উৎকর্ষের সঙ্গে যে আপস করা যাবে না, সেটাই মূল কথা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্ব মানের শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আনুমানিক কত টাকা লাগবে, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট দিতে চলেছে মেন্টর গ্রুপ।
কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সির ঐতিহাসিক ক্যাম্পাস ছাড়া রাজারহাটে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য ১০ একর জমি মেলার পরে সামগ্রিক পরিকল্পনার রূপরেখা ঠিক করার পথে অনেকটা এগোনোও সম্ভব হয়েছে। রবিবার মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে বৈঠক চলাকালীন এ কথা জানান চেয়ারম্যান সুগত বসু। আগামী ১৫ অগস্টের মধ্যে দু’টি ক্যাম্পাসের কর্মকাণ্ডের বিন্যাস ও খরচের বহর সংবলিত রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা পড়ার
|
সুগত বসু |
কথা। সেই সঙ্গে সুগতবাবুর আশ্বাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর-সহ প্রথম ১০০ জন শিক্ষক নিয়োগের কাজও সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের এটি তৃতীয় বৈঠক। আগের দু’টি বৈঠকের পরে রাজ্য সরকারের কাছে দু’টি রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্সিকে স্বমহিমায় ফেরানোর সামগ্রিক পরিকল্পনা এবং বিভিন্ন পাঠ্যক্রমের গঠন ছিল সেই দু’টি রিপোর্টের মূল উপজীব্য। এ বার তৃতীয় রিপোর্টে খরচের দিকটা বিস্তারিত ভাবে উঠে আসবে বলে এ দিন জানান সুগতবাবু। তিনি বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিভিন্ন খাতে কত খরচ হতে পারে, তার একটা হিসেবও রাজ্য সরকারকে দেওয়া হবে।”
সরকার অবশ্য তাড়াহুড়ো না-করে আপসহীন ভাবে প্রেসিডেন্সিকে ঘিরে স্বপ্ন সফল করার পক্ষপাতী। ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি সাবেক হিন্দু কলেজ তথা প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠার দ্বিশতবর্ষ পূর্তির আগে সব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে। ওই সময়সীমার মধ্যে ধাপে ধাপে তিন শতাধিক শিক্ষক নেওয়া হতে পারে। সুগতবাবুর দাবি, “এখনও পর্যন্ত খুবই দ্রুত গতিতে অথচ সুষ্ঠু ভাবে প্রেসিডেন্সির বিকাশ হচ্ছে। যা যে-কোনও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই বিরল।”
ঠিক কী ভাবে দু’টি ক্যাম্পাসের কর্মকাণ্ড ঠিক করা হয়েছে? সুগতবাবু বলেন, “রাজারহাটের নতুন ক্যাম্পাসকে অবশ্যই একুশ শতকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক বিজ্ঞান-চর্চার জন্য যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। উন্নত ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো থাকবে সেখানে।” তবে প্রেসিডেন্সির ‘পুনরুজ্জীবন’-এর দর্শনে অত্যধিক ‘স্পেশ্যালাইজেশন’-এর ব্যাধি এড়িয়ে চলাটাও মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের মাথায় রয়েছে। সুগতবাবুর কথায়, “পুরনো ক্যাম্পাসে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা অটুট থাকবে। আমরা চাই, পদার্থবিদ্যার ছাত্র সাহিত্য পড়ুক এবং ঠিক উল্টোটাও ঘটুক। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে ভেদাভেদের ব্যাপারটাকে আমল না-দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য নির্বিশেষে সব বিষয়ে আকর্ষণ জিইয়ে রাখা হবে।”
এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছে মেন্টর গ্রুপ। উপস্থিত ছিলেন ১০ জন সদস্যই। এখনও পর্যন্ত ১৫টি সিনিয়র প্রফেসর-সহ ৪৪ জন শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। তার প্রক্রিয়া ও ফলাফলে সুগতবাবু সন্তুষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত পাঁচ মনীষীর নামে পাঁচটি বিশিষ্ট অধ্যাপক-পদে নিয়োগ নিয়েও এ দিন আলোচনা হয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দিয়ে একটি সার্চ কমিটি গড়ে ওই পাঁচ জন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সুগতবাবু। আজ, সোমবার প্রেসিডেন্সিতে কাউন্সিল মিটিংয়ের পরে অর্থনীতির আরও চার জন শিক্ষকের নিয়োগ চূড়ান্ত হতে পারে। |