সম্পাদকীয় ১...
দাম কেন বাড়ে
পাইকারি বাজারে হানা দিয়া যদি বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হইত, তবে অর্থনীতির ইতিহাসে লিয়োনিদ ব্রেজনেভ-এর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হইত। সোভিয়েত ইউনিয়নও ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হইত না। যাহা সংশয়াতীত ভাবে প্রমাণিত, ভারতের নেতারা অবশ্য তাহা মানিতে নারাজ জওহরলাল নেহরু হইতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রত্যেকেই বিশ্বাস করিয়াছেন যে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের পবিত্র কর্তব্য। সেই চেষ্টায় তাঁহারা কসুর করেন নাই। এখন যেমন শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় বাজার সফর করিতেছেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখিবার জন্য কমিটি গঠন করিতেছেন। ইহার মধ্যে রাজনীতি বিলক্ষণ রহিয়াছে, কিন্তু অর্থনীতি নাই। মূল্যবৃদ্ধি কেন ঘটে, তাহার কারণটি অর্থনীতির পাঠ্যপুস্তকে রহিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গের সবজির বাজার অসংগঠিত, অতএব অকুশলী। মুখ্যমন্ত্রীর বাজার সফর এই অকুশলতা কমাইতে পারিবে না। তাহার জন্য পরিকাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু, এই যুক্তিতে রাজনীতির স্বার্থ রক্ষিত হয় না। যেহেতু সবার উপরে রাজনীতি সত্য, ফলে অর্থনীতি এই ত্যাগ স্বীকারে বাধ্য হইতেছে।
কৃষক হইতে ক্রেতার হাতে পৌঁছাইতে যে দূরত্ব অতিক্রম করিতে হয়, তাহার মধ্যে প্রায় সব সবজির দামই পাঁচশত শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এই টাকাটি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির পকেটে পৌঁছায়। শ্রেণিটি বৃহৎ নহে, অতি শক্তিশালী। পাইকারি বাজারে কখন সবজিবাহী ট্রাক পৌঁছাইবে, তাহা যেমন এই শ্রেণি স্থির করিয়া দেয়, তেমনই কোন দামে খুচরা বাজারে পণ্য বিক্রি হইবে, তাহা নির্ধারণ করাও এই শ্রেণির ‘অধিকারভুক্ত’। যেহেতু বাজারটি অসংগঠিত, ফলে সাময়িক ভাবে জোগানের কৃত্রিম অভাব তৈরি করা দুরূহ কাজ নহে। অন্য দিকে, সরকারের কৃষি দফতরের দক্ষ ভাবে কাজ করিবার প্রসিদ্ধি নাই। মাঠে ফসল নষ্ট হইলে কৃষকের কী করা উচিত, জমির উর্বরতা বাড়াইবার জন্য কোন ব্যবস্থা করা বিধেয়, তাহার কোনওটিই কৃষি দফতর জানাইয়া উঠিতে পারে না। কৃষকের পার্শ্বে থাকিবার কথাটি মেঠো বক্তৃতায় যত জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, কার্যক্ষেত্রে ছবিটি তাহার বিপ্রতীপ। কাঁচালঙ্কার দাম কেন কিলোগ্রামপ্রতি দুইশত টাকায় পৌঁছাইয়াছে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার হদিশ চাহিয়াছেন। গত বৎসর অধিক ফলনের দরুন দাম না পাওয়ায় কৃষকদের যে লোকসান হইয়াছিল, একে তাহার প্রতিক্রিয়ায় এই বৎসর চাষ কম হইয়াছে, উপরন্তু যেটুকু চাষ হইয়াছিল, বর্ষার খামখেয়ালিপনায় তাহারও সর্বনাশ হইয়াছে। তাহার সঙ্গে বাজারের অকুশলতা তো আছেই। মুখ্যমন্ত্রী বাজারে বাজারে হানা দিয়া এই সমস্যার সমাধান করিতে পারিবেন কি?
সমাধান অন্যত্র। কৃষিক্ষেত্রে সংগঠিত বিপণনই সমাধানের একটি বড় উপায়। তাহার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই বিনিয়োগের পাসপোর্টের রঙ বিচারের বিলাসিতা পশ্চিমবঙ্গের শাসকদের মানায় না। কৃষি বিপণন ক্ষেত্রটি সংগঠিত হইলে খেত হইতে বাজারে সবজি পৌঁছাইতে অনেক সময় লাগিবে, ফলে বর্তমানে মোট উৎপাদনের চল্লিশ শতাংশ যে অপচয় হয়, তাহা বহুলাংশে কমানো যাইবে। দ্বিতীয়ত, ক্ষেত্রটি সংগঠিত হইলে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণিটিকে বাজার হইতে নিরাপদ দূরত্ব রাখা সম্ভব হইবে। ফলে, বিভিন্ন অনৈতিক পদ্ধতির মাধ্যমে এই শ্রেণি যে বিপুল মুনাফা অর্জন করে, যাহার ফলে পণ্যের দাম প্রায় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পায়, তাহা রোধ করা যাইবে। তাহাতে কৃষক এবং ক্রেতা, উভয়েরই লাভ। কৃষককে ফসলের জন্য অধিকতর মূল্য দেওয়ার পরেও ক্রেতাকে বর্তমানের তুলনায় ঢের কম দামে সবজি বিক্রি করা যাইবে। মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি চুক্তি-চাষকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা বিবেচনা করিয়াছেন। সেই ব্যবস্থা করা গেলে কৃষকের অনিশ্চয়তা আরও এক দফা কমিবে। তখনও কৃষকের স্বার্থরক্ষার প্রয়োজন পড়িবে বইকী। সরকার সেই কাজটি করুক। সমবায় গড়িয়া তোলা হউক, প্রয়োজনে সরকারই কৃষকের হইয়া ওকালতি করুক। কিন্তু, সংগঠিত কৃষি বিপণনের পথেই হাঁটিতে হইবে। মুখ্যমন্ত্রী হাঁটিবেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.