কলকাতা ও শহরতলিতে রাতের বায়ুদূষণ কমানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্ট বিভিন্ন সময়ে বহু নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু দূষণ কমেনি। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও অসীমকুমার মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পরিবহণসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে জানতে চেয়েছে, আদালতের নির্দেশগুলি রাজ্য সরকার কী ভাবে, কতটা কার্যকর করেছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে ওই জবাব হলফনামা আকারে জমা দিতে হবে হাইকোর্টে।
রাতের কলকাতায় লরির দূষণ মাপার জন্য রাজ্য সরকার একটি মোবাইল রিমোট সেনসিং যন্ত্র কিনেছিল। ওই যন্ত্রটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বসানো থাকতো। স্বয়ংক্রিয় ওই যন্ত্র কেবল চলন্ত গাড়ির ধোঁয়ার দূষণ মেপে নথিভুক্তই করে না, গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবিও তুলে নেয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে গতি আনতে ২০০৮ সালে হাইকোর্ট এমন আরও তিনটি যন্ত্র কলকাতা ও শহরতলির জন্য কিনতে বলে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় একটি করে ওই যন্ত্র কেনার নির্দেশও দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত রাজ্য সরকার আদালতের সেই নির্দেশ কার্যকর করেনি।
কলকাতায় রাতের দূষণ নিয়ে জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবু এ দিন আদালতে জানান, আদালতের নির্দেশ মতো রাজ্য সরকার যন্ত্র তিনটি কেনেনি, বরং আগের যন্ত্রটিও এখন বন্ধ আছে। কারণ তাতে অনেক খরচ হচ্ছে। অথচ রাতের দূষণ বেড়েই চলেছে। কলকাতা ও শহরতলিতে প্রত্যেক রাতে ১২ থেকে ১৫ হাজার গাড়ি ঢোকে। কিন্তু সেই সব গাড়ির দূষণ মাপার কোনও ব্যবস্থাই নেই। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও বায়ুদূষণ মাপার পরিকাঠামোকে ‘ছোট’ করে ফেলেছে।
এ ছাড়াও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকির জন্য একটি কমিটি গড়ে দিয়েছিল আদালত। কিন্তু সেই কমিটিও আর কাজ করে না বলে জানা গিয়েছে। আদালত এ নিয়েও বিস্তারিত জানিয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবারই রাজ্যে লাইসেন্সবিহীন অটো নিয়েও ক্ষোভ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত বলেন, “লাইসেন্স না থাকলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অটো বাজেয়াপ্ত করবে এটাই নিয়ম। তা হয় না কেন।” আগামী বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চে অটো নিয়ে মামলাটির শুনানি হবে।
নির্দিষ্ট রুটে না চালিয়ে খুশিমতো রুটে অটো চলছে। পুলিশকে জানালেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন অভিযোগ জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। এ দিন মামলাটির শুনানির সময়ে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, রুট মেনে অটো চলছে না বলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। কিন্তু ৪০% অটো যে বেআইনি তা পুলিশ, সরকার সকলেরই জানা। সরকার নিজেই বিভিন্ন সময়ে এই বেআইনি অটোর কথা বলেছে। কিন্তু লাইসেন্সবিহীন অটো চলাচল বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকার নীরব দর্শক। একটিও লাইসেন্সবিহীন অটোর ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর পরেই বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত জানান আগামী বৃহস্পতিবার মামলাটির চুড়ান্ত শুনানি হবে। |