সিপিএমে বিদ্রোহ প্রণব-প্রশ্নে আরও বহিষ্কার,
ভাঙা হল জেএনইউ কমিটি
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘বিদ্রোহ’ ধামাচাপা দিতে কড়া পদক্ষেপ করলেন সিপিএম নেতৃত্ব।
প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করায় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআইয়ের শাখাটিই আজ ভেঙে দেওয়া হল। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র নেতাকেও এসএফআই থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, সংগঠন- বিরোধী কার্যকলাপ ও দলীয় নীতি অমান্য করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। জেএনইউ-এর নেতারা একে ‘স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন।
ছাত্রদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিলেও প্রকাশ কারাট-সীতারাম ইয়েচুরিরা দলের মধ্যে ক্ষোভ কতটা ধামাচাপা দিতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিপিএম সূত্রেই বলা হচ্ছে, জেএনইউ-এর ছাত্ররা শৃঙ্খলাভঙ্গ করে ভুল করে থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁরা যে সব যুক্তি দিচ্ছেন, দলের একটা বড় অংশ সেই মতই পোষণ করে। পলিটব্যুরোর যে বৈঠকে প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেখানেও অনেক সদস্য প্রণববাবুকে সমর্থনের বিরোধিতা করেছিলেন।
কারাটের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে পার্টির স্বার্থের কথা ভেবে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ফাটল ধরাতেই প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত। কিন্তু অন্যান্য রাজ্য, বিশেষ করে কেরল রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক সদস্যও প্রণববাবুকে সমর্থনের বিরুদ্ধে মত দেবেন। আর তা আঁচ করেই ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভোট মিটে যাওয়ার পরে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে আর কোনও সমস্যার আশঙ্কা থাকছে না। আর ভোটপর্ব মিটে গেলে বিরোধীরা এ ব্যাপারে উৎসাহ হারাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নয়, প্রণববাবুকে সমর্থনের সঙ্গে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়টিও অনেকখানি জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিকে ফের মনোনয়নের ইঙ্গিত দিয়ে গত কালই কারাটকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কারাট তাঁকে জানিয়েছেন, এমনিতে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তাঁদের অসুবিধা রয়েছে। তবে আনসারি যে হেতু গত বার বামেদেরই প্রার্থী ছিলেন, তাই তাঁকে সমর্থনে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সিপিএম সূত্রে বলা হচ্ছে, উপরাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থনে যে অসুবিধার কথা কারাট বলেছেন, তার কারণ প্রণববাবুকে সমর্থন করা ঘিরে দলে অসন্তোষ। দলের শ্রমিক সংগঠন সিটু-র নেতারাও প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্তে খুশি নন। কংগ্রেস বা ইউপিএ-সরকারের প্রতি কোনও নরম মনোভাব দেখাতে রাজি নন তাঁরা। কারণ, তা হলে তাঁদের নিজস্ব আন্দোলনে সমস্যা হবে। কিন্তু সিটু অনেক বেশি ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ বলেই সেখানে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ দেখা যায়নি।
যে ‘বিদ্রোহ’ শুরু হয়েছে কারাটের নিজস্ব দুর্গে। প্রথম তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা প্রসেনজিৎ বসু পদত্যাগ করেছেন। সেই ইস্তফা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে দল অবশ্য তাঁকে বহিষ্কার করে। এর পরে প্রতিবাদ জানান কারাট-ইয়েচুরির ‘আঁতুড়ঘর’ বলে পরিচিত জেএনইউ-এর ছাত্র নেতারা। সাধারণ সভা ডেকে প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রস্তাবও পাশ করানো হয়।
জেএনইউ-এর বিদ্রোহের ব্যাপারে গোড়া থেকেই কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। আজ এসএফআই-এর দিল্লি রাজ্য কমিটির বৈঠকে কমিটিরই সভাপতি রোশন কিশোর, দুই সহ-সভাপতি জিকো দাশগুপ্ত, পি কে আনন্দ এবং কমিটির সদস্য ভি লেনিন কুমারকে বহিষ্কার করা হয়। জেএনইউ-এর শাখাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এসএফআই নেতৃত্বের বক্তব্য, কোনও জাতীয় বিষয়ে কোনও শাখা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সেই নিয়ম না মানার জন্যই বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু জেএনইউ-র ছাত্র নেতাদের পাল্টা যুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে সমস্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বিতর্ক হয়। কাজেই রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে নির্দিষ্ট অবস্থান নেওয়া ছাড়া তাঁদের কোনও উপায় ছিল না।
সিপিএম সূত্রের খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদনের ভিত্তিতেই এসএফআই নেতৃত্বের তরফে বিক্ষুব্ধদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত কালই এ কে গোপালন ভবনে সীতারাম ইয়েচুরি এসএফআই নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানেই ঠিক হয়ে যায়, জেএনইউ-এর বিষয়ে কোনও সমঝোতা করা হবে না।
ছাত্র নেতাদের বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আজ রাতেই জেএনইউ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়। দিল্লি রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবার্ট রহমানও বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় পদত্যাগ করেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্র নেতাদের বক্তব্য, কেন প্রণববাবুকে সমর্থন, আজকের বৈঠকে তার কোনও রাজনৈতিক যুক্তি দেওয়া হয়নি। তার বদলে কেন্দ্রীয় নেতারা অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারীর মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি রাজ্য কমিটি। আমরা শুধু বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে ভোটাভুটির মাধ্যমে গণতন্ত্র মেনেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।” প্রণববাবুকে সমর্থনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে অন্যান্য রাজ্যের এসএফআই নেতাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন জেএনইউ-এর নেতারা। ঋতব্রতর যুক্তি, “এর থেকেই স্পষ্ট যে, বহিষ্কৃত নেতারা সংগঠনে ভাঙন ধরানোর মতো দলবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল। এখনও তারা সেই চেষ্টা করছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.