কলকাতাকে লন্ডনের ধাঁচে সাজানোর লক্ষ্যে আরও নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা হাতে নিল পুরসভা।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পায়ে চলার জন্য এস্ক্যালেটর-যুক্ত নতুন নতুন ফুটব্রিজ আর সুসজ্জিত মিডিয়ান স্ট্রিপে এ বার সাজানো হচ্ছে মহানগরীকে। আর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ করবে কলকাতা পুরসভা। মঙ্গলবার পুরভবনে কলকাতা পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে পুর-কর্তৃপক্ষের বৈঠকে শহরকে সাজানোর ওই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী শহরের আটটি জায়গায় তৈরি করা হবে ফুট-ওভারব্রিজ। তাতে ওঠা-নামার জন্য থাকবে এস্ক্যালেটর বা চলমান সিঁড়ি। শহরে এখন যে সব ফুট-ওভারব্রিজ রয়েছে, সেখানে একমাত্র বিজন সেতু সংলগ্ন ব্রিজেই এস্ক্যালেটর রয়েছে। তাই ওই ফুট-ওভারব্রিজটিই সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ ব্যবহার করেন। সেই কারণেই পুরসভা নতুন আটটি ফুট-ওভারব্রিজের প্রতিটির ক্ষেত্রেই চলমান সিঁড়ি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। |
চলমান সিঁড়ি-সহ ফুট-ওভারব্রিজগুলি তৈরি করা হবে এসপ্ল্যানেড ইস্টে কে সি দাসের কাছে, ডোরিনা ক্রসিং, লালবাজার স্ট্রিট, মৌলালি, মহাত্মা গাঁধী রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে, কলেজ স্ট্রিট মোড়ে মহাত্মা গাঁধী রোডে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের মোড়ে এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং গণেশ অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে।
শহরের ওই মোড়গুলিতেই সব থেকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর। পায়ে চলার উড়ালপথ তৈরি হলে এক দিকে যেমন দুর্ঘটনা কমবে, অন্য দিকে যানবাহনের গতি বাড়বে এবং যানজট কমবে বলে মনে করছে পুরসভা।
সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে শহরের বেশ কিছু রাস্তার মাঝখানে রঙিন রেলিং-সহ ডিভাইডার দিয়ে মিডিয়ান স্ট্রিপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাস্তার মাঝখানের সরু অংশকে নানা ভাবে সাজানো হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেই কাজ হবে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সিআইটি রোড, শরৎ বসু রোডে হাজরা রোডের মোড় থেকে এজেসি বসু রোড মোড় পর্যন্ত, রাসবিহারী মোড় থেকে চেতলা ব্রিজ পর্যন্ত, সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউ এবং সুরাবর্দি রোডে।
এ ছাড়াও শহরের চারটি বুলেভার্ডের সৌন্দর্যায়ন করতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। এর জন্য মৌলালি থেকে ফিলিপ্স মোড় পর্যন্ত লালমোহন ভট্টাচার্য রোড ও কলকাতা পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে মন্মথ দত্ত রোডে বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি নেওয়া হবে। একই ভাবে সাজবে ঢাকুরিয়া ব্রিজ থেকে সুকান্ত সেতু পর্যন্ত গড়িয়াহাট রোডের একাংশ এবং সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের কিছুটা অংশও। একই সঙ্গে গঙ্গাতীরের আরও কিছুটা অংশ সাজিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এ দিন। এই পর্যায়ে বাজে কদমতলা থেকে মিলেনিয়াম পার্ক পর্যন্ত সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। |
পুরসভা সূত্রের খবর, এ সব কাজের পাশাপাশি রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন সরকারি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে নিয়মিত নজরদারি হবে বাসস্ট্যান্ডে রাখা বসার জায়গা, গার্ড রেলিং ইত্যাদির। শহরকে সুন্দর রাখতে নিয়মিত খেয়াল করে সে সব জিনিস সারাই ও রং করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে পুর-উদ্যোগে। কলকাতা পুরসভা শহরের কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে সাজিয়ে তুলেছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলির বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যেই জীর্ণ হয়ে গিয়েছে। তাই ওই সব সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে নয়া পরিকল্পনায়।
এ দিন পুরভবনের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা, মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার, পুর-কমিশনার অর্ণব রায় এবং পরিবহণ দফতরের পদস্থ আধিকারিকেরা। এ দিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরকে সাজিয়ে তোলার কাজ যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা হবে।” |