পাঁচ দশক আগে পদকের একেবারে কাছে এসেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। সেই যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেন না তিনি। তাই তিনি এখনও স্বপ্ন দেখেন, তাঁর শেষ ইচ্ছাটা পূর্ণ হবে। তিনি মিলখা সিংহ দেখে যেতে চান, কোনও ভারতীয় অ্যাথলিট অলিম্পিক থেকে সোনা জিতছেন। “আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে যেন দেখতে পারি কোনও ভারতীয় ছেলে বা মেয়ে অলিম্পিক সোনা জিতছে অ্যাথলেটিক্স থেকে। ’৬০ সালে রোম অলিম্পিকে আমি পারিনি। এ বার যদি সেই কাজটা কেউ করতে পারে, তা হলে আমি শান্তি পাব,” বলছিলেন রোম অলিম্পিকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে চতুর্থ হওয়া মিলখা। এর পরেই একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছিলেন ৮২ বছর বয়সি উড়ন্ত শিখ: “দু’-তিন বছর বাদে আমি আর বেঁচে নাও থাকতে পারি। এই তো আমার বন্ধু দারা সিংহ ক’দিন আগেই মারা গেল। আর ক’বছর বেঁচে থাকব, সেটা তো ঈশ্বরের ইচ্ছা। তার আগে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের গলায় সোনার পদকটা দেখতে চাই।”
তবে মিলখা এও মেনে নিচ্ছেন, অ্যাথলেটিক্সে কোনও ভারতীয়র পক্ষে সোনা জেতা খুবই কঠিন কাজ। “আমার হৃদয় চাইছে কোনও ভারতীয় সোনা জিতুক, কিন্তু আমি এও জানি লন্ডন অলিম্পিক থেকে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের সোনা জেতাটা এক রকম অলৌকিক ঘটনাই হবে। তবে ডিসকাসে কৃষ্ণা পুনিয়ার উপর আমার কিছুটা আশা আছে। ও ব্রোঞ্জ জিতলেও জিততে পারে। দিল্লি কমনওয়েলথে মেয়েটা সোনা জিতেছিল।”
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় অ্যাথলিটদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স নিয়ে মিলখা বলেছেন, “আমাদের এখন সাইয়ে প্রচুর কোচ রয়েছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, বিদেশি কোচও আনা হচ্ছে, টাকা আছে তা সত্ত্বেও আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পারছি না। আমি এর জন্য সরকারকে দোষ দেব না। সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই দিচ্ছে। কিন্তু কাজটা তো করে দেখাতে হবে অ্যাথলিট এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।”
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে মিলখা বলছেন, “বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে নতুন প্রজন্মকে বলি, আরও পরিশ্রম করতে। লোকে এখনও কেন ধ্যানচাঁদের কথা বলে? কারণ হকি থেকে আর কেউ সেই পর্যায়ে উঠে আসেনি। অ্যাথলেটিক্সেও তো আমাদের অবস্থা ভাল নয়। স্বাধীনতার পরে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্সে আমাকে নিয়ে পাঁচ জন ভারতীয় ফাইনালে উঠেছে। কেউ পদক পায়নি। আমার ভাবতে লজ্জা করছে, ১৯৪৭-এর পরে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে আমরা কোনও পদক জিততে পারিনি, যদিও অ্যাথলিটদের সংখ্যাটা আমাদের কম নয়।” |