কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ। তারই মধ্যে সেখানে উড়ান চালানোর প্রথম পরীক্ষায় ‘পাশ’ করে গেলেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ।
যার চালু হওয়া নিয়ে বিস্তর প্রতীক্ষা ও জল্পনা, রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরের ওই নতুন টার্মিনালের একটি অংশে (এক-তৃতীয়াংশ) পা দিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাইরে থেকে আসা প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ানের যাত্রীদের অনেকে। যার প্রেক্ষিতে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবালের আশা, পুরোপুরি চালু হয়ে
গেলে এটি দেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। রাজ্যের পরিবহণ-সচিব বি পি গোপালিকার কথায়, “একটা সময়ে মেট্রো রেল ছিল কলকাতার গর্ব। এ বার নয়া টার্মিনালকে রাজ্যের গর্ব হিসেবে তুলে ধরা যাবে।”
তবে প্রশংসার পাশাপাশি সতর্ক-বার্তাও শুনিয়েছেন এ দিনের উড়ানের কিছু যাত্রী। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন ‘যথাযথ’ রক্ষণাবেক্ষণের কথা। যেমন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া। যিনি বলছেন, “নিয়মিত হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু-দিল্লি-মুম্বই যাতায়াত করি। সেখানকার বিমানবন্দরও সুন্দর। বোঝা যায়, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়। একেও ঠিক ভাবে রাখতে হবে।” কলকাতার মেয়ে মমতা শর্মা বিবাহসূত্রে এখন তাইওয়ানের বাসিন্দা। তাঁর মন্তব্য, “কলকাতার পুরনো টার্মিনাল সত্যিই বেশ খারাপ। সে জায়গায় নতুনটা দেখে ভাল লাগছে। তবে এর দেখভালে মনোযোগী হতে হবে।” কর্তৃপক্ষ কী বলছেন? |
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা তথা আধুনিকীকরণের প্রকল্প-অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “নতুন টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো হবে একেবারে পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে। এ জন্য গ্লোবাল টেন্ডার দেওয়া হয়েছে।” রক্ষণাবেক্ষণের বরাতটি বিদেশি কোনও সংস্থার হাতে যাবে, এমন ইঙ্গিতও মিলেছে বিমানবন্দর-সূত্রে। জানা গিয়েছে, শুধু মেঝে ও শৌচালয় সাফসুতরো রাখতেই খরচ পড়বে বছরে দু’কোটি টাকা।
নতুন টার্মিনালে প্রথম পরীক্ষামূলক উড়ান হিসেবে মুম্বই থেকে আসা ইন্ডিগোর বিমানটি এ দিন দুপুর সওয়া বারোটায় কলকাতার মাটি ছোঁয়। ককপিট থেকে পাইলট ঘোষণা করেন, যাত্রীরা নতুন টার্মিনাল দিয়ে বেরোবেন। বিমান অবতরণের পরে এক শিশু-সহ ৮৪ জন যাত্রীকে বাসে চাপিয়ে নতুন টার্মিনালে আনা হয়। সেখানে তাঁদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। বিমানবন্দর-অধিকর্তার দাবি, “যে পরিষেবাগুলোর কার্যকারিতা যাচাই করতে এই উড়ান, তার সমস্ত ঠিকঠাক কাজ করেছে। যাত্রীরা টার্মিনালে পৌঁছনোর আগেই কনভেয়ার বেল্ট মারফত তাঁদের মালপত্র পৌঁছে গিয়েছে।”
পরীক্ষা-উড়ানের যাত্রীদের জন্য টার্মিনালের বাইরে এ দিন ট্যাক্সি ও বাসের বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। প্রি-পেড ট্যাক্সি ও প্রাইভেট গাড়ি ভাড়ার অস্থায়ী কাউন্টার বসানো হয়েছিল নতুন টার্মিনালের ভিতরে। তবে ঠিক মতো পথ চিনে নতুন টার্মিনালের সামনে পৌঁছতে অনেক যাত্রীর, গাড়িচালকের সমস্যা হয়েছে। ভাইচুংও ছিলেন তাঁদের মধ্যে। যদিও গাড়ি খোঁজার ফাঁকে তিনি বলে যান, “আশা করতে পারি, এই টার্মিনালের আকর্ষণে আরও বিমানসংস্থা কলকাতায় আসবে।”
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ মাসের শেষে একই ভাবে একটি আন্তর্জাতিক উড়ান কলকাতা বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনালের দোরগোড়ায় এসে নামবে। অগস্টে পরীক্ষামূলক ভাবে এখান থেকে যাত্রী নিয়ে উড়বে বহির্গামী উড়ান। তখন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দু’টি উড়ানের যাত্রীরা নতুন টার্মিনাল দিয়ে হেঁটে গিয়ে বিমানে উঠবেন। অধিকর্তা জানাচ্ছেন, “চেষ্টা করছি ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করে দিতে। হয়তো তখনও প্রাথমিক কিছু সমস্যা থাকবে। সে সবও তাড়াতাড়ি মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে আশা করছি।” |