ধেয়ে আসছে নদী। এই বুঝি গোটা গ্রামটাই তলিয়ে যাবে। রাত ভর কানে শুধু মাটি ধসার শব্দ। চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে একটার পর একটা বাড়ি। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে নদীতে। তার পর থেকেই বিদ্যুৎহীন গোটা গ্রাম।
বৃহস্পতিবার রাতে ভাগীরথীর ভাঙন শুরু হয়েছে জঙ্গিপুর লাগোয়া শ্রীধরপুর গ্রামে। ১২টি বাড়ি রাতারাতি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। ধসেছে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি। বসে গিয়েছে শ’খানেক ফুট জমিও। এখনও নদীর উপর বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে প্রায় ১৮টি বাড়ি। |
শুক্রবার সকালে ভাঙন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গ্রামে যান রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লক অফিস ও সেচ দফতরের কর্তারা। যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই ভাঙন শুরু হয়েছে। ৭টি বসত বাড়ি, ৫টি দোকান-সহ মিটার পাঁচেক এলাকা নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। এখনও নদীর পাড়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। সেখান থেকে গ্রামবাসীদের সরে যেতে বলা হয়েছে। ভাঙন পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সেচ বিভাগের ভাঙন প্রতিরোধ দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
নদীর পাড়েই চায়ের দোকান ছিল মহম্মদ এসরাফিল শেখের। তিনি বলেন, “আমাদের গ্রামে আগে কখনও ভাঙন হয়নি। এখনও নদীর জল বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রাতে দোকান বন্ধ করে ফেরার সময়েই দেখ নদীর পাড়ের মাটি বসে যাচ্ছে। আতঙ্কে আমরা তখনি নদীর পাড় থেকে চলে আসি। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই চোখের সামনে বাড়ি-ঘর হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। আমার দোকানটাও নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্রামে এই পরিস্থিতি আগে কখনও হয়নি।”
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ সিংহরায় বলেন, “প্রায় ৭৫ বর্গমিটার এলাকায় ঘর-বাড়ি, গাছ পালা নদীর তলায় চলে গিয়েছে। ধনপতনগরে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন চলছে।”
মুর্শিদাবাদ জেলা সেচ দফতরের ভাঙন প্রতিরোধ শাখার সুপারইনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ বলেন, “শ্রীধরপুরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক। আমরা এলাকা ঘুরে এসেছি। শনিবার থেকেই ওখানে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারের খাঁচায় বালিবোঝাই বস্তা ঢুকিয়ে অস্থায়ী ভাবে কাজ করা হবে ওই গ্রামে।” তিনি আরও জানান, “শ্রীধরপুর থেকে ধনপতনগর পর্যন্ত ১৩৫০ মিটার এলাকায় পাথরের স্পার বাঁধিয়ে ভাঙন রোধের স্থায়ী কাজের জন্য ৫ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার কাজ শুরু হবে। টেন্ডারও ডাকা হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে নভেম্বর থেকে ওখানে কাজ শুরু করা হবে। শ্রীধরপুরকে বাঁচাতে আপাতত অস্থায়ী ভাবে কাজ শুরু করা হবে।” |