অলিম্পিকের উদ্বোধনী দিনেই নেমে পড়ছেন তিরন্দাজরা
লর্ডসের হাওয়া কম থাকলে
পদক আসবেই, বললেন রাহুল
জীবনের প্রথম অলিম্পিকে নামার আগে বাড়তি কোনও চাপ না থাকলেও, লর্ডসের তীব্র হাওয়াকে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছেন রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিরন্দাজিতে ভারতীয় দলের হয়ে যিনি অন্যতম পদক-জয়ের দাবিদার। “বিশ্বাস করুন, দিল্লির মাঠে কমনওয়েলথের সময় যে চাপ ছিল সেটা কিন্তু এখানে নেই। অন্তত আমার মনেই হচ্ছে না অলিম্পিকে এসেছি। আমাদের সবার চিন্তা স্টেডিয়ামের হাওয়া। যদি প্রতিযোগিতার দিন সেটা একটু কম থাকে, তা হলে আমাদের পদক জয় আটকাবে না,” লন্ডনে বৃহস্পতিবার বিকেলে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলে দিলেন রাহুল। তাঁর পাশে তখন দলের অন্য দুই সদস্য জয়ন্ত তালুকদার এবং তরণদীপ রাই।
আজ শুক্রবার অলিম্পিক উদ্বোধনের ছয় ঘণ্টা আগেই অবশ্য তির-ধনুক নিয়ে পদক জয়ের যুদ্ধে নেমে পড়তে হচ্ছে ভারতীয় তিরন্দাজদের। এই ইভেন্ট থেকেই অন্তত গোটা তিনেক পদক জেতার আশা করছে একশো কুড়ি কোটির ভারত। আজ হবে র্যাঙ্কিং রাউন্ড। পরের দিন অর্থাৎ শনিবার হবে ছেলেদের দলগত পদক রাউন্ড। তিরন্দাজিতে র্যাঙ্কিং রাউন্ডের উপরই অনেক নির্ভর করে পদক জয়। কারণ এখানে ভাল তির ছুঁড়লেই পাওয়া যায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী।
রাহুল-জয়ন্ত-তরণদীপরা তাদের দলগত রিকার্ভে পদক জেতার ব্যাপারে এতটাই মরিয়া যে, ঐতিহাসিক লর্ডসে দিন দশেক ধরে প্রতিদিন এলেও ঘুরে দেখা হয়নি ক্রিকেটের মক্কাকে। “সময় কোথায় বলুন? সকাল ন’টায় আসছি, সন্ধ্যায় ফিরে যাচ্ছি ভিলেজে। শুধুই অনুশীলন করছি। অন্য কিছু দেখার ইচ্ছে নেই কারও। সবাই মিলে চেষ্টা করছি স্টেডিয়ামের হাওয়াটাকে বোঝার। বাগে আনার। তির অন্য দিকে উড়ে গেলেই তো পদক হাতছাড়া,” বলছিলেন রাহুল।
চাঁদমারিতে চোখ: লর্ডসে অনুশীলনে নামার আগে ফুরফুরে মেজাজে রাহুল। ছবি: উৎপল সরকার
দিদি দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টো অলিম্পিকে নেমেছেন। কিন্তু রাহুলের এটাই প্রথম। তাই বেশ সিরিয়াস। বিমান বিভ্রাটে কিট হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে ধার করা তির-ধনুক নিয়ে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে’ নামার টিকিট পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোবেতে গিয়ে। সবে মাত্র অনুশীলন শেষ করে উঠেছেন। তাই কথা বলার সময় হাঁফাচ্ছিলেন। বলছিলেন, “কোবের পর থেকেই আমরা ভাল ছুঁড়ছি। অনুশীলনে পদক পাওয়ার মতো পয়েন্ট করছে পুরো টিম। বুধবার লর্ডসের মাঠে এক ঘণ্টা অনুশীলনের সময় দেওয়া হয়েছিল আমাদের। সেখানেও ভাল করেছি আমরা। কাল আর শনিবারটা ও রকম ছুঁড়তেই হবে।”
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের পাঁচটি সোনা-রুপোর পদক পকেটে, এশিয়াড-সহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে পদক জিতেছেন। দিল্লি কমনওয়েলথ-সহ দেশের মাটিতে সোনা-রুপো-ব্রোঞ্জের অসংখ্য পদক জিতেছেন। কিন্তু অলিম্পিকের পদক জয়ের সুযোগ প্রথম বার সামনে। নিয়মিত ল্যাপটপে প্রতিপক্ষের খোঁজখবর রাখা রাহুল বলছিলেন,“আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইউক্রেন। ব্যক্তিগত ইভেন্টে কী হবে জানি না। দলগত রিকার্ভে কিন্তু আমরা পদক পেতেই পারি।”
লন্ডনের পরিবেশ ও লর্ডসের হাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে টুর্নামেন্ট শুরুর প্রায় বারো দিন আগে পুরো তিরন্দাজ টিমকে লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছিল ফেডারেশন। কিন্তু এখানে এসেই সর্দি জ্বরে কাবু হয়ে পড়ে পুরো টিম। এখন অনেকটাই সুস্থ। “বুঝতে পারছি না কেন এমন হল?” রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলেন তাঁর সতীর্থ জয়ন্ত তালুকদার। ব্যক্তিগত বিভাগে মেয়েদের দীপিকা কুমারীর মতো যাঁর পদক জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। দলগত বিভাগের পরই রয়েছে ব্যক্তিগত ইভেন্ট।
রাহুলদের অনুশীলনের জন্য এ দিন বরাদ্দ ছিল লর্ডসের বিখ্যাত নার্সারি এন্ডের প্র্যাক্টিস মাঠ। ছেলেদের পর সেখানে অনুশীলন করল মেয়েদের টিমদীপিকা কুমারী, সুওরো, বোম্বাইলা দেবীরা। ষোলো ঘণ্টা পরই ‘বুলস আই’-তে চোখ রাখতে হবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে চোখ রাখছিলেন লিম্বারাম।
গেমস ভিলেজে একই বাড়িতে আলাদা অ্যাপার্টমেন্টে আছেন রাহুল-দীপিকারা। দিল্লির কমনওয়েলথের ভিলেজের তুলনায় লন্ডন অলিম্পিকের ভিলেজের ঘরগুলো অবশ্য ছোট। খাওয়ার জায়গাটা বিশাল। সেখানে ভারত ও এশীয় খাবারের জন্য একটা কাউন্টার রয়েছে। সেখানেই সব থেকে বেশি ভিড়। রাহুল বলছিলেন, “আমাদের দেশের নামেই শুধু কাউন্টার দেখলাম। আর কোনও দেশের নামে খাবার কাউন্টার নেই। জানতাম না, আমাদের দেশের খাবারের এত কদর। ভিলেজে এমন সব দেশের পতাকা উড়ছে যাদের নামই শুনিনি।”
আজ রাহুল যখন তির-ধনুক নিয়ে নামবেন তখন পাশে থাকবেন না তাঁর দিদি, ফিলোজফার ও গাইড দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এশিয়াড-কমনওয়েলথের মতো টুর্নামেন্টে নামার আগে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দিদির টিপস নিয়মিত পেয়েছেন রাহুল। পদকও জিতেছেন। দোলা ২৯ জুলাই যখন পৌঁছবেন তখন রাহুলদের দলগত ইভেন্ট অবশ্য শেষ। “শুধু রাহুল নয়, সবাইকেই যতটা সম্ভব সাহায্য করি। কলকাতায় সাইতে জাতীয় শিবিরেও সাহায্য করার জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলাম। আমাদের কিন্তু এ বার পদক জেতার সম্ভাবনা আছে।” বলছিলেন দোলা।
লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পর নিজের জার্সি উড়িয়েছিলেন বেহালার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মাঠেই, সেই পিচের উপর তৈরি হওয়া রেঞ্জ থেকে বরানগর বসাকবাগানের রাহুল পদক জিতে জাতীয় পতাকা ওড়াতে পারেন কি না সেটাই দেখার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.