সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন
পাতত টানাপড়েন শেষ। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের (জি টি এ) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। নির্বাচনের দিন ২৯ জুলাই, আগেই ঘোষিত। কিন্তু পার্বত্য দার্জিলিঙে মোর্চাকে বাদ দিয়া অনুষ্ঠিত যে কোনও নির্বাচনই প্রতিনিধিত্বের বৈধতা হারাইত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাই ব্যক্তিগত ভাবে মোর্চা নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অনুরোধ জানাইয়াছিলেন। একই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে অনুরোধ করেন। অবশেষে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকে বসিয়া ভোটে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। এই সিদ্ধান্ত স্বাগত। কেননা ইহার ফলে দীর্ঘ দিন ধরিয়া প্রতিনিধিত্বহীন পার্বত্য দার্জিলিঙের প্রশাসন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত হইবে।
মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করার আগাম সিদ্ধান্ত লইয়াছিলেন। তাঁহার বক্তব্য ছিল তিনি ক্ষমতার জন্য লালায়িত নহেন, তাই কোনও প্রশাসনিক পদও গ্রহণ করিবেন না, বাহির হইতে নির্বাচিত প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিবেন। কিন্তু মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য মনে করিয়াছেন, নির্বাচিত জি টি এ-র উপর গুরুঙ্গের কর্তৃত্ব থাকা জরুরি এবং তাহা বাহির হইতে কার্যকর করা অসম্ভব। এই অভিমত যুক্তিযুক্ত। গুরুঙ্গকে ভোটে যোগ দিয়া নির্বাচিত জি টি এ প্রশাসক হিসাবেই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে নেতৃত্ব দিতে হইবে। প্রথম দিকে নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রশ্নে দ্বিধা ও সঙ্কোচ থাকিলেও শেষাবধি গুরুঙ্গ নিজে প্রার্থী হইতে সম্মত হইয়াছেন। মোর্চা নেতৃত্বকে এ ভাবে জি টি এ-র নির্বাচনে তথা পার্বত্য দার্জিলিঙের স্থগিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করানোটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সাফল্য, তাহাতে সংশয় নাই। মনে রাখা দরকার, মোর্চা নেতৃত্বকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শামিল করিতে গিয়া মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু কোনও আপস করেন নাই, ৩৯৬টি গোর্খা-অধ্যুষিত মৌজা জি টি এ-র অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও তিনি শিরোধার্য করেন নাই। এ জন্য মোর্চা নেতৃত্বের ক্ষোভ আছে। সেই ক্ষোভ হইতেই তাঁহারা আন্দোলনের হুমকি দিয়াছিলেন, নির্বাচন বয়কটের হুমকিও। আর তাহাতেই পার্বত্য দার্জিলিঙে শান্তি ও স্থিতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হইয়া পড়িয়াছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সহিত বৈঠক করার পর বিমল গুরুঙ্গের মত সংশোধিত হইয়াছে। হয়তো তাঁহার ক্ষোভ প্রশমিত। হয়তো তিনি ইহাও বুঝিয়াছেন যে, অনমনীয় অবস্থান লইলে আখেরে তাঁহারই ক্ষতি হইবে।
এই নির্বাচনে পাহাড়ের অন্যান্য দলগুলি অংশগ্রহণ করিবে কি না, তাহা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজ্যের প্রধান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস মোর্চা নেতৃত্বের প্রতি শুভেচ্ছার বার্তা হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না-করার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। ইহার ফলে মোর্চা হইতে ভাঙিয়া তৃণমূলে যোগ দেওয়া গোর্খারা কিঞ্চিৎ ক্ষুব্ধ। কেননা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে মোর্চার মহড়া লওয়ার একটা বাসনা তাঁহাদের ছিলই। সুবাস ঘিসিং সম্ভবত তাঁহার জি এন এল এফ-এর ক্ষীয়মাণ শক্তির পুনরুদ্ধার পরিমাপ করিতে প্রার্থী দিবেন। কংগ্রেসও কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারে। কিন্তু সি পি আই এম মনস্থির করিতে পারে নাই। একই অবস্থা সি পি আর এম এবং গোর্খা লিগের। সত্য, এই সব সংগঠনের কাহারও প্রভাবই পার্বত্য দার্জিলিঙে প্রবল নয়। তথাপি ইহাদের সম্মিলিত জনসমর্থন জনমুক্তি মোর্চার প্রার্থীদের ক্ষেত্রবিশেষে বেগ দিতে পারে। তা ছাড়া, জয়-পরাজয় নির্বিশেষে সকলের যোগদান জি টি এ-র নির্বাচনকে স্বতন্ত্র বৈধতায় মণ্ডিত করিতে পারে। হয়তো সেই বৈধতা হইতে নির্বাচিত জি টি এ-কে বঞ্চিত করিতেই সি পি আই এম নিজের নাক কাটিয়া গুরুঙ্গ-মমতা বোঝাপড়ার যাত্রাভঙ্গের প্রস্তুতি লইতেছে। তবে শেষ বিচারে গণতন্ত্রের যাত্রাভঙ্গে সকলেরই লোকসান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.