শহরের ব্যস্ততম রাস্তা চার্চ রোড খানাখন্দে ভরেছে। বর্ষার জলকাদায় ওই রাস্তায় পথচলাই দায়। টিকিয়াপাড়া থেকে এনটিএস মোড় বরাবর দেশবন্ধু রোডের পরিস্থিতিও বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ তো আছেই, নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে এই রাস্তা হয়েই দেশবিদেশের পর্যটকরা শহরে প্রবেশ করেন। রাস্তার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদেরও। শহরের প্রধান দু’টি রাস্তা হিলকার্ট রোড এবং সেবক রোডেও অনেক জায়গায় পিচের চাদর উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। চম্পাসারি মেন রোড, নিবেদিতা রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গর্তে ভরে ওঠায় বাইক, সাইকেল নিয়ে ওই পথে যেতে যে কোনও সময় বিপদের আশঙ্কা করেন বাসিন্দারা। কার্যত, শিলিগুড়ি শহর জুড়ে রাস্তাঘাটের বেহাল পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বেহাল থাকার কথা স্বীকার করেছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি বলেন, “পুরসভার আর্থিক সমস্যার কারণে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করতে কিছুটা সময় লেগেছে। বিগত বাম বোর্ড ঠিকাদারদের অনেক টাকা বকেয়া রেখে গিয়েছিল। সেই জন্যও সমস্যা রয়েছে। তবে কিছু কাজ হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বর্ষায় কাজ করতে সমস্যা আছে। পুজোর আগেই শহর জুড়ে রাস্তা সংস্কার হবে।” বিরোধী বাম কাউন্সিলর দিলীপ সিংহর অভিযোগ, ২ বছর আগে ওয়ার্ক অর্ডার করা হলেও তাঁর ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে সেবক রোড থেকে বিবেকানন্দনগর পর্যন্ত যোগাযোগের রাস্তা সংস্কারের কাজ আজও হয়নি। আরও কয়েকটি রাস্তার ওয়ার্ক অর্ডার হলেও কাজ শুরু হয়নি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শালিনী ডালমিয়া জানান, তাঁর ওয়ার্ডে ১২ টি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের কথা বলা হলেও কাজ হচ্ছে না। কখনও বলা হচ্ছে টেন্ডার হয়েছে। কখনও বলা হচ্ছে ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গিয়েছে। চার্চরোড, উদয়শঙ্কর সরণি-সহ ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারে গড়িমসি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কমল অগ্রবালও। শিলিগুড়ি পুরসভার ক্ষমতাসীন দলের কংগ্রেস, তৃণমূল কাউন্সিলরদের অনেকের ওয়ার্ডেই রাস্তার বেহাল পরিস্থিতি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বপন চন্দর অভিযোগ, তাঁর ওয়ার্ডে টিউমলপাড়া মেন রোড গত বছর পুজোর সময় সংস্কারের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার করা হয়েছিল। কাজ হয়নি। এলাকার হেমন্ত বসু কলোনির দুটি গলি রাস্তার সংস্কার কাজ ২০০৮ সাল থেকে পড়ে রয়েছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সীমা সাহা তাঁর ওয়ার্ডে বহু রাস্তার কাজ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে এমন সমস্ত রাস্তার কাজই হয়েছে। শালিনী দেবী তাঁর ওয়াডের্র্ শনিবার, রবিবার ছুটির দিনগুলিতে কাজ করতে বলছেন। ওই ভাবে রাস্তা মেরামত করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ৪২ নম্বর, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও কাজ পড়ে নেই। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাঁর এলাকায় নিকাশি নালার কাজ না করে রাস্তার কাজ করতে দিচ্ছেন না।” বিরোধী দল নেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “কৃষ্ণবাবু যা বলছেন তা ঠিক নয়। শহরের রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি নিয়ে বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। টেন্ডার, ওয়ার্ক অর্ডার করার পরেও কোনও ওয়ার্ডে ২ বছর কোনও এলাকায় ১ বছর ধরে কাজ হয়নি। পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে আমাদের কাউন্সিলররা বারবার তা বলছেন। পুর কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা এবং সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।” পূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, চম্পাসারি রোড, নিবেদিতা রোড মেরামত করতে পুরসভা সরাসরি কাজ শুরু করেছে। পুরনো মাটিগাড়া রোড় সংস্কারের জন্য টেন্ডার শীঘ্রই করা হবে। এমনকী বর্ষার মধ্যেও বিশেষ সামগ্রী দিয়ে খানাখন্দ মেরামতের ব্যবস্থা হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিলিগুড়ি জংশন, মাল্লাগুড়ি এলাকায় হিলকার্ট রোডের বেহাল দশা। সেবক রোডের অনেক অংশে গর্ত তৈরি হয়েছে। |