুলি সুবিদিত। খুচরা ব্যবসায় বিদেশি পুঁজি, উদ্যোগের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, এমন একাধিক বিষয় আছে, যাহা আশু সংস্কারের দাবি রাখে। অন্যথা, বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহ হইবেন। ইহা শাসক ও বিরোধী উভয় তরফই জানেন। অথচ, স্বার্থসিদ্ধির কারণে কাজগুলি ঝুলাইয়া রাখাই, তাঁহাদের মতে, বাঞ্ছিত। প্রেসিডেন্ট ওবামা সেই কর্তব্যগুলি সম্পর্কে একটি সতর্কবার্তা শুনাইয়াছিলেন। দেশপ্রেমের দোহাই দিয়া নেতৃবৃন্দ তাহা খণ্ডনে ব্যস্ত। স্পষ্ট বলা দরকার, ইহা দেশপ্রেম নহে। দেশকে ভালবাসিলে তাহার হিতার্থে কিছু করিতে হইবে। করণীয়গুলি সুবিদিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল তো বটেই, স্বদেশেও একাধিক বিশেষজ্ঞ সে সম্পর্কে অবহিত। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সাঙ্গ হইল। ‘দেশপ্রেমী’ নেতৃবৃন্দ কর্তব্যে মন দিন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.