বুধবার কি হতে চলেছে বিজ্ঞানের ‘ডি-ডে’?
আধুনিক গবেষণায় সব চেয়ে দীর্ঘ, সব চেয়ে বড় এবং অবশ্যই সব চেয়ে ব্যয়বহুল প্রচেষ্টার ফলাফল কি ঘোষিত হচ্ছে ওই দিন?
সোজা কথায়, ঈশ্বর কণার অস্তিত্বের চূড়ান্ত সার্টিফিকেট কি মিলছে ৪ জুলাই?
প্রশ্নগুলো ঘিরে বিজ্ঞানের জগতে শোরগোল। ওয়েবসাইট ব্লগে ই-হট্টগোল।
সব কিছুর মূলে সার্নের একটি ঘোষণা। তারা জানাতে চায় লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার যন্ত্রে ঈশ্বর কণা সন্ধানের সর্বশেষ রিপোর্ট।
বুধবার জেনিভার স্থানীয় সময় সকাল ন’টায় শুরু হচ্ছে দু’ঘণ্টার বিশেষ সেমিনার। তার পর এগারোটায় সাংবাদিক সম্মেলন। আসলে, বুধবার থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন হাই-এনার্জি ফিজিক্স (আইচেপ)। কণা পদার্থবিজ্ঞানীদের বিশ্ব সম্মেলন। মেলবোর্ন থেকেও বিজ্ঞানীরা ইন্টারনেট মারফৎ শুধু সরাসরি দেখবেনই না জেনিভার সেমিনার, অংশও নেবেন তাতে। এ রকম একটা সেমিনার এবং তা শেষ হতেই সাংবাদিক সম্মেলন, এমন আয়োজন দেখে বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা তুঙ্গে। সকলেরই আশা, সার্ন ওই দিন একটা দারুণ কিছু ঘোষণা করতে চলেছে। হয়তো তারা সে দিন প্রমাণ করে দেবে ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব। যদি তা-ই হয়, তা হলে শেষ হবে বিজ্ঞানীদের প্রায় অর্ধশতাব্দীর প্রতীক্ষা।
ঈশ্বর কণা ওরফে হিগস-বোসন, যা না থাকলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে পদার্থবিজ্ঞানীদের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। যার মহিমা বিচার করে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী লিও লেডারম্যান কণাটিকে বলেছিলেন ‘গড পারটিক্ল’। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ১৯৬৪ সালে প্রথম ওই কণার অস্তিত্ব কল্পনা করেছিলেন বলে ওর নামের মধ্যে রয়েছে হিগস। আর, কণাটা যে বিশেষ জাতের, তার কথা প্রথম সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছিলেন। সে কারণে ওটা বোসন। হিগস বোসন বা ঈশ্বর কণার গুরুত্ব অসীম। ব্রহ্মাণ্ডের অধিকাংশ কণাকে ভারী করে তোলে ওই বোসন। হিগস-বোসন না থাকলে বিশ্বের সমস্ত কণা হত ভরহীন, হাল্কা। ফলে তারা সবাই ছুটোছুটি করে বেড়াত আলোর বেগে। সে ক্ষেত্রে অস্তিত্বসঙ্কটে পড়ে যেত পরমাণু, অণুু, গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ গোটা বিশ্ব সংসার।
১৯৬৪ সালে পিটার হিগস কল্পনা করার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কিন্তু শনাক্ত করা যায়নি ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব। তাই দামি, অথচ অধরা দু’য়ে মিলে বিজ্ঞানের জগতে রীতিমতো গ্ল্যামারাস এই কণা। সার্নের বিজ্ঞানীরা তাকে খুঁজছেন আলোর বেগে বিপরীত মুখে ধাবমান প্রোটন কণার সংঘর্ষে উদ্ভূত চূর্ণ-বিচূর্ণ কণার মধ্যে। তাকে খোঁজা হয়েছে আমেরিকার ফার্মিল্যাব গবেষণাগারের টেভাট্রন যন্ত্রেও। ফার্মিল্যাব জানিয়েছে, সোমবার তারাও ঘোষণা করবে ‘কিছু এক খবর’।
গত ১৩ ডিসেম্বরও সার্নের উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। ওই দিনও ঈশ্বর কণা সন্ধানের ফলাফল ঘোষণা করার কথা ছিল তাদের। সে দিন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, পরীক্ষায় হিগস-বোসন শনাক্ত করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। কতটা? ভুলের সম্ভাবনা হাজারে এক। কিন্তু এতে মোটেই খুশি নন তাঁরা। আরও নিশ্চিত হতে চান বিজ্ঞানীরা। ভুলের সম্ভাবনা ৩৫ লক্ষে এক হলে তবেই ঈশ্বর কণার অস্তিত্বে নিঃসন্দেহ হবেন।
ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত পরীক্ষা চলেছে। মিলেছে কি চূড়ান্ত প্রমাণ? সার্ন-এর ডিরেক্টর-জেনারেল রলফ হাওয়ার এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন চমৎকার। বলেছেন, ‘‘কাজটা যেন দূর থেকে ভিড়ের মধ্যে চেনা মুখ খোঁজা। কাছে না গেলে বোঝা যায় না, যাকে চেনা মনে হচ্ছে, সে সত্যিই বেস্ট ফ্রেন্ড, নাকি তার যমজ ভাই।’’
যাই বলুন সার্ন-এর প্রধান, পিটার হিগস কিন্তু নিঃসন্দেহ। ‘ফিজিক্স ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে ৮২ বছর বয়েসী এই অধ্যাপক বলেছেন, ‘‘৪ জুলাই ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব ঘোষণা হচ্ছেই।’’
|
জুনের শেষে বাড়তি সেকেন্ড
|
অন্য দিনের চেয়ে গত কাল একটু বেশিই সময় পেলেন বিশ্ববাসী। তবে তা এক সেকেন্ডের জন্য। ৩০ জুনের শেষ মিনিটটি ছিল ৬১ সেকেন্ডের। আন্তর্জাতিক পরমাণু সময়ের সঙ্গে সৌর সময়ের পার্থক্য দূর করতেই এই ‘লিপ সেকেন্ড’ যোগ করা হয়। পৃথিবী নিজের অক্ষে এক পাক ঘোরে ৮৬,৪০০ সেকেন্ডে। কিন্তু সূর্য ও চাঁদের টান, জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি কারণে এক পাক খেতে ২ মিলিসেকেন্ডের মতো বাড়তি সময় লেগে যায়। সেই সময়টাই কয়েক বছরে বেড়ে গেলে, ১ সেকেন্ড যোগ করে দেওয়ার চল হয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে। লিপ ইয়ারের ক্ষেত্রে যেমন প্রতি চার বছর অন্তর একটি দিন যোগ করা হয়, এই লিপ সেকেন্ডের ক্ষেত্রে অবশ্য তেমন সময়ের ব্যবধান নির্দিষ্ট করা নেই। এ পর্যন্ত ২৫ বার যোগ করা হয়েছে এই লিপ সেকেন্ড। শেষ বার যোগ হয়েছিল ২০০৯-এ। |