রাত তখন প্রায় ১১টা। যানবাহন অনেক কমে এসেছে। রাস্তায় লোকজনের সংখ্যাও কম। আচমকা এক ব্যক্তির আর্তনাদে চমকে ওঠেন আশপাশের দোকানদার ও ট্রেনযাত্রীরা। দেখেন, বছর তিরিশের এক যুবক এক প্রৌঢ়ের বাঁ হাতের তর্জনী কামড়ে ধরেছেন। প্রৌঢ় পরিত্রাহি চিৎকার করে বলছেন, ‘‘ছোড় দো, ছোড় দো। মর যায়েগা।”
কিছুক্ষণ পরে কামড়-মুক্ত হল ঠিকই, কিন্তু দেখা গেল প্রৌঢ়ের বাঁ হাতের তর্জনীর সামনের অংশ কেটে বাদ গিয়েছে। গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে।
বুধবার রাতে এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে হাওড়া স্টেশন চত্বরের কাছে গোলাবাড়ি ট্রাফিক বুথের সামনে। যে যুবক ওই ভয়াবহ কামড় বসিয়েছিলেন, তাঁর নাম আকাশ গুপ্ত। বাড়ি গোলাবাড়ি এলাকার ঘাসবাগানে। ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক। আক্রান্ত ওই প্রৌঢ়, অবতার সিংহ পেশায় বাসচালক। বাড়ি উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে। পুলিশের কাছে ওই যাত্রীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২৬ এবং ৩৪ ধারায় গুরুতর জখমের অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। |
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ২১৯ নম্বর বাসটি লেকটাউন ছাড়ার পর থেকেই যাত্রী তোলার জন্য খুব ধীরে চলছিল। বাস কেন জোরে চলছে না এই নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা বাধে। তাতে প্রধান ভূমিকা নেন বাসের যাত্রী আকাশ। কাকা-কাকিমার সঙ্গে হাওড়া ফিরছিলেন তিনি। অভিযোগ, বচসার সময়ে কন্ডাক্টর আকাশকে হুমকি দিয়েছিলেন ‘হাওড়া এলে দেখে নেব’। হাওড়ায় বাস ঢুকতেই অবশ্য ওই যুবক কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। অভিযোগ, তিনি প্রথমে বাসের এক কন্ডাক্টরকে মারধর করেন। বৃহস্পতিবার সেই কন্ডাক্টর বাবলু দত্ত বলেন, “হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে গোলাবাড়ি ট্রাফিক বুথের সামনে বাস এসে থামতেই ওই যাত্রী আমাকে মারতে শুরু করেন। আমার ঘাড়ে, মুখে খামচে দেন। এই দেখে অবতারদা চালকের কেবিন থেকে নেমে ওঁকে বাধা দিতে যান। তখনই ওঁর আঙুল কামড়ে ধরে ছিঁড়ে দেন ওই যাত্রী।” পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া লোকজন আকাশের কাকা-কাকিমাকে ধরে ফেলেন। পরে কাকিমাকে ছেড়ে দিলেও কাকা সুরেন্দ্র গুপ্তকে ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে ধৃতকে দু’দিনের জেল হেফাজত দেওয়া হয়। আকাশের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। |