কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের একাংশের আনা অনাস্থায় শেষ পর্যন্ত পদচ্যুতই হলেন বাঁকুড়ার তৃণমূল পুরপ্রধান শম্পা দরিপা। সোমবার বাঁকুড়া পুরসভায় হওয়া আস্থা-ভোটে ১০-৮ ব্যবধানে পরাজিত হন শম্পাদেবী। এই ভোটাভুটিতে অবশ্য অংশ নেননি সিপিএমের তিন এবং সিপিআইয়ের এক কাউন্সিলর। ওই চার জন আস্থা-ভোটে গরহাজিরই থেকেছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র বলেন, “এটা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই আমরা ভোটাভুটি থেকে দূরেই থেকেছি।”
গত ২৩ জুন পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন উপপুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার-সহ তৃণমূলের ছয় এবং কংগ্রেসের চার কাউন্সিলর। দলের বহু চেষ্টার পরেও অনাস্থায় অনড় ছিলেন ওই তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। এ দিনও অনাস্থার পক্ষেই ভোট দেন ওই ১০ জন। ভোটের পরে অলকাদেবী বলেন, “এই জয় কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে জয় নয়। এটা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই। শম্পা দীর্ঘদিন ধরে পুরসভায় একনায়কতন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ফের গণতন্ত্র ফিরবে পুরসভায়।” পুরপ্রধানের কুর্সিতে বসার দু’বছর পরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শম্পাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “বাঁকুড়াবাসীর আশীর্বাদ আমার সঙ্গে আছে। আমি নিশ্চিত, ফিরে আসব।” |
তৃণমূল সূত্রের খবর, অনাস্থা প্রস্তাব আনা কাউন্সিলরদের একাধিকবার অনাস্থা তুলে নিতে বলা হয়েছিল দলের তরফে। কিন্তু কিছুতেই তাঁদের রাজি করানো যায়নি। বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “অনাস্থায় দলের সায় ছিল না দলের। যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল পদক্ষেপ করবে।”
ইতিমধ্যেই সেই পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। আস্থা-ভোটের পরে পরেই আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতির পদ থেকে অলকাদেবীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কথা জানিয়েছেন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন। তিনি বলেন, “শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে অলকা সেন মজুমদারকে সংগঠনের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরিকে ওই দায়িত্বে আনা হয়েছে।” স্বপনবাবু বলেন, “সোমবার বিকেলে রাজ্য নেতৃত্ব নতুন দায়িত্বের কথা জানিয়েছেন। আমি খুশি।” অলকাদেবীর দাবি, “আমার কাছে এমন কোনও খবর নেই।”
এই পরাজয় অবশ্য মানতে নারাজ শম্পাদেবীর পক্ষের কাউন্সিলরেরা। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শম্পাদেবী ও তাঁর পক্ষের ৭ কাউন্সিলার বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, এই নির্বাচনে গোপনীয়তা রাখা হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, “ব্যালট পেপারে কোনও নির্দিষ্ট কলম ব্যবহার না করে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা কাউন্সিলরেরা বিভিন্ন পুরসদস্যকে নানা রংয়ের কালির পেন ব্যবহার করতে বাধ্য করেছেন। যার ফলে এই ভোটের গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।” এ দিনের আস্থা-ভোট বাতিল করে পুনরায় আইনানুগ পদ্ধতিতে ভোট করার দাবিও তুলেছেন ওই কাউন্সিলরেরা। |
যদিও ব্যালটে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে একই রংয়ের কালি ব্যবহার করতে হবে, এমন কিছু পুর-আইনে উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার তপনকুমার পাল। তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট ভাবে কোনও পেন বা কালির ব্যবহারের কথা পুর-আইনে লেখা নেই।” এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ আস্থা-ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হয় পুরসভার কাউন্সিলরদের কক্ষে। এই ভোটে সভাপতিত্ব করেন বাঁকুড়া পুরসভার দীর্ঘদিনের কংগ্রেস কাউন্সিলর কার্তিক শীট। উপস্থিত ছিলেন তপনবাবু ও পুরসভার বড়বাবু সন্তোষ ভট্টাচার্য। আস্থা-ভোট উপলক্ষে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ মোতায়েন ছিল। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, শান্তিপূর্ণ ভাবেই আস্থা -ভোট হয়েছে।
ভোটের সময় যত গড়িয়েছে, উসাহী জনতার ভিড় তত বেড়েছে পুরভবনের সামনে। দুপুর ১টা নাগাদ খবর ছড়িয়ে পড়ে শম্পাদেবী ১০-৮ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। উল্লাস শুরু হয় তাঁর বিরোধী শিবিরে। পুরপ্রধানের অনুগামীরা হতাশায় বাড়ির দিকে রওনা হন। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরে শম্পাদেবী কাউন্সিলর কক্ষ থেকে নেমে নিজের গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকদের বলেন, “এখানেই শেষ নয়। ১৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলর নির্বাচনের লড়াইয়ে ফিরে আসার একটা সুযোগ আমার রয়েছে।” |