প্রতি বর্ষায় জল জমার ফলে এমনিতেই চরম দুর্ভোগ হয় হাওড়াবাসীর। বছর তিনেক ধরে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মেট্রোর কাজের জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান চত্বর জুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি। এ বছর কাজ অনেকটা এগিয়েছে। ফলে খোঁড়াখুঁড়িও বেড়েছে। এর জেরে বুধবার দুপুরের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাওড়া ময়দান চত্বর কার্যত নরকের চেহারা নেয়। জি টি রোড ও মহাত্মা গাঁধী রোডের পাশে সার দিয়ে থাকা বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে জল ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করে দিতে হয়। এই দুর্ভোগের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, মেট্রোর কাজের জন্যই এই হাল। একই অভিযোগ হাওড়া পুরসভার মেয়র মমতা জয়সোয়ালেরও। তিনি বলেন, “মেট্রোর কাজের জন্য ময়দান চত্বরের নিকাশি ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আগে যে রাস্তায় জল জমত না, সেখানেও জল জমেছে। বৃহস্পতিবার মেট্রোর দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলব।” |
এ দিনের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাওড়া শহর কার্যত বানভাসি হয়ে যায়। মধ্য হাওড়ার হাওড়া ময়দান থেকে কদমতলা এবং উত্তর হাওড়ার বালি থেকে পিলখানা সব এলাকাতেই কোথাও তিন ইঞ্চি, কোথাও বা চার ইঞ্চি জল জমে যায়। সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন হাওড়া ময়দান চত্বরের ব্যবসায়ীরা। বৃষ্টির জল তাঁদের দোকানে ঢুকে পড়ে। উত্তেজিত ব্যবসায়ীরা মেট্রো-কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুপুর আড়াইটে থেকে বঙ্কিম সেতুর সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। হাওড়া ময়দান ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে খোকন সাহা বলেন, “এর আগে মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। তখন তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, মেট্রোর কাজের জন্য ব্যবসায়ীদের কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, মেট্রো-কর্তৃপক্ষ বর্ষার আগে কোনও ব্যবস্থা নেননি।” প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ এসে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তুলে দেয় অবরোধকারীদের।
নিকাশির এই বেহাল দশা নিয়ে হাওড়ায় মেট্রোর ভারপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “ওই এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থার কাজ চলছে। এর মধ্যে এত বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।”
এ দিন বানভাসি শহরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নিজেই রাস্তায় নামেন মেয়র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন পুরসভার কমিশনার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার-সহ অন্যান্য পুর-কর্তারা। মেয়রের দাবি, “এ দিন বৃষ্টির পরে অনেক জায়গায় জল তাড়াতাড়ি নেমে গিয়েছে। তবে কয়েক জায়গায় জল রয়েছে। আসলে গঙ্গায় জোয়ার থাকায় জল দ্রুত নামেনি। ভাটা পড়লে সব জল নেমে যাবে।”
এ দিনের ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে হাওড়া স্টেশনের সাবওয়ে। যার জেরে দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। |