কলকাতার বাজারে সব্জির দাম আগুন হওয়ার পিছনে অন্যতম ‘খলনায়ক’ হয়ে দেখা দিয়েছে পড়শি ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টির আকাল।
গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে এ রাজ্য থেকে বৃষ্টি প্রায় উধাও। পর্যাপ্ত জল না-পেয়ে অধিকাংশ জায়গায় সব্জির ফলন মার খাচ্ছে। অথচ ফি-বছর এই সময়টাতেই রাঁচির ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং, ঢেঁড়স এবং কাঁচালঙ্কা যায় কলকাতার বাজারে। ঝাড়খণ্ড সব্জি উৎপাদন সমিতির কর্তারা বলছেন, এ রাজ্যে বর্ষা-নির্ভর চাষ এতটাই সঙ্কটে পড়েছে যে, এ বার আর কলকাতায় রাঁচির সব্জি পাঠানো যাচ্ছে না। ফল হাতেনাতেই পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য সব্জি তো বটেই, বিশেষ করে এই সেদিনও কাঁচালঙ্কার দাম আগুন ছিল কলকাতার বাজারে।
আগুন লেগেছে ঝাড়খণ্ডের সব্জি-বাজারেও। গত দু’সপ্তাহে এখানকার পাইকারি বাজারে সব সব্জির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ফড়েদের হাত ঘুরে আসায় খুচরো বাজারগুলিতে দাম বাড়ার পরিমাণ আরও বেশি। কাঁচা আনাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাছের দামও। ঝাড়খণ্ডের ‘ভেজিটেবল প্রোডাক্ট ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সহ-সভাপতি রামপ্রসাদ মেটা বলছিলেন, “রাজ্যের সব্জি চাষটাই মাঠে মারা যেতে বসেছে। গত ১৯ জুন সরকারি ভাবে বর্ষা আসার কথা ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু কোথায় বৃষ্টি?”
এক দিকে বৃষ্টি নেই। ফলে বর্ষা-নির্ভর চাষে সেচের জল মিলছে না। জলের অভাবে বীজতলা এবং চারাগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। রামপ্রসাদবাবু জানালেন, জলাভাবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সারের দাম। কোনও কোনও সারের দাম স্রেফ দ্বিগুণ হয়েছে। মাসখানেক আগে যে সারের ৫০ কেজির বস্তার দাম ছিল ৭০০ টাকা, এখন তারই দাম ১৪০০ টাকা।
রাঁচির আবহাওয়া বিভাগের কর্তারা জানাচ্ছেন, এমনিতেই এ বার বর্ষা ঝাড়খণ্ডে পৌঁছেছে দিন সাতেক দেরিতে। কিন্তু আসার পর দু’রাত না-কাটতেই মৌসুমি অক্ষরেখাকে নিয়ে বর্ষা চলে গিয়েছে হিমালয়ের তরাই অঞ্চলে। পটনার আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা আশিস সেন এই প্রসঙ্গে আজ বলেন, “স্বাভাবিক অবস্থায় পয়লা জুন থেকে দোসরা জুলাই পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডে ২০৭.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু এ বার ওই সময়ে মাত্র ১৩৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।” তবে একই সঙ্গে আশিসবাবু জানালেন, মৌসুমি অক্ষরেখাটি এখনও তরাই অঞ্চলে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার অভিমুখ কিছুটা বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের দিকে ঘুরেছে। আপাতত তাই শুধু অপেক্ষা।
রাজ্য কৃষি দফতর অবশ্য আগামী সপ্তাহ দুয়েক ভারী বৃষ্টি না-হলে চাষের ব্যাপক ক্ষতিরই আশঙ্কা করছে। কৃষি বিভাগ সূত্র বলছে, চলতি মাসের প্রথম পনেরো দিনে প্রচুর বৃষ্টির জল না-পেলে বীজতলা, চারাগাছ মাঠে মারা যাবে। এই বৃষ্টির ঘাটতি যদি অগস্ট-সেপ্টেম্বরের প্রবল বৃষ্টি অঙ্কের হিসেবে পূরণ করেও দেয়, তাতে চাষের ক্ষতি কিছুতেই ঠেকানো যাবে না। |